সদ্য ৫৭-এ এসে ‘লুক’ বদলেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী।
সদ্য ৫৭-এ এসে ‘লুক’ বদলেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। গোঁফহীন চাপদাড়িতে আরও যেন তীক্ষ্ণ তিনি। এ ভাবেই কি আফগানিস্তান, মৌলবাদ নিয়ে নীরবে সরব শিল্পী? ১ সেপ্টেম্বর খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন...
প্রশ্ন: ভূপেন হাজারিকার পরে নচিকেতা চক্রবর্তী। জীবদ্দশায় হাওড়ায় তাঁর নামে প্রেক্ষাগৃহ দেখতে পাবেন। বাঙালি গর্ব করছে...
নচিকেতা: (হেসে ফেলে) কী বলি! ভাল তো লাগছেই। প্রথম শুনে একটু লজ্জাও পেয়েছি। হাওড়ার আমতায় একটি বেসরকারি ফার্মাকোলজি কলেজে ৮০০ আসন বিশিষ্ট নচিকেতা মঞ্চ তৈরি হবে, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন এমনটাই ঘোষণা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুনেছি, আমার ছবি আর বিভিন্ন গানের পংক্তি দিয়ে সাজবে প্রেক্ষাগৃহের অন্দরমহল। আরও ভাল লাগবে যদি আমার গানের অনুষ্ঠান দিয়ে মঞ্চের উদ্বোধন হয়।
প্রশ্ন: জন্মদিন উপলক্ষে আসানসোলের একটি বৃদ্ধাশ্রমে নিজের গান নিয়ে উপস্থিত থাকছেন?
নচিকেতা: আমি কোথাও থাকছি না। শুধু আসানসোলে নয়, জন্মদিন উপলক্ষে আমার ফ্যান ক্লাব, আমার অনুরাগীরা নানা জায়গায় নানা অনুষ্ঠান করছেন। উদযাপনের ভিড়ে আমি নেই।
প্রশ্ন: চারিদিকে এত আয়োজন... আপনার ‘বকলেসহীন জীবন’ এটাই চেয়েছিল?
নচিকেতা: এই চাওয়া, এই আশা না থাকলে ১১ বছর ধরে এত যুদ্ধ করতাম! লড়াইটা যে ঠিকঠাক হচ্ছে এটাই তার প্রমাণ।
প্রশ্ন: ফেসবুকের ডিপি বলছে, ১১ বছরের লড়াইয়ের ছাপ পড়েছে নচিকেতার চোখেমুখে। আগের তরতাজা ভাব গিয়ে চাপদাড়িতে গাল ঢেকেছে...
নচিকেতা: আমার ফেসবুক আমি সামলাই না। আমার বাড়ির লোকজন ও সব দেখেন। তাঁরা কী ছবি দিয়েছেন তাঁরাই জানেন। আমি এটুকু বলতে পারি, দাড়ি আমার আগেও ছিল এখনও আছে।
প্রশ্ন: আপনি দিনটিকে কী ভাবে উদযাপন করবেন?
নচিকেতা: বাড়িতে বসে আছি। সবার থেকে, সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে। টিভি দেখছি। সবাইকে বাড়িতে আসতেও বারণ করে দিয়েছি। নিজের মতো করে একটা দিন কাটাব। সুযোগ পেলেই আমার ক্যাবলা মুঠোফোন বন্ধ রাখছি। খাদ্যরসিক নই। ফলে, আমার জন্য বিশেষ রান্নাবান্নারও ঝামেলা নেই। আলু পোস্ত পেলেই হবে। এক জন পাবলো নেরুদার একটি বই উপহার দিয়েছেন। কবিতাগুলো আজ পড়ব।
প্রশ্ন: নতুন কোনও গান জন্ম নেবে?
নচিকেতা: আমার জন্মদিনে আমার গানও জন্ম নেবে! ও ভাবে নচিকেতা গান তৈরি করতে পারে না। সবাই ভাবে আমি গানের জন্ম দিই। আসলে, গান আমার কাছে ধরা দেয়। হারমোনিয়াম নিয়ে বসি। সময় হলে গান ঠিক আসে। দিনক্ষণ দেখে নচিকেতার গানের জন্ম হয় না।
প্রশ্ন: এগিয়ে যেতে যেতে ১ সেপ্টেম্বরে কখনও পিছন ফিরে দেখেছেন?
নচিকেতা: (থামিয়ে দিয়ে) আমি সারাক্ষণই পিছন ফিরে হাঁটি। অতীত আঁকড়ে বাঁচি। আমার ভবিষ্যত বলে কিছু নেই।
প্রশ্ন: এক বার হলেও তো আগামীর দিকে চোখ যায়। দেখে সন্তুষ্ট হন?
নচিকেতা: সন্তুষ্টির কোনও প্রশ্নই নেই। আমার মতো মানুষেরা কখনও সন্তুষ্ট হয় না। আমি সন্তুষ্ট হলে জীবনটাই নিরামিষ হয়ে যাবে! আমরা যত যন্ত্রণায় দগ্ধাব, কষ্ট পাব অন্য মানুষেরা তত ভাল থাকবেন। এই যন্ত্রণা এক জন শিল্পীর যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা ফুরোলে শিল্পীর মৃত্যু ঘটবে। আমার গান ফুরিয়ে যাবে। শ্রোতারা কষ্ট পাবেন।
প্রশ্ন: আপনার কোনও দিন ভাল থাকতে ইচ্ছে করে না?
নচিকেতা: ভাল থাকা ভীষণ আপেক্ষিক ব্যাপার। মানুষের মানসিকতার উপর নির্ভর করে। আমি যাকে ভাল থাকা বলি, বাকিদের চোখে সেটাই হয়তো যন্ত্রণাময় জীবন। এ টুকু বলতে পারি, আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই। এটাই আমার কাছে ভাল থাকা। সত্যিই কতখানি ভাল থাকলাম, সেটা মৃত্যুর পর বুঝতে পারব। বুঝতে পারব, জীবন ভাল ছিল না খারাপ। এখনও তো বেঁচে আছি, দৌড়োচ্ছি সমান তালে(হাসি)।
প্রশ্ন: এ তো গেল জীবনকথা। ‘স্বাধীন বামপন্থী’ নচিকেতার বর্তমান রাজনৈতিক উপলব্ধি কী?
নচিকেতা: আজ মায়ের একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে। মা বলতেন, শাঁখা-সিঁদুর নিয়ে যেতে পারলে বাঁচি! আমারও এখন যেন সেই দশা। (একটু থেমে) মানুষ কোনও দিন সোনার চামচ মুখে নিয়ে হাঁটবে, এই ধরনের ইউটোপিয়ান কথাবার্তায় একটুও বিশ্বাসী নই। ভাল-মন্দ যা হচ্ছে দেখে যাচ্ছি। এখনও বেঁচে আছি, টিকে আছি... যথেষ্ট।
প্রশ্ন: আর গানের ভবিষ্যত? এখনও হয় স্বর্ণ যুগের নয়তো আপনার, কবীর সুমনের গান রিয়্যালিটি শো-এর প্রতিযোগীরা গাইছেন...
নচিকেতা: সে তো মিডিয়া গানের দুনিয়া নষ্ট করে দিয়েছে বলে। নতুন গান নিয়ে ক’লাইন লেখা হয়। কোন এফএম চ্যানেল নতুন গান বাজায়? বলার বেলায় সবাই অনেক কিছু বলে দেন।
প্রশ্ন: নচিকেতাও তো আরেক জন শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপহার দিলেন না! খামতি কোথায়?
নচিকেতা: (গলায় চাপা ঝাঁঝ) কেন! সুদেষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায় তো গাইছেন। যথেষ্ট ভাল গান। আর খামতির প্রশ্ন কি সংবাদমাধ্যমের করা সাজে? নতুন শিল্পীদের কথা যেখানে বলা হয় না। তাঁদের তুলে ধরা নেই। সিডির যুগ শেষ। কিনে গান শোনার যুগও শেষ। এখন সবাই চুরি করে গান শোনে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খামতির প্রশ্ন তোলা মিডিয়াকে অন্তত মানায় না।
প্রশ্ন: এত ঝাঁঝ নিয়ে আপনিই ‘নীলাঞ্জনা’ গেয়েছিলেন! ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকে এখনও অনবরত বাজে...
নচিকেতা: ওই ‘নীলাঞ্জনা’ আমার বাবার। আমার ‘নীলাঞ্জনা’কে চিনতে গেলে ‘নীলাঞ্জনা ৩’ শুনতে হবে। আমার যে গানগুলো প্রেমের গান বলে চিহ্নিত আদতে সে গুলো আমার বিদ্রোহ। সত্যি কথা বলব? আমার নেকুপুষু প্রেম পোষায় না। প্রেম আমার কাছে প্রতিবাদের হাতিয়ার। অন্যদের কাছে সেটাই নিরাপত্তার মোড়ক। কেন হবে না! ‘প্রেম’ শব্দটা উচ্চারণ করে অনেক কিছু সহজেই ভুলিয়ে দেওয়া যায়। আমার গান বুঝতে এখনও শ্রোতাদের আরও কয়েক প্রজন্ম পেরোতে হবে।
প্রশ্ন: বেশ, আপনি তালিবানদের দখলে থাকা আফগানিস্তান নিয়ে বলুন...
নচিকেতা: আমি বলার কে! আগে কেন্দ্র বলুক। (হাল্কা হাসি) প্রধানমন্ত্রী এখনও ঘোষণা করেননি তালিবান শাসনে আফগানবাসীরা ভাল নেই। উনি বললে তখন ভাবব।
প্রশ্ন: রাগী যুবক কী নরম হয়েছেন? বিশিষ্ট জনেরা তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে সরব, আপনি নিরাপত্তা খুঁজছেন...
নচিকেতা: কেন শুধু শুধু খোঁচাচ্ছেন? দিনকাল যা পড়েছে, আজ যিনি যে দলের, কাল তিনিই হয়তো গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ঝুলিয়ে পদ্ম হয়ে ফুটবেন। এঁরা আবার তালিবান নিয়ে কথা বলতে আসেন! তালিবানের জন্মদাতা কোন দেশ? আমেরিকা। ভারত কার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে? আমেরিকার সঙ্গে। ভারতের সঙ্গে চিন, রাশিয়ার বন্ধু্ত্ব আছে? নেই! এ দিকে চিন, পাকিস্তান আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ও দিকে ভারতের সঙ্গে তালিবানদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। কে, কোন পথ বাছবে? আমি মৌলবাদ নিয়ে প্রচুর বলেছি। আর নয়। এ বার প্রধানমন্ত্রী আগে মুখ খুলবেন। অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। আমাকে আমার মতো করে থাকতে দিন, প্লিজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy