Mukesh Tiwari is a Verasatile Actor of Bollywood dgtl
Bollywood
দারোয়ানের কাছে দেনা করে মুম্বইয়ে পা, ধার করা টাকায় সুট বানানো মুকেশ ছিলেন অর্কেস্ট্রা দলেও
চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে আটকে গেলেন। জানতেন না ‘ইম্প্রোভাইজ’ শব্দের অর্থ। অপমানিত ও আহত মুকেশ সগরের ট্রেন ধরলেন। কিন্তু বাড়ি গেলেন না। সোজা লাইব্রেরি গিয়ে পড়াশোনা করলেন নাটক নিয়ে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৭:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
বড় পর্দায় প্রথম বার তাঁকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন দর্শক। কিন্তু পরে যখন তাঁর আসল চেহারা দর্শকদের সামনে এল, সবাই তো বিস্মিত। এ তো সুদর্শন অভিনেতা! অভিনীত চরিত্রগুলির সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না মুকেশ তিওয়ারির চেহারা বা ভাবমূর্তির।
০২২৩
মুকেশ তিওয়ারি আদতে মধ্যপ্রদেশের সগরের বাসিন্দা। পড়াশোনায় কোনওদিনই বিশেষ মন ছিল না। একটা সময়ের পর বুঝলেন, পড়াশোনা তাঁর জন্য নয়। তার উপর ভোপালে এক দিন নাটক দেখলেন। ঠিক করলেন, এ বার থেকে অভিনয়ই করবেন।
০৩২৩
বাড়িতে নিজের ইচ্ছের কথা জানালেন তিনি। কিন্তু সবাই তাঁকে ভুল বুঝলেন। পরিবারের মনে হল, মুকেশ লেখাপড়া থেকে পালাতে চাইছেন। কারণ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই।
০৪২৩
এর পর এক অর্কেস্ট্রা দলে যোগ দিলেন মুকেশ। তিনি দলের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শো করে বেড়াতেন। কিন্তু বাড়ির লোক অত কথা জানতেন না। এক দিন মুকেশ দেখলেন, তাঁর শো-এর দর্শকাসনে বসে আছেন তাঁরই পরিবারের সদস্যরা।
০৫২৩
এর পর মুকেশ ভেবেছিলেন তাঁকে হয়তো তীব্র উপহাসের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু এ বার তাঁর মা তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। সমর্থন করলেন ছেলের স্বপ্নপূরণের ইচ্ছেকে। মায়ের কথাতেই দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হওয়ার আবেদন করলেন মুকেশ।
০৬২৩
কিন্তু চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে আটকে গেলেন। জানতেন না ‘ইম্প্রোভাইজ’ শব্দের অর্থ। অপমানিত ও আহত মুকেশ সগরের ট্রেন ধরলেন। কিন্তু বাড়ি গেলেন না। সোজা লাইব্রেরি গিয়ে পড়াশোনা করলেন নাটক নিয়ে।
০৭২৩
এর পর এক বছর ধরে তিনি নিজেই নাটক নিয়ে পড়াশোনা করলেন। পরের বছর আবার আবেদন করলেন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়। এ বার তিনি ইন্টারভিউ পর্বে তাক লাগিয়ে দিলেন।
০৮২৩
ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় মুকেশ খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সে সময় তাঁর জন্য দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ত। আশুতোষ রানা, কুমুদ মিশ্র, যশপাল রানা তাঁর ব্যাচমেট ছিলেন। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ছিলেন তাঁর থেকে জুনিয়র।
০৯২৩
ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় মুকেশের সঙ্গে আলাপ হয় ভায়োলেট নাজির। সেখান থেকে প্রেম। আজ তাঁরা দম্পতি।
১০২৩
ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় থাকতে খাকতেই নাসিরুদ্দিন শাহের কাছ থেকে জরুরি তলব। পরের ফ্লাইট ধরেই পৌঁছতে হবে মুম্বই। শেষে দারোয়ানের কাছ থেকে টাকা ধার করে মুম্বইয়ের উড়ানের টিকিট কাটলেন মুকেশ।
১১২৩
নাসিরুদ্দিন শাহ তাঁকে সুপারিশ করেন ‘চায়না গেট’ ছবির জন্য। স্ক্রিন টেস্টের পরে মুকেশকে মনোনীত করলেন পরিচালক রাজকুমার সন্তোষী। মুকেশ ওই ছবিতে ‘জাগিরা’-র চরিত্রে অভিনয় করেন।
১২২৩
এই চরিত্রের উপযোগী হতে মুকেশ অনেক পরিশ্রম করেন। তিনি নিজের ওজন বাড়িয়ে ১০৪ কেজি করেন। টানা এক মাস স্নান বন্ধ রেখেছিলেন নিজের লুক ‘নোংরা’ দেখানোর জন্য। পারফিউম স্প্রে করেই শট দিতেন তিনি।
১৩২৩
আড়াই বছর ধরে শুটিং হয়েছিল ‘চায়না গেট’-এর। মুক্তির পরে বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি ‘চায়না গেট’। তবে মুকেশ তিওয়ারি এই ছবির সুবাদে খুব জনপ্রিয় হন।
১৪২৩
গব্বর সিংহের মতো জাগিরার সংলাপও খুব জনপ্রিয় হয়। সে বছর পুরস্কারের মঞ্চে জাগিরা মনোনীত হয়েছিলেন সেরা খলনায়ক বিভাগে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন পুরস্কার তাঁর কাছেই আসবে। তাই টাকা ধার করে নিজের জন্য সুট বানান।
১৫২৩
পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানে মুকেশের সব আশায় জল ঢেলে পুরস্কার চলে যায় তাঁর অতীতের সহপাঠী আশুতোষ রানার কাছে। ‘দুশমন’ ছবির জন্য। এর পর পুরস্কারের মোহ থেকে তিনি ধীরে ধীরে মুক্ত হন। নিজেকে বোঝান, পুরস্কারই স্বীকৃতির শেষ কথা নয়।
১৬২৩
‘চায়না গেট’-এ তাঁর কাজ প্রশংসিত হলেও এর পর এক বছর মুকেশের কাছে কোনও কাজ আসেনি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁকে বোঝান, জাগিরার ইমেজ থেকে বেরিয়ে নিজের লুক প্রকাশ করতে হবে।
১৭২৩
এর পর মুকেশ অন্তত ৩০-৩৫ জন পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত আঠেরো জন তাঁকে সুযোগ দেন। কিন্তু কোনও ছবি সে ভাবে তাঁর কেরিয়ারকে মজবুত করতে পারছিল না।
১৮২৩
ফলে ভাল রোলের জন্য স্ট্রাগল জারি ছিল। এ দিকে বলিউডে ধীরে ধীরে খলনায়কের ধরন পাল্টাচ্ছিল। অনেক সময়ে নায়করাই খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। ফলে মুকেশ সে ভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
১৯২৩
এই সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ান প্রকাশ ঝা। ‘গঙ্গাজল’ ছবিতে বাচ্চা যাদবের ভূমিকায় মুকেশের সুপারহিট পারফরম্যান্স নজর কাড়ে দর্শকদের। এই ছবি থেকেই জানা যায় মুকেশ তিওয়ারির চেহারা কোনও নায়কের থেকে কম আকর্ষণীয় নয়!
২০২৩
‘গঙ্গাজল’ ছবি মুকেশকে নতুন করে পরিচিতি দেয় ইন্ডাস্ট্রিতে। পাশাপাশি তাঁর বন্ধুসংখ্যাও বাড়ে। প্রকাশ ঝা থেকে অজয় দেবগণ চলে আসেন তাঁর পরিচিতদের বৃত্তে। অজয় দেবগণের সূত্রে মুকেশকে ‘জমিন’ ছবিতে সুযোগ দেন রোহিত শেট্টি।
২১২৩
এর পর রোহিত শেট্টির ‘গোলমাল’ ছবিতে মুকেশ তিওয়ারি অভিনয় করেন ভাসুলি-র চরিত্রে। এ বার খলনায়ক, সিরিয়াস ধরনের চরিত্রের পাশাপাশি মুকেশ তিওয়ারিকে দেখা গেল কৌতুক চরিত্রে।
২২২৩
ক্রমে গোলমাল সিরিজের অন্যতম অভিনেতা হয়ে ওঠেন মুকেশ। পাশাপাশি তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে যোগ হয় ‘অপহরণ’, ‘হাল্লা বোল’, ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘সানডে’-এর মতো নাম। অজয় দেবগণ এবং রোহিত শেট্টিকে নিজের মেন্টর মনে করেন মুকেশ।
২৩২৩
তবে নিজের প্রতিভার তুলনায় মুকেশ এখন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। তিনি নিজে মনে করেন, এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কারণ এখন যোগ্যতার কথা না ভেবে সবাই অভিনেতা হতে চান। ফলে প্রকৃত প্রতিভাবানদের কাছে সুযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।