মুখ্য চরিত্রে রণবীর সিংহ।
পরিচালনা: রোহিত শেট্টি
অভিনয়: রণবীর সিংহ, সারা আলি খান, সোনু সুদ, আশুতোষ রাণা, অজয় দেবগণ
সংগ্রাম ভালেরাও ওরফে সিম্বা (রণবীর সিংহ) এক জন আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ অফিসার। ছোটবেলা থেকেই তার লক্ষ ছিল পুলিশে চাকরি করার। কারণ ছোটবেলাতেই সে নিজের মতো করে বুঝে গিয়েছিল যে, অসৎ উপায়ে টাকা রোজগারের জন্য সব থেকে ভাল চাকরি পুলিশের চাকরি। সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীদের দালালি করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকা যায়। বাই ওয়ান গেট টু ফ্রি। আর সেই কাজে সিনম্বা হয়ে উঠেছিল ছিলেন একশো শতাংশ সফল। সে যে পুলিশ স্টেশনের ইনিচার্জ, সেখানকার হেড কনস্টেবল মইলে (আশুতোষ রাণা) আবার এক জন সৎ ও ভালমানুষ গোছের পুলিশকর্মী।
সিম্বার স্বভাবের জন্য মইলে সিম্বাকে কখনও স্যালুট করে না। কিন্তু সিম্বার খুব শখ, তার কাছ থেকে স্যালুট পাওয়ার। সে কথা সিম্বা মইলেকে একাধিক বার বলেও। কিন্তু প্রতি বারই মইলে হয় তার হাতে ব্যথা, নয়তো ইউনিফর্ম পরা নেই ইত্যাদি বাহানা দিয়ে স্যালুট করা থেকে বিরত থাকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই তার ‘প্রতিবাদ’।
কিন্তু বিরতির পর ছবির একটা দৃশ্যে কোনও একটা কারণে সিম্বা তার স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে এবং একা হাতে অনেকগুলি অপরাধীকে শায়েস্তা করে। আর ঠিক তার পরেই প্রথম বারের জন্য মইলে তাকে স্যালুট করে। গোটা পুলিশ স্টেশন অন্তর থেকে তাকে স্যালুট করে। পুরো সিনেমার বুনট গুণে এই সময় হয়তো হলে উপস্থিত দর্শকরাও আবেগের বশীভূত হয়ে মনে মনে স্যালুট করে ফেলেন সিম্বাকে। এটাই রোহিত শেট্টির ছবির ম্যাজিক! আর এই হল ‘সিম্বা’-র গল্প। এক জন অসৎ পুলিশ অফিসারের সৎ হওয়ার গল্প। কেন, কী বৃত্তান্ত, তার পর কী হল— এ সব জানতে গেলে ছবিটা দেখতে হবে।
আরও পড়ুন: বকুলের জীবনে এত যাতনা কিসের?
এ ছবি দেখার পর একটা রসিকতা না করে পারা যায় না, বিয়ে হলে সেই ব্যক্তিকে সবাই উপহার দেয়। কিন্তু বিয়ের পর উল্টে রণবীর নিজেই দর্শকদের ভাল কিছু উপহার দিলেন। এবং উলটপুরাণ মেনে বিয়ের পরেও পুরুষসিংহ রূপে দেখা দিলেন।
এ বার আসি মূল প্রসঙ্গে। রোহিত শেট্টি বরাবরই ফর্মুলায় বাঁধা জনপ্রিয় ছবি বানান। তাঁর অধিকাংশ ছবিই হয় অন্য ছবির অফিসিয়াল রিমেক, নইলে অন্য ছবি থেকে প্রবল ভাবে ‘ইন্সপায়ার্ড’। যেমন তাঁর ‘সিংঘম’ ছবিটি ছিল তামিল ছবি ‘সিঙ্গম’ আর ‘সানডে’ ছবিটি ছিল তেলেগু ছবি ‘অনুককুন্ডা ওকা রজু’-র অফিশিয়াল রিমেক। তাঁর ‘বোল বচ্চন’ ছবিটিও ছিল হৃষীকেশ মুখার্জি পরিচালিত ‘গোলমাল’ ছবি থেকে প্রবল ভাবে ইন্সপায়ার্ড। কিন্তু মজার ব্যপার হল যে রোহিতের সব ছবিই হিট এবং সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়ে থাকে।
‘সিম্বা’-ও তেলেগু ছবি ‘টেম্পার’-এর অফিসিয়াল রিমেক। কিন্তু মূল ছবির থেকে অনেকাংশেই ভাল ছবি। দক্ষিনী ছবিতে এক ধরনের বাড়াবাড়ি থাকে। রোহিত সেগুলোকে অনেকটাই স্বাভাবিক ও লজিকাল করেছেন। লজিক ও আবেগকে উন্নত করার জন্য অতিরিক্ত অনেক কিছু যুক্ত করেছেন। কিছু জিনিস বাদও দিয়েছেন। ফলে রিমেক হলেও এই ছবি টেম্পার থেকে অনেকটাই আলাদা। এর আগের তার প্রতিটি ছবিতেও রোহিত এই জিনিসটা করেছেন।
আরও পড়ুন: বিকিনি আর স্বল্পবাসে সায়ন্তনী, বললেন, ‘কোনও ছুঁৎমার্গ নেই’
সিম্বাও অ্যাকশন-কমেডি ঘরানার ছবি। ছবির কমেডি অংশ বেশ ভাল। রণবীরের চরিত্রের ক্ষেত্রে সংলাপের লেখনী এবং তার উপস্থাপনও ভারি চমৎকার। ‘ভাইয়ো অউর উনকি বহেনো’, ‘টেল মি সামথিং আই ডোন্ট নো’, ‘ভাই ফ্রম আদার আই’ (মারাঠিতে আই মানে মা) ইত্যাদি সংলাপ নির্মল আনন্দ দেয়।
তবে এ ছবির দুর্বলতা হল ছবির দৈর্ঘ্য। ২ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের এই ছবির দশ-পনেরো মিনিট কম হলেও ক্ষতি হত না। দৈর্ঘ্যের কারণে এ ছবির গতি কিছু কিছু জায়গায় শ্লথ হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় বক্তব্য অনেক কম কথাতেও বলা যেত। কিন্তু কোনও কোনও সংলাপের ক্ষেত্রে সেগুলোকে টেনে লম্বা করা হয়েছে, যা অহেতুক বলে মনে হয়েছে।
এটি সইফ কন্যা সারা আলি খানের দ্বিতীয় ছবি। কিন্তু এই ছবিতে তিনি ‘শো পিস’ ছাড়া আর কিছুই নন। তবে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে, ছবিটা পুরুষ কেন্দ্রিক। ছবিতে প্রচুর শক্তিশালী নারীচরিত্র রয়েছে এবং ছবির গল্প যতটা সিম্বা কেন্দ্রিক ততটাই নারী কেন্দ্রিকও। অ্যাকশন দৃশ্যগুলি কিছুটা অন্য রকম করার চেষ্টা করা হয়েছে। রোহিতের আগের ছবিগুলির মতো এখানে গাড়ি আকাশে ওড়ে না, চরিত্ররা ঘুসি খেয়ে মেঝেতে বাউন্স করে ছাদে গিয়ে ধাক্কা খায় না। পুরোটা না হলেও এ ছবিতে কিছুটা বাস্তববাদী ট্রিটমেন্ট করেছেন রোহিত। মোটকথা, ‘সিংঘম’ ছবিটির মাধ্যমে পুলিশ-ক্রিমিনাল ছবির যে সিরিজ তিনি শুরু করেছিলেন, ‘সিম্বা’ তাকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে সফল হয়েছে।
ছবিতে বিশেষ চমক হিসাবে কুমার শানুর গাওয়া নব্বইয়ের দশকের ‘লড়কি আঁখ মারে’ নামক হিট গানটিকে নতুনভাবে রিমিক্স করে ব্যবহার করা হয়েছে। এবং মজার ব্যপার হল, এখানেও গানটিরএকটা অংশ কুমার শানুই গেয়েছেন এবং সেই অংশে লিপ দিয়েছেন আরশাদ ওয়ার্সি— যিনি আসল গানটিতে লিপ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ছবির আর একটি চমক হল, বাজিরাও সিংঘম রূপে অজয় দেবগণের উপস্থিত। এবং ছবির শেষ চমক...
নাহ ... এটা বলব না। এটুকু না হয় হলে গিয়েই দেখলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy