আসন্ন বসন্তে এ ছবি দেখে ভাল লাগে।
যুদ্ধের ছবি হয়েছে অনেক। এমনকি হয়ে চলেছেও। তা হলে কেন ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ দেখবেন?
কারণ, পরিচালক আদিত্য ধরের এ ছবি যুদ্ধের সাথে আরও নতুন কিছুর গল্প। যেমন, নয়া প্রযুক্তির কথা। সেই সঙ্গে, আজকের সেনার জীবনের আখ্যান। বদলে যাওয়া মনস্তত্ত্ব। তথা দেশের চালচিত্র।
রনি স্ক্রিউওলা নামটির সঙ্গে পরিচয় রয়েছে আমাদের। নতুন ধারার হিন্দি ছবি তার প্রযোজনা থেকে কম মেলেনি। তা ‘বরফি’, ‘রং দে বসন্তি’, ‘সাত খুন মাফ’ বা ‘কামিনে’। ‘উরি’- তাই চেনা পথে হাঁটবে না, এ তো জানা কথাই।
২০১৬ -র উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। পাকিস্তানের অধীনে থাকা কাশ্মীরের অংশে ভারতীয় জওয়ানদের যুদ্ধ জয়। ‘ওয়ার ফিল্ম’র ঘরনার এ ছবির শুরু শেষও যুদ্ধের ভেতর হয়। দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত জওয়ান ও মন্ত্রীদের কূটনীতির বাইরে এ ছবির আরও কিছু শেডস আছে। ড্রোন দিয়ে শত্রু শিবির খুঁজে বের করা ও হামলা চালানো রয়েছে সেখানে। তেমনই রয়েছে ভিকি কৌশল অভিনীত কেন্দ্রীয় সেনা চরিত্রটির মায়ের মনস্তাত্বিক টানাপোড়েন। এই মোটিফগুলি এ ছবিকে তথাকথিত যুদ্ধের ছবির থেকে আরও একটু এগিয়ে দেয়। দেয় অন্য মাত্রা।
আরও পড়ুন, ‘সবাই দেখা হলে বলেন, খুব ভাল অভিনয় কর, কিন্তু কেউ ডাকেন না’
উপন্যাসের মতো বেশ কয়েকটি পর্বে ভাগ করা রয়েছে এ ছবি। অনেকগুলো টুকরো টুকরো গল্পের সমাহার। কখনো তা কেন্দ্রীয় সেনার মা ও ঘরের গল্প। কখনও তা তার সেনা বন্ধুর মারা যাওয়া ও তার প্রতিশোধ। কখনও বা, রাইসিনা হিলসের অন্দরমহল। কখনও বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অধ্যায়। জিগ’শ পাজ্লের মত করে গল্প বলার ভেতর দিয়ে জমজমাট লাগে আখ্যান। দেশাত্মবোধ দেখতে একটুও মেকি লাগে না। বরং সত্যিই মনে হয়। তাই ক্রমান্বয় যুদ্ধ ও গোলাগুলি দিব্যি মানিয়ে যায়। বোর লাগে না।
এ ছবি বিনোদন আর ইতিহাসের মাঝপথ দিয়ে হাঁটে।
পরেশ রাওয়াল, ইয়ামি গৌতম, ভিকি কৌশলের অভিনয় দাগ কাটে। ছবির সম্পাদনাও টানটান। তবে ‘বর্ডার’, ‘লক্ষ্য’ প্রমুখ একাধিক ছবি আমরা হিন্দিতে দেখেছি যুদ্ধের। যুদ্ধকে রোমান্টিসাইজ করা বা পুরোনো ইতিহাসকে স্মরণ করা তো বলিউডে কম হয়নি। তাই আরও একটা যুদ্ধের ছবি কেন দেখব তাতে যদি সাম্প্রতিকতা না থাকে?
তাই প্রশ্ন জাগে, বর্তমান কাশ্মীর যখন সমস্যায় ডুবে আছে, সাধারণ মানুষ যখন বিপর্যস্ত প্রবলভাবে, তখন নেহাত যুদ্ধের নস্ট্যালজিয়ার বদলে কি আরও সাম্প্রতিক হতে পারত না এ ছবি? কারণ ভারতীয় সেনা-র জয়গান গাওয়া তো হয়েছে আগেও। এখানেই কোথাও ‘কিন্তু’ থেকে গেল।
আরও পড়ুন, অনুরাগকে স্বামী হিসেবে পেলেন ঋতাভরী, সৌজন্যে ‘ফুল ফর লভ’
তবু এ ছবির স্বকীয়তা এখানেই যে, এ ছবি বিনোদন আর ইতিহাসের মাঝপথ দিয়ে হাঁটে। বাহুল্য না থাকায় কখনও মনে হয় না, অতিরিক্ত হাসি-কান্না বা পাকিস্তান কত খারাপ ও আমরা কত ভাল-এমন কিছু বলতে চাইছে এ ছবি। সাম্প্রদায়িকতা আজ যখন ডাল-ভাতের মতোই রোজকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ইতিহাসকে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া এ ছবির কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই দেখা হয়তো খানিক দূর থেকে দেখা। তাই হিংসা থাকলেও তা আখ্যানের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি না। এ ছবির প্রভোকেশন বা প্রোপাগান্ডা কোনওটাই নেই। আছে গল্প। আর তা, মানবিকতার পথেই।
ছবির শেষে তাই যখন জওয়ানরা দেশাত্মবোধের উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন, তখন তা প্রাদেশিক লাগে না। স্বাভাবিক লাগে। মনে হয়, এ যেন ‘জয় হোক মানুষের, নব জীবিতের’ বলছে। বলছে, ইতিহাস লেখে সত্য নায়করাই। আসন্ন বসন্তে তাই এ ছবি দেখে ভাল লাগে। চেতনায় রোদ আসে..
(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy