ছবির একটি দৃশ্যে শ্রীজাত। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
পরিচালক: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
অভিনয়: তনুজা, সৌমিত্র, পরমব্রত, যিশু, অরুণিমা, শ্রীজাত
নাম না জানা বন্ধু আছে চেনা লোকের মধ্যেও! পাহাড় দেখা তো ছুতো মাত্র, মান-অভিমানের পাহাড় ডিঙোনোটাই যে আসল!
শহুরে জীবনে বার্ধক্যের একাকিত্ব নিয়ে ছবি ইতিমধ্যে কম হয়নি। তাতে খুদে বন্ধুদের আহ্লাদে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাওয়াও নতুন নয়। নতুন নয় সমাজসেবকের মাধ্যমে ছোট ছোট সচেতনতামূলক বার্তা, নতুন নয় সন্তানের মন ফিরে পাওয়ার তৃপ্তি। তবে এ ছবির কোনও মোড়ে অহেতুক চোখের জল নেই। নেই কোনও বোকা ভিলেন। একাকিত্ব গ্রাস করতে বসা এ সময়ে তাই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার পাহাড়’-এ উঠে আসা বন্ধুত্বের সন্ধান অভিনব না হলেও আনন্দের।
শেষবেলায় একা হয়ে যাওয়া এবং সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে ছবি, ধারাবাহিকে জর্জরিত এ সময়েও যে মূল সমস্যাটাকে সম্মান জানানো যায়, তা দেখিয়ে দিল পরমব্রত-শ্রীজাতের জুটি। হ্যাঁ, সোনার পাহাড়ের দৌলতে আরও এক শ্রীজাত প্রাপ্তি ঘটেছে বাঙালির। এবং বলাই বাহুল্য, এ প্রাপ্তি অনবদ্য। বাকিরা ডাহা ফেল হলেও শ্রীজাত-পরমব্রতের জমজমাট বন্ধুত্বই যথেষ্ট ছিল গোটা ছবিটি টেনে নিয়ে যাওয়ার। তারই মধ্যে এত কাল পরে বাংলা ছবির আরও এক প্রাপ্তি তনুজা। ক্ল্যাসিকাল মেজাজের অভিনয়ের সূক্ষ্মতা কেমন হয়, বহু বছর পরে টলিউডের পর্দাকে মনে করিয়ে দিল তাঁর দৃঢ় উপস্থিতি। এবং সবে মিলে অভিনেতা পরমব্রতের ফাঁক গলে গোল দিয়ে যেন জিতে গেলেন পরিচালক পরমব্রত।
ছবির একটি দৃশ্যে তনুজা।— ইউটিউবের সৌজন্যে।
তবু বড় বাজেট বলিউডি সৃষ্টির রমরমা বিক্রির মাঝে প্রায় ফাঁকাই হাতে গোনা কয়েক জনের হল। আর পাঁচটা গ্যাদগ্যাদে শহুরে থিমের ছবির মতো কাতুকুতু দিয়ে হাসি-কান্নার রসদও নেই যে এখানে। ফলে আগামী দিনেও এ হল কতটা ভরার সৌভাগ্য হবে, তা-ও আঁচ করা কঠিন। কারণ, দর্শকও গুরুত্বপূর্ণ নানা সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, মন্তব্য ঘ্যানঘ্যানে পটভূমিতে দেখেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন যেন। তবু এ ছবি দেখা প্রয়োজন, কারণ একচেটিয়া নিম্নমানের অহেতুক ভাবাবেগে টলমলে বক্স অফিসে সুপারহিট ‘আর্বান ড্রামা’-কে ক্ষ্যামা দিতে বলতে হবে তো কখনও!
আরও পড়ুন, তনুজাকে নিয়ে শুটিং করেছি, ভাবতেই হয়নি, বলছেন পরমব্রত
তবে ভালরও খামতি থাকে। যেমন যিশু ও অরুণিমা। ছবির গল্প বলছে তনুজার ছেলে যিশু যখন ভুলতেই বসেছিলেন মায়ের সঙ্গে সেই ছোট্টবেলার বন্ধুত্ব, তখন হঠাৎ এক চুমুকে ভাল হতে গেলেন কেন? তেমনই গোলমেলে অরুণিমার চরিত্রও। পরমব্রত, শ্রীজাত, তনুজা, সৌমিত্র— এঁদের নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্বের লড়াই জমে যাচ্ছিল দিব্যি। খানিক খিটখিটে মেজাজের মায়ের সঙ্গে যে না-ই মিলমিশ হতে পারে ব্যস্ত ছেলে ও আধুনিকা বৌমার— তা নিয়েও কোনও সমস্যা ছিল না। পুরনো বন্ধু যখন হঠাৎ এসে তাঁর মায়ের সঙ্গে বেশি আহ্লাদ করছেন, তখনও নিজের অস্বস্তি মানানসই ছিল তনুজার ছেলে যিশুর চরিত্রে। কিন্তু আর পাঁচ জন পরিচালকের থেকে পড়াশোনার প্রকাশে বেশ খানিকটা আলাদা হয়ে ওঠা পরমব্রত যেন এখানেই গুলিয়ে ফেললেন হিসেবটা। ছেলে চেঁচালেন মায়ের উপরে। একাকিত্বে ভোগা মা-ও আরও দুর্বল হলেন। তবুও ঠিক ছিল সব। শুধু মা নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেই এক পলকে ছেলে-বৌমার ‘বোধোদয়’ যেন লঘু করে দেয় এই ব্যস্ত সময়ের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার সঙ্কটটা। এ বোধোদয়ের কোনও মানে নেই। কারণ এ বোধোদয় অত সহজ নয়। এত সহজ হলে, এত মানুষ একা হতেন না এই কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে। আর এই বোধোদয়টুকু না থাকলে এক ম্যাচেই আরও কয়েকটি গোল দিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে যেতেন পরিচালক পরমব্রত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy