পাসওয়ার্ড ছবির পোস্টার।
অভিনয়ে: দেব, রুক্মিণী মৈত্র, পাওলি দাম, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আদ্রিত রায়, তৃণা সাহা, সৌরভ দাস
পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
প্রতিনিয়ত চুরি যাচ্ছে ব্যক্তিগত মুহূর্ত।
আমরা একান্তে যা বলছি, যা লিখছি, যা ছবি তুলছি, যা গেম খেলছি, সব ডেটা হয়ে জমা হচ্ছে ওয়েবে।এই বিপুল ডেটার স্রোতের ভেতর সাঁতরে আমরা হয়ে উঠছি বিশ্বনগরের বাসিন্দা।গা শিউরে ওঠা এক সময়ের ভেতর দিয়ে হাঁটছি আমরা, যে সময়ে এই ডেটাই ঠিক করে অর্থনীতি থেকে রাজনীতির সমীকরণ। কেননা আমরা নিরন্তর খুইয়ে চলেছি আমাদের ‘পাসওয়ার্ড’।
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তাঁর ফিল্মে বিশাল পটভূমি নিয়ে উপস্থিত হন। লুক, ফিল ও গল্প বলার ভঙ্গিতে বাংলা ফিল্মও জায়গা করে নিতে পারে বিশ্ব ফিল্মের সারিতে। অ্যাকশন দৃশ্য থেকে গ্রাফিক্স, সবেতেই তিনি ‘পাসওয়ার্ড’-কে পৌঁছে দেন সেই উচ্চতায়।
বাংলা ফিল্মের নায়িকারা আর সেট প্রপার্টিজের মতো শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা ফ্রেম কম্পোজিশনের অঙ্গ হয়ে থেকে যেতে রাজি নন।সময় ও সুযোগ দুটোই এখন নায়িকাদের সপক্ষে। যদিও প্রোটাগনিস্ট হিসেবে তাঁদের অনুপাত বাংলা ফিল্মেএখনও কম, প্রায় নেই বলা যায়।অ্যাকশন দৃশ্যগুলিতে রুক্মিণী (নিশা) যেভাবে উপস্থিত হয়েছেন তা নায়িকার সমীকরণকে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে।তাঁর ফিটনেস, বডি ব্যালান্স, তাঁর অভিনয়ের নানান মুড ফিল্মের স্মার্টনেসের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে।
দেব স্বভাবসিদ্ধ হিরোইজমের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন পরিণত অভিনয় প্রতিভা। পুলিশের ডেপুটি কমিশনাররোহিত দাশগুপ্তকে তাই মুগ্ধ হয়ে দেখতেই হয়। পরমব্রত (ইসমাইলভ) এবং পাওলি (মরিয়ম) তাঁদের যে কোনও ফিল্মের মতোই এই ফিল্মেও অতুলনীয়। আদ্রিতের (অ্যাডি) ফিল্মোগ্রাফিতে ‘পাসওয়ার্ড’ একটা অন্যরকম সংযোজন হয়ে থাকল। রুক্মিণীর বোনের চরিত্রেতৃণা সাহাকে মনে থাকবে। রোহিত দাশগুপ্তর টিমের প্রত্যেক অভিনেতাকেই বেশ লাগে। এছাড়াও ছোট-বড় অনেক চরিত্রই ফিল্ম দেখার পরেও মনে থেকে যায়।
পাসওয়ার্ড ছবির একটি দৃশ্য।
অভীক মুখোপাধ্যায়ের আলো ব্যবহারের চূড়ান্ত শৈল্পিকতা ধরে রাখে ফিল্মের প্রতিটি দৃশ্যাংশ। শুটিংয়ের সময় তাঁর ব্যবহৃত আলোগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিলেই বোঝা যায় সাধারণ আলোর কী অসাধারণ উপস্থিতি তাঁর সিনেমাটোগ্রাফিতে। কখনও কখনও ফ্রেমের মধ্যেই দেখা যায় কিছু কিছু আলো। কখনও হলদেটে আলো ছড়ানো বাল্ব, কখনও টেবিলের নীচ থেকে ভেসে আসা টিউবলাইটের আলো, কখনও বা তা ফ্লুরোসেন্ট।
আরও পড়ুন:বাস্কেটবল খেলোয়াড় প্রেমিকের সঙ্গে সমুদ্রের ধারে বোল্ড ছবি পোস্ট করলেন জ্যাকি-কন্যা
অনেকগুলো দৃশ্যে শ্যাওলা-সবুজ কালার টোন এক ধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড অনুভূতি দেয় যা গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে। ফিল্মে বড় ভূমিকা নেয় কম্পিউটার গ্রাফিক্স (সিজি)। এত ভাল সিজি বাংলা ফিল্মে সহজে দেখা যায় না।তন্ময় চক্রবর্তীর শিল্প নির্দেশনা ফিল্মের অন্যতম সম্পদ। জং পড়া যন্ত্র থেকে মেশিন রুম, প্রত্যেকটি ছোটখাটো সেট প্রপার্টিজ থেকে গানের দৃশ্যে বাস্তবতার খুঁটিনাটি ডিটেলে ধরা পড়ে।
গল্প অনুযায়ী এগিয়েছে রবিরঞ্জন মৈত্রর সম্পাদনার কারিগরি। প্রায় পুরো ফিল্ম জুড়ে এক দৃশ্যাংশ থেকে আর এক দৃশ্যাংশে যাওয়ার মধ্যবর্তী অংশে ‘কাট টু’ টেকনিক ব্যবহার করেন তিনি।ফিল্মের প্রথম অংশে সাইবার সন্ত্রাসের জট ছাড়ানোর যে ত্রস্ততা তা সম্পাদনার গতিতেও উপস্থিত। ফিল্মের দ্বিতীয় অংশে সেই তাড়াহুড়োর গতি অপেক্ষাকৃত কম। হাতে গোনা দু’-একটি জায়গায় ‘ডিজলভ’ টেকনিক ব্যবহার করে টাইম ট্রানজিশন দেখান সম্পাদক। ফিল্মের একেবারে প্রথমেই এক মেয়ের ব্যক্তিগত মুহূর্ত জনসমক্ষে হাজির হওয়ার যন্ত্রণায় তারআত্মহত্যার দৃশ্যটিতে,আর একেবারে শেষে রোহিত ও ইসমাইলভের সাক্ষাতের দৃশ্যে। দু’টি দৃশ্যেই চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক স্তর যেন উন্মোচিত হয় সম্পাদনার টেকনিকে।
আরও পড়ুন: মুভি রিভিউ ‘মিতিন মাসি’: নিছক গোয়েন্দা গল্প নয়, নারীশক্তির উদযাপন
স্যাভির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং গানপ্রায় সারা ফিল্ম জুড়ে ইলেক্ট্রনিক মিউজিকের আবহ ছড়িয়ে দেয়। যদিও ইসমাইলভ(পরমব্রত) এবং রোহিত দাশগুপ্ত(দেব)-র চরিত্রর জন্য একেবারে ভিন্ন দু’ধরনের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে।ইসমাইলভ পর্দায় এলেই আবহে শোনা যায় মধ্যপ্রাচ্যের নানান বাদ্যযন্ত্রের সুর।রোহিতের সঙ্গে জুড়ে থাকে প্রবল নাগরিক আবহ। দুই ব্যক্তিত্বকে এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা দেন স্যাভি।
ফিল্মে অহেতুক গান নেই। দু’টি গান এসেছে গল্পের পরত ছাড়াতেই। একটা গান গেয়েছেন নিকিতা গাঁধী ও শাশ্বত সিংহ (‘ট্রিপি লাগে’)। গানের আলাপেজোনপুরি রাগ ইলেক্ট্রনিক বাদ্যের মোচড়ে যেন ধরে রাখে আমাদেরই বিপন্ন জীবন।
কে কে-র গাওয়া রক কনসার্টের গানটি লাইভ পারফরম্যান্সের অনুভব দেয় (‘আয়ে খুদা’)। গানটির অভিনেতা সৌরভ দাস। গানটির সঙ্গে তাঁর লুক এবং অ্যাটিটিউড দারুণ মানানসই। যেন সত্যি সত্যি তিনি দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য রকস্টার হিসেবে পারফর্ম করছেন। কে কে অনেক বছর পর তাঁর দ্বিতীয় বাংলা গান গাইলেন (প্রথমটি ‘আকাশের নীলে’, ফিল্ম: ‘ফাঁদে পড়িয়া বগা কান্দে রে’)।
অমিত কুমার দত্ত’র শব্দযোজনা ফিল্মে আদ্যন্ত এক স্মার্টনেস যোগ করে। আলাদা করে শব্দগুলো ফিল্ম থেকে বিযুক্ত হয়ে কানে ধরা দেয় না, যেন তা আমাদের শ্রুতির স্বভাবের সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। যেমন,অজস্র ডেটা কপি করার শব্দ থেকে শুরু করে অ্যাকশন দৃশ্যের শব্দাবলীও খুবই পরিচিত একটা ফিল দেয়।
এক ভিন্ন ধরনের বিপন্নতার সন্ধান দিল ‘পাসওয়ার্ড’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy