Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nandikar

স্বাতীলেখার অনুবাদ করা নাটক বহু বছর পর ফিরছে মঞ্চে, নির্দেশনায় সপ্তর্ষি

রেজিনাল্ড রোজ রচিত পঞ্চাশের দশকের নাটক ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ অবলম্বনে এই নাটক। যা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।

‘এক থেকে বারো’-র মহলার এক দৃশ্যে

‘এক থেকে বারো’-র মহলার এক দৃশ্যে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২২ ১০:৫২
Share: Save:

দলের অভিনেতারাই থিয়েটার করেন। বাইরে থেকে লোক আনা হয় না। নান্দীকারের প্রযোজনার এটিই পরম্পরা। তবু বছরভর হলভর্তি দর্শক। তারকাদর্শনের মোহে নয়, অভিনয়ের গুণে। সেই আত্মিক জোরেই বড় বড় তারকাদের নিয়োগ না করে নান্দীকার মেতে ওঠে নতুনের আবিষ্কারে। এ বছরও নতুন মুখের সারি। তাঁদের নিয়েই মঞ্চস্থ হতে চলেছে প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের অনূদিত নাটক ‘এক থেকে বারো’।

২০১২ সাল। নতুন মুখ হয়ে নান্দীকারের কর্মশালায় এসেছিলেন সপ্তর্ষি মৌলিক। আর এখন, তিনিই নির্দেশক। সোহিনী সেনগুপ্তের স্বামী। রুদ্রপ্রসাদ-স্বাতীলেখার জামাই। মঞ্চে প্রাণ ঢেলে নিরীক্ষা চালাচ্ছেন সপ্তর্ষি। যেমন চালান তাঁর বয়োজ্যেষ্ঠ স্ত্রী তথা নান্দীকারের মুখ সোহিনীও। রুদ্রপ্রসাদের প্রচ্ছন্ন সায় আছে এতে। দলের সদস্যরা খুশি। তবে লড়াইটাও হাড্ডাহাড্ডি। প্রত্যেক অভিনেতাপিছু প্রস্তুত আছেন বিকল্প আর এক জন। যদি কেউ চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হন, সেই জায়গা পূরণ করতে এগিয়ে আসবেন দ্বিতীয় জন। তা ছাড়াও, যদি দুর্ঘটনা ঘটে, যদি হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, নাটক তো বন্ধ থাকতে পারে না! তার জন্যই এই ব্যবস্থা, জানান সোহিনী। বললেন, “আমারও বিকল্প রয়েছে। হঠাৎ না-ও তো থাকতে পারি। কিন্তু শো মাস্ট গো অন! তাই না?”

প্রস্তুতি তদারকি করছেন সোহিনী

প্রস্তুতি তদারকি করছেন সোহিনী

এ দিকে, চরিত্রে ঢুকে গেলেও বার বার সপ্তর্ষিকে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। আগের দৃশ্যে আলো ঠিকঠাক হল? সবার অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর, উচ্চারণ সব স্পষ্ট? মঞ্চে দাঁড়ানো ১২ জনের এক জন হয়ে তো বোঝার উপায় নেই। এ বড় কঠিন কাজ! তাই দর্শকের আসন থেকে পরিস্থিতি জরিপ করছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ‘এক থেকে বারো’-র মহলায় এসেছেন তিনি। কমরেড তথা স্বামী, সপ্তর্ষিকে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত করছে সোহিনীর উজ্জ্বল উপস্থিতি।

শনিবার আনন্দবাজার অনলাইন পৌঁছে গিয়েছিল ড্রেস রিহার্সালে, সেই দক্ষযজ্ঞের মাঝেই। মঞ্চে তখন আদালত বসেছে। সাদাকালো চেক কাটা সাবেকি সেট। ডান দিকে বড় দেওয়াল ঘড়ি জানান দিচ্ছে সন্ধে পার হয়ে যাচ্ছে। “আমি নির্দোষ! আমি নির্দোষ!” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছে অপরাধী। গল্পটা মাত্র এক রাতের। সন্ধেয় শুরু হয়ে ভোরবেলা শেষ।একটি খুনের মামলা। ১২ জন জুরি। প্রশ্ন হল, অভিযুক্ত খুন করেছেন, না করেননি? সে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এক জুরি বাকি ১১ জনের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। মতামতের অনুপাতে সমাজটা যেন দাঁড়িপাল্লায় ওঠানামা করতে থাকে। রেজিনাল্ড রোজ রচিত পঞ্চাশের দশকের ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ অবলম্বনে এই নাটক। যা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। আশির দশকের পরে নান্দীকারের প্রযোজনায় নাটকটি মঞ্চস্থও হয়েছিল বার কয়েক। তার পর ২০২২ সাল। নতুন করে ধুলো ঝেড়ে সপ্তর্ষিরাই বের করে এনেছেন সেই চিত্রনাট্য। আগামী ২৫ অগস্ট, সন্ধ্যা ৬.৩০টায় অ্যাকাডেমি মঞ্চে অভিনীত হবে ‘এক থেকে বারো’।

জুরিদের মাঝে নিজেও এক জুরি, নির্দেশক সপ্তর্ষি

জুরিদের মাঝে নিজেও এক জুরি, নির্দেশক সপ্তর্ষি

সোহিনী বললেন, “মা থাকলে সত্যিই খুশি হতেন। তবে মা নেই বলে তো নাটক থেমে থাকবে না। প্রতিনিয়ত সৃজন, তাকে ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বেঁচে থাকা প্রবহমান। আমার অবর্তমানেও চলবে।”

শুক্রবার রাত ভোর হয়েছে টেলিভিশন সিরিয়ালের কাজে। পরের দিন সকাল ৮টায় কলটাইম। বাড়ি এসে ৬টা থেকে ৭টা এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিয়েছিলেন সপ্তর্ষি। তার পর আবার সারা দিন কাজ সামলে দুপুর থেকে ‘এক থেকে বারো’-র মহলায়। জানালেন, তাঁর ক্লান্তি আসছে না। অদ্ভুত আনন্দ এতেই। নান্দীকারই এখন সপ্তর্ষির আনন্দ-উপত্যকা। মন ভাল থাকার কারণ। সৃজনশীল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চ। বললেন, “স্বাতীলেখাদির মূল নাটকে জুরিদের মধ্যে মহিলা চরিত্র ছিল না। এখনকার সময়ে সে রকম দৃশ্য লিঙ্গবৈষম্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু আমি যদি ১২ জনের মধ্যে তিন জন জুরিকে মহিলা করে দিই তাহলে নাটকের মূল লজিকে কোনও বদল ঘটছে না। সমতা বিধান হচ্ছে। এখনকার সময়ে সমাজে সব ক্ষেত্রেই নারীরা রয়েছেন। জুরিদের মধ্যেই বা থাকবেন না কেন! এতে সংলাপ বলার সময় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ আলাদা হচ্ছে। এক জন মহিলার প্রতি পুরুষের আচরণে যে সূক্ষ্ম বদল তাতে নাটকের ভাব বদলাচ্ছে। তবে তিন জনই। তার বেশি নয়। কারণ কর্মক্ষেত্রে বা যে কোনও জায়গায় এখনও নারী-পুরুষের এই অনুপাতই দেখা যায়।”

শেষ মুহূর্তের ঘষা-মাজা

শেষ মুহূর্তের ঘষা-মাজা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy