আসলে আমাদের সবার মধ্যে, এক ছোট্ট ‘সিম্বা’ লুকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে উঁকি দেয়। যে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়। আকাশের দিকে চেয়ে, মাথা উঁচু করে, পাহাড়ের চূড়া থেকে দিতে চায় হুঙ্কার। পরিচালক বোধহয়, সেইটেই দারুণ করে দেখিয়েছেন।
কিছু ছবি থাকে, যা আমরা সিনেমা হলেই আধখাওয়া পপকর্নের সঙ্গেই ফেলে আসি। আর কিছু ছবি আমাদের কাঁধে চেপে বাড়ি ফেরে। দ্য লায়ন কিং দ্বিতীয় প্রকারের ছবি।
মুফাশা জঙ্গলের রাজা। সত্যিকারের রাজা কাকে বলে তা মুফাশাই তার আদরের ছেলে, তার উত্তরসূরি, ছোট্ট সিম্বাকে বলেন, “সত্যিকারের রাজা কখনও ভাবে না সে কী কী পেতে পারে, বা ছিনিয়ে নিতে পারে, দখল করতে পারে। সত্যিকারের রাজা ভাবে, সে কী কী দিতে পারে।”
আরও পড়ুন, আমার সিম্বা যেন থাকে দুধেভাতে
মুফাশার ভাই স্কার এখানে খলনায়ক। রাজা না হতে পারার জ্বালায় সে নানান ফন্দি করে, শয়তান হায়েনার দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, সিম্বাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে শুধু মুফাশার হত্যাই করে না, সে ছোট্ট একরত্তি সিম্বাকে বলে, তার বাবার মৃত্যুর কারণ সিম্বাই। স্কার ছোট্ট সিম্বাকে এলাকা ছেড়ে পালাবার পরামর্শ দিয়ে, তার পেছনে হায়েনার দল লেলিয়ে দিয়ে, হায়েনাদের পান্ডাকে বলে, সিম্বাকে একেবারে শেষ করে দিতে।
‘দ্য লায়ন কিং’ ছবির দৃশ্য।
কিন্তু ভাগ্যের অন্য কোনও প্ল্যান ছিল। সিম্বা হায়েনাদের তাড়া খেয়ে, পাহাড়ের উঁচু কোল থেকে পড়েও, কোনও রকমে প্রাণে বাঁচে। অলস হায়েনারা ভাবে সিম্বা মরে গেছে। তারা চলে গেলে মনের দুঃখে সিম্বা দূরে মরুভূমিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেখানে তাকে শকুনের দলের হাতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায় ‘পুম্বা’(শুয়োর) আর ‘টিম্বা’ (মিরক্যাট)। তারা ছোট্ট সিম্বাকে দত্তক নিয়ে, তাকে নিয়ে যায় এক নতুন জগতে, যেখানে সিম্বার কেউ নেই। তবু সিম্বা একা নয়।
কী হয় তার পর? সিন্বা কি সত্যি রাজা হতে পারবে? নিতে পারবে বাবার হত্যার প্রতিশোধ? সে কাহিনি অত্যন্ত নিপুণ ভাবে বোনা হলেও ছবির শেষের দিকে এসে মনে হয়, দৈর্ঘ্য কম করতে হয়তো অনেক প্রয়োজনীয় দৃশ্য পরে ছবি থেকে নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। যেমন, যে সিম্বা এত দিন কোনও লড়াই করেনি, পুরোপুরি ভেজিটেরিয়ান হয়ে গিয়েছিল, সে কী ভাবে দুম করে সরাসরি কাকা স্কারের সঙ্গে মিনিট দশেক লড়াই করে তাকে হারিয়ে দিল? যে সিম্বাকে সবাই জানতো মৃত, সেই হারানো সিম্বাকে ফিরে পেয়ে সিম্বার মা সরাবির প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট কম।
সিম্বার ছোটবেলার সাথী, নালার সঙ্গে প্রেমের দৃশ্যগুলি চমৎকার। হিন্দি ও ইংরেজি, দুই ভার্সানই প্রচুর মজাদার ডায়লগে ভরপুর। হিন্দিতে জ্যাজুর গলায় আসরানি আবারও বুঝিয়ে দিলেন, পুরনো চালের প্রবাদটা আজও সত্যি। প্রধান ভিলেন স্কারের গলায় আশিস বিদ্যার্থী তুলনাহীন।
‘দ্য লায়ন কিং’ ছবির দৃশ্য।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে যার কণ্ঠস্বর সারা থিয়েটার হলে গমগম করে বাজছে, যার জন্য সবাই হিন্দি ভার্সানটি দেখতে টিকিট কাটবেন, তিনি অবশ্যই শাহরুখ খান। তিনিও যে সত্যিকারের ‘কিং’ তা বেশ ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সিম্বার গলা, আরইয়ান খানের। বাবা-ছেলের গলায় এত মিল, যে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, কিছু ডায়ালগ বোধহয় শাহরুখ বলছেন। সেই নব্বুই দশকের শাহরুখ খান।
তবে, একদম খুদে সিম্বার যিনি গলা দিয়েছেন, তার সঙ্গে বোধহয় কারওরই তুলনা চলে না। অসাধারণ ভয়েজ মড্যুলেশন। ছবিটিতে শুরু থেকে শেষ যেহেতু শাহরুখ খানের কণ্ঠস্বর রয়েছে তখন শাহরুখ ফ্যানেদের নিরাশ হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন, রহস্য সমাধানে আসছেন নতুন গোয়েন্দা ‘শান্তিলাল’, দেখুন ট্রেলার
এলটন জন-এর সঙ্গীত আর হ্যান্স জিমারের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছবিটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। তবে, থ্রিডি-র এফেক্ট কম। তাতে কী? যখন আরইয়ান খান বলবে, “ম্যাচ হুঁ সিম্বা... মুফাশা কা বেটা...,” তখন সত্যিই মনে হবে, “মেজাজটাই যে আসল রাজা...।”
এক কথায়, ‘দ্য লায়ন কিং’ নির্ভেজাল ভাল ছবি। যে ছবি দেখে মা-বাবার হাত ধরে আসা খুদেটি জানবে, মোটাদের মোটা বলতে নেই। কারও চেহারা নিয়ে হাসতে নেই। হাসলে, পুম্বা গুঁতিয়ে দেবে। টিম্বা-পুম্বা শেখাবে, ‘হাকুনা মাটাটা’..., টেনশন হলে শুধু বলুন, ‘হাকুনা মাটাটা’... মানে ‘নো ওরিজ...অল ইজ ওয়েল।’ মুফাশার কাছ থেকে বাচ্চারা সবাই জানবে ‘সার্কল ইফ লাইফ’-এর কথা।
তাই, সপরিবার দেখার মতো ছবি ‘দ্য লায়ন কিং’। একটা ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’ আছে, ছবিতে। পজিটিভ স্পিরিট আছে। ওই যে বললাম, মেজাজটাই আসল রাজা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy