মেয়ের সঙ্গে নীনা গুপ্তা।
‘একা মা’ একুশের গর্ব। একা হাতে সন্তানকে তিল তিল করে বড় করে তোলা? পরম তৃপ্তির। যাঁরা ‘একা মা’, তাঁদের এই স্ট্যাটাস নিয়ে কোনও রাখঢাক গুড়গুড় নেই। কিন্তু আটের দশকে? ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের রক্ষণশীল দেশকে এই অঘটন (তখনকার দিনে তাই-ই) কাঁপিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। লাবডুব বাড়িয়ে দেওয়ার মতো এই কাজ সেই সময়ে করে দেখিয়েছেন নীনা গুপ্তা। সাগরপার থেকে আসা ভিনদেশি বিবাহিত ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে প্রেম, লিভ ইন। এবং তাঁর সন্তানের মা হওয়া! নিজের পদবি দিয়ে তাকে বড় করে তোলা... সে যুগে চাট্টিখানি কথা নয়।
নীনার এই সাহস সে যুগে নিন্দিত, সমালোচিত। এ যুগে বন্দিত। দিন ছ’য়েক আগে মায়ের জন্মদিনে ভিভ-নীনার মেয়ে মাসাবা সেই অসম সাহসের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সোশ্যাল। কতটা চোখের জলে ভিজে আর বুকের ভেতর নীরব রক্তক্ষরণে ডুবতে ডুবতে মেয়েকে এত বড় করেছেন বাইরের বিশ্ব তা কতটা জানে? আর জানেন নীনা, তাঁর বাবা।
কী ভাবে শুরু হয়েছিল নীনার এই জীবন? অতি সাম্প্রতিক এক ভিডিয়ো বলছে, ভিভ তাঁকে প্রথম প্রপোজ করেছিলেন। অনেকটা এ ভাবে, ‘‘বউয়ের সঙ্গে একদম বনিবনা নেই। মানাতে পারছি না আর। বেশি দিন এক ছাদের নীচে থাকবও না... তুমি যদি...!’’ এটুকুতেই টলে গিয়েছিলেন নীনার মতো শক্ত মনের মেয়ে।
আস্তে আস্তে ভিনদেশিকে বিশ্বাস করে ফেললে নীনা। ভালবাসলেন। এবং তাঁকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে দেখতে এক দিন জিজ্ঞেসই করে ফেললেন, ‘‘আলাদা হবে কবে?’’ সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত উত্তর, ‘‘হবে... হবে। সন্তান আছে না! তাদের ফেলে এখনই কিছু ভাবা...।’’
মাসবাকে বড় করতে গিয়ে অনেক বাধার সামনে পড়তে হয়েছে নীনাকে। ছবি: নীনা গুপ্তর ইনস্টাগ্রাম থেকে
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে এ ভাবে লড়াই বাধল রূপাঞ্জনা-সায়নীর!
অতএব লুকিয়েচুরিয়ে প্রেম, ছুটির ফাঁদে দু’টিতে জুটিতে। বিয়ে নাই-ই হল, মধুচন্দ্রিমা হতে দোষ কী? এর পরে? সমানে বিয়ের জন্য বায়না। বদলে পুরুষালি নির্লিপ্ততা, প্রত্যাখ্যান। যুক্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট একসঙ্গে। সম্পত্তিও রয়েছে। সে সব না সামলে এখন বিয়ে সম্ভব নয়। শেষে তিতিবিরক্ত গর্ভিনী সরে গেলেন একসময়। পুরুষটিও ফিরে গেলেন নিজের ঘরে। তবে একেবারে সদয় হননি ভিভ তা নয়। মাসাবার জন্মের পর একটা সময় পর্যন্ত তাঁকে দেখভালের অর্থ দিয়েছেন। এখানেই শেষ বাবার কর্তব্য!
আরও পড়ুন: মনে হয়েছিল ভগবানের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি, সচিনকে টুইট যুবরাজের
এর পর থেকেই শুরু অভিনেত্রীর একার লড়াই। তাঁর জবানিতে: ‘‘পার্লারে যাওয়ার সময় পেতাম না। আড্ডা, সিনেমা দেখা বন্ধ। সারা ক্ষণ মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত। সে সময়ে অনেক পুরুষ বলেছিলেন, ‘আমায় বিয়ে কর। মেয়ে পিতৃপরিচয় পাবে। আমি দূর দূর করেছিলাম তাঁদের। রোজগার করি। আরও রোজগারের সামর্থ্য রাখি, একা নিজের মেয়েকে মানুষ করতে পারব না! সে দিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম, বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়া কত বড় অভিশাপ এক জন মেয়ের জীবনে। পরকীয়ার কী বিষম জ্বালা!’’
ভিভিয়ার রিচার্ডের সঙ্গে নীনা গুপ্ত। রয়েছেন মেয়ে মাসাবাও। ছবি: নীনা গুপ্তর ইনস্টাগ্রাম থেকে
এর কিছু দিন পরেই নীনার বাবা চলে আসেন মা-মরা মেয়ের কাছে। বুক দিয়ে আগলাতে থাকেন মেয়ে আর নাতনিকে। বাবা চলে যাওয়ার পরে অবশ্য নীনা বিয়ে করেন বিবেক মেহরাকে। সম্প্রতি, মাসাবার জীবনেও উঠেছে ঝড়। ঘর ভাঙছে তাঁর। বিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছেন বান্দ্রার পারিবারিক আদালতে। পরিচালক স্বামী মধু মান্টেনাকে ছেড়ে চলে এসেছেন মায়ের কাছে।
মেয়ের এই পরিণতি মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছে নীনার। হাহাকার করে উঠে বলছেন, ‘‘মেয়েটা আমার মতো একা হয়ে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy