‘স্যর’ ছবির দৃশ্য।
ছবি: স্যর
অভিনয়: তিলোত্তমা সোম, বিবেক গোম্বার প্রমুখ
পরিচালনা: রোহেনা গেরা
ভালবাসার মাঝে শ্রেণি বিভাজন কী ভাবে আসে? শুধু ভালবাসা কি যথেষ্ট হতে পারে না দু’জনকে একে-অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসতে ? এমনই কিছু প্রশ্ন তুলে দিল নেটফ্লিক্সে সদ্য প্রকাশ পাওয়া ছবি ‘স্যর’। তারই সঙ্গে আরও একটু আলোচনার সুযোগ উস্কে দেওয়া হল। ২১ শতকের ভারতেও কি সম্পর্ক নির্ধারিত হয় সেই পুরনো হিসেবের সামাজিক শ্রেণির ভিত্তিতেই? না কি বদলেছে মন, বদল এসেছে মতেও? এমন অনেক প্রশ্ন ঘিরেই গল্প এগোল রত্না (তিলোত্তমা সোম) আর অশ্বিনের (বিবেক গোম্বার) জীবনের।
১৯ বছর বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়া, ছোট্ট একটি গ্রামের মেয়ে রত্না কোনও ভাবে পৌঁছে গিয়েছে মুম্বই শহরে। উচ্চবিত্ত এক পরিবারে পরিচারিকার কাজ পেয়েছেন তিনি। তবে বাড়ির পরিচারিকা হয়ে যত্ন ও সম্মান পাওয়া এক কথা, এবং বাড়ির মালিকের প্রতি ভাললাগা জন্মানো এবং তাঁর ভালবাসা পাওয়া আর এক। জটিলতা তাতে অনেক বেশি। এমন জট কোন পথে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে জীবনকে, দেখাল ‘স্যর’। তারই সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিল এই ছবি।
তিলোত্তমা ও বিবেকের সহজ ভঙ্গির অভিনয়ে ধরা পড়ল কথা না বলে কত বেশি কথা বলা যায়। পরিচালক রোহেনা গেরা তা যত্ন সহকারে করে দেখালেন এই ছবিতে। দু’জন মানুষ এক জায়গায়, দু’রকম পরিস্থিতিতে বসেও একে অপরের মন বুঝতে পারেন। তার জন্য কথা নয়, ভালবাসাই যথেষ্ট, ছিমছাম ক্যামেরার কাজে দেখিয়ে দিলেন পরিচালক।
সম্পর্ক কী? তা কি শব্দে ধরা থাকে? না কি কাজে? রত্না আর অশ্বিনের কথা সে ভাবেই এল এ ছবিতে। হাজার কথাতেও যে ভরসা আসে না, তা আসে হয়তো ছোট্ট একটা কাজের মাধ্যমে। যেমন অশ্বিন রত্নার প্রেমে পড়েছেন যেনেও সেই পরিচারিকা ভেসে যেতে রাজি হননি। শুধু দু’জনেই থাকতেন তাঁরা সেই ফ্ল্যাটে, তাই সম্মান বজায় রাখতে কাজটি ছে়ড়ে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন রত্না। হাজার স্বপ্ন, শহরে থাকার ইচ্ছে, আত্মনির্ভর না থাকতে পারার ভয়, সবই তাঁর কাছে তুচ্ছ হয় যেন। তিনি মানেন সম্পর্ক সমানে-সমানে না হলে তাতে মর্যাদায় ঘাটতি হতে পারে। তবে বলেন না। পরিচালক রত্নার ঘর ছাড়ার দৃশ্যের মাধ্যমে আবার বুঝিয়ে দেন, কথার থেকেও কাজেই বোঝানো যায় নিজের ভাবনা।
কাজের উত্তরে কাজেরই গুরুত্ব বাড়ে। পরিচারিকার কাজ ছেড়ে যাওয়া রত্না ডাক পান ফ্যাশন ডিজাইনারের দফতরে। সেই ডিজাইনার অশ্বিনের বন্ধু। ফলে শেষমেশ তাঁর বুঝতে অসুবিধে হয় না, অশ্বিনও যে সমকক্ষেই দেখতে চান তাঁকে।
পরিশীলিত অভিনয়ে মোড়া, হাল্কা আবহসঙ্গীতের ব্যবহারে এই গল্পে বারবার এসেছে শ্রেণি সচেতনতা নিয়ে সূক্ষ্ম মন্তব্য। রত্না ও অশ্বিনের মধ্যে প্রথম চুম্বনের ঘোর কাটায় একটি ফোনের ডাক। অশ্বিনের মায়ের বাড়ির পার্টিতে মাছের ঝাল রাঁধতে হবে তাঁকে। ক্ষণিকের মধুময় সময় শেষ হয় যেন বাস্তবের হাহাকারে। রত্নাকে যে মনে রাখতেই হবে তাঁর সামাজিক অবস্থান। তাঁর ‘স্যর’ (অশ্বিন) সে সব বুঝতে না চাইলেও, রত্নাকে বুঝতেই হবে।
তবু সম্পর্ক যে শ্রেণির ভাগাভাগির ঊর্ধ্বে, অবশেষে সে আশ্বাস পান রত্নাও। যে অশ্বিনের বারবার অনুরোধেও তাঁকে স্যর বলা থামাতে রাজি হননি পরিচারিকা, সেই উক্তি বর্জিত হয় অতি সহজ একটি কাজে। ডিজাইনারের কাছে কাজ পাওয়ার পরে অশ্বিনের ফোন এলে অবশেষে রত্নাও মানতে বাধ্য হন, তাঁকে সমস্থানে দেখতে চান তাঁর স্যর। অশ্বিনের নাম নিতে আর দ্বিধা নেই তবে রত্নার!
ছবির বিভিন্ন দৃশ্যের পিছনে হাজির ঝলমলে মুম্বই নগরি যেন সাক্ষ্মী থাকে এমনই ছোট ছোট পরিবর্তনের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy