রামোজি রাওয়ের স্মৃতিকথায় শিল্প নির্দেশক নীতীশ রায়। নিজস্ব চিত্র।
শিল্প নির্দেশক হিসেবে নীতীশ রায় তত দিনে আঞ্চলিক স্তর ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছেন। তিনটি জাতীয় পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। বাংলা, হিন্দি বলয় মিলিয়ে একগুচ্ছ সম্মান। সাল ১৯৯৩। প্রথম মুখোমুখি রামোজি রাওয়ের। ফিল্ম সিটি বানানোর জন্য নীতীশকে ডেকেছিলেন তিনি। প্রথম সাক্ষাতেই চ্যালেঞ্জ! ‘‘ফিল্ম সিটিকে এক নম্বর বানাতে পারবে? তা হলে এখানে তোমার কাজ পাকা!’’, বলেছিলেন নীতীশকে। একটু আমতা-আমতা করে শিল্প নির্দেশকের জবাব, ‘‘ও ভাবে কথা দেওয়া যায়! খুবই চেষ্টা করব।’’ শুনেই ফিল্ম সিটির সদ্যপ্রয়াত কর্ণধারের কপট ধমক, মনে এত দ্বিধা থাকলে নীতীশ কাজ করবেন কী করে! সঙ্গে সঙ্গে নীতীশ তাঁকে কথা দিতেই কাজে বহাল। শিল্প নির্দেশক কথা রেখেছিলেন। রামোজির স্বপ্ন বৃথা যায়নি।
শনিবার ৮৭ বছর বয়সে চিরবিদায় নিলেন রামোজি রাও। নীতীশ এ দিন স্মৃতিভারে কাতর। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই তিনি তার থেকে কিছু কথা ভাগ করে নিলেন। বললেন, ‘‘এত কাজপাগল লোক খুব কম দেখেছি। ভোর চারটেয় উঠতেন। সম্পাদকীয় লিখবেন বলে। ওঁর কাছে তথ্য আসত। সে সব নিজে পড়ে লিখতেন। তার পর আমায় দিতেন। আরও ঘষামাজা করার জন্য। ভোর ছ’টায় নিয়ম মেনে হাঁটতে বেরোতেন। রোজ এক কাপ দুধ আর একটা কলা তাঁর সকালের জলখাবার। ঘড়ির কাঁটা ধরে অফিসে আসতেন। সারা দিন কাজ আর কাজ।’’ নীতীশ আরও একটি জিনিস খেয়াল করেছিলেন, কারও মুখের কথায় সন্তুষ্ট হতেন না রামোজি। সব সময় নিজে পরখ করে নিতেন। শিল্প নির্দেশককেও এই পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। সদ্য কাজে বহাল হয়েছেন। ফিল্ম সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় চা-খাবার খাওয়ার জায়গায় ‘রট আয়রন’-এর বড় ছাতার মতো একটি জিনিস রয়েছে। কারিগরি ভাষায় যার পোশাকি নাম গ্যাজ়িবো। হঠাৎ তাঁকে ডেকে এক দিন সংস্থার কর্ণধারের নির্দেশ, ‘‘ওটাকে ফাইবারের বানিয়ে দিতে পারো? যদি পারো, তা হলে আজীবন তুমি আমার সঙ্গে।’’
নীতীশ মুখে কিছু না বলে চুপচাপ নির্দেশ পালন করেছিলেন। সে দিন থেকে তিনি আর রামোজি অভিন্নহৃদয় বন্ধু! স্মৃতির পাতা উল্টোতে উল্টোতে তাঁর আরও দাবি, ‘‘খুব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। নিজের ছাঁচে অন্যদের ঢেলে নিতে জানতেন। আমি তাঁর বাঙালি বন্ধু! হলে কী হবে, কোনও দিন বাঙালি খাবার খাননি। উল্টে যত রকমের দক্ষিণী খাবার হয়, সব ক’টা আমায় ধরিয়েছিলেন। একটা সময়ের পর দেখলাম, আমিও দক্ষিণী সম্বর, রসম, ইডলি, সব্জি খেতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’’ রামোজির আরও এক বাতিক ছিল। তিনি একটি রঙিন ডায়েরি ব্যবহার করতেন। এক একটি পাতা এক এক রঙের। এক এক কর্মীর জন্য একটি পাতা, গুরুত্ব বুঝে। যেমন, নীতীশের জন্য লাল পাতা। অন্য এক জনের জন্য হয়তো নীল পাতা। আদ্যন্ত সাদামাঠা মানুষটি মনে মনে যে এত রঙিন ছিলেন, তার হদিস পেয়ে অবাক হয়েছিলেন তাঁর বিদেশি অতিথিরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy