কার্তিক আরিয়ান, সারা আলি খান।
ছবি: লাভ আজ কাল
অভিনয়: কার্তিক আরিয়ান, সারা আলি খান, রনদীপ হুডা, আরুষি শর্মা
পরিচালনা: ইমতিয়াজ আলি
সাত দু’গুণে চোদ্দোর নামে চার। এবং তার পর, হাতে রইল পেন্সিল।
এক লাইনে বলতে হলে এটাই ইমতিয়াজ আলি-র নতুন ছবি ‘লাভ আজ কাল’-এর সারমর্ম। নব্বুইয়ের দশক এবং ২০২০— এই দুই সময়কালের দুই যুগলের এক জোড়া প্রেম, এক জোড়া বিচ্ছেদ এবং শেষমেশ দু’রকমের পরিণতি। আর প্রায় সমান্তরালে বইতে থাকা দুই কাহিনির হাত ধরে বলতে চাওয়া যুগ বা মানসিকতা পাল্টালেও এক থেকে যায় ভালবাসার অনুভূতি। তবে দুই প্রজন্মের দু’রকম মানসিকতা, জীবনের কাছে দু’রকম চাহিদার ককটেলে দু’ঘণ্টা উনিশ মিনিট কাটিয়ে দর্শকের প্রাপ্তি অবশ্য ওই— হাতে রইল পেন্সিল।
ছবি মুক্তির জন্য দিনটা ভালই বেছেছিলেন পরিচালক। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে। ভালবাসার দিনে, ভালবাসার ছবি। প্রথম দিনের প্রথম শো-তে সাতসকালে দর্শকাসনে যুগলরাই ভিড় জমাবেন, তাতেই বা সন্দেহ কী! তবু গোড়াতেই গোলমাল হয়ে গেল হিসেবে। এবং ‘জব উই মেট’, ‘ককটেল’ কিংবা ‘হাইওয়ে’র ম্যাজিক দূরে থাক, এমনকি,‘লাভ আজ কাল (২০০৯)-এর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারলেন না ইমতিয়াজ আলি নিজেই! ফলে কার্তিক আরিয়ানের প্রাণবন্ত অভিনয়, সারা আলি খানের গ্ল্যামার, আরুষি শর্মার নিষ্পাপ সৌন্দর্য এবং রণদীপ হুডার স্বল্প পরিসরেও জাত চিনিয়ে দেওয়া চরিত্রায়ণ কার্যত বৃথাই গেল শেষমেশ!
ছবির শুরুতেই এক দিকে নব্বুইয়ের দশকে রঘু (কার্তিক) ও লীনা (আরুষি) এবং অন্য দিকে, ২০২০-তে দাঁড়িয়ে বীর (কার্তিক) এবং জয়ীর (সারা) সম্পর্কের আঁচ পেয়ে যান দর্শক। বীর আর সারা-র সম্পর্ক এগোয় রাজের (রণদীপ হুডা) ক্যাফে মাজি-তে। ‘মাজি’ কথাটির অর্থ অতীত, গল্পের পরতে পরতে যে অতীতের সঙ্গে আলাপ হতে থাকে দর্শকের। কারণ ক্যাফে-র মালিক রাজ আর কেউ নন, নব্বইয়ের দশকের প্রেমকাহিনির নায়ক রঘু। জীবন চলে গেছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। রাজের মন জুড়ে তবু ছেয়ে থাকে রঘু আর লীনাই। তাই খানিকটা আগ বাড়িয়েই তিনি হয়ে ওঠেন বীর আর জয়ীর এলোমেলো সম্পর্কের সূত্রধর। নাকি তাঁর অজান্তেই ২০২০-র গল্পে বীর আর জয়ী হয়ে ওঠেন তাঁরই হাতের পুতুল?
ছবির দৃশ্যে কার্তিক আরিয়ান, সারা আলি খান
এর পরে বাকিটুকু অবশ্য খানিকটা তুল্যমূল্য বিচার কিংবা পরীক্ষার খাতায় দুই যুগের পার্থক্য লেখার মতো। একেবারে এ কালের আধুনিকা, আকণ্ঠ মদ্যপান, ডেটিং, হুক-আপ, অনর্গল স্ল্যাং বলা, কেরিয়ার সর্বস্ব জয়ীর সঙ্গে বীরের চিরন্তন প্রেমের ‘সেকেলে’ ভাবনার মিলমিশ হতে চায় না। হাল না-ছাড়া বীর তবু সারার পিছনে পিছনে এসে পৌঁছন রাজের ক্যাফেতে। তাঁদের দেখতে দেখতে অতীতে ফিরে যাওয়া রাজই নিজের ভালবাসার গল্প বলেন জয়ীকে। সমাজের চোখরাঙানির তোয়াক্কা না করে রঘুর সঙ্গে লীনার দুর্নিবার প্রেম, লীনার জন্য মেডিক্যালের পড়াশোনা, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পিছনে ফেলে তার পিছু পিছু দিল্লি যাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে ‘ওল্ড স্কুল’ ভালবাসাতেই জড়িয়ে পড়ে জয়ী। দুবাইয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরির হাতছানি ছেড়ে, পরিবার ফেলে লিভ ইন শুরু করে বীরের সঙ্গে। তার পর একদিন রাজকে অন্য এক মহিলার সঙ্গে আবিষ্কার এবং লীনার সঙ্গে বিচ্ছেদের গল্প শুনে ফের কেরিয়ার-জীবনের সঙ্গে আপস করতে না চাওয়া মনোভাব ফিরে পায় জয়ী। বীরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেও ফেলে।
আরও পড়ুন: আজকে ভ্যালেনটাইন ডে তো? দেখি কেউ প্রপোজ করে কি না
আরও পড়ুন: জন্মদিনে ঐন্দ্রিলার উইশ আর অঙ্কুশের ‘ম্যাজিক’
বীর-জয়ীর জীবন দুই খাতে বইতে শুরু করে ফের। এই পরিস্থিতিতে ফের গল্পে ঢুকে পড়েন রাজ। লীনাকে তিনি যে ভুলতে পারেননি এবং শেষমেশ ভুল শোধরাতে চেয়েও কী ভাবে অধরাই থেকে গিয়েছে ভালবাসার অমূল্যরতন, এ বার সে গল্প শোনান জয়ীকে। ভুল ভাঙে এ কালের কন্যের। জোড়া লাগে বীরের সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক।
মধুরেণ সমাপয়েতের এ কাহিনিতে যুক্তি খুঁজতে যাওয়া বারণ। এ কালের আধুনিক মনোভাবাপন্ন জয়ী স্রেফ গল্প শুনে প্রভাবিত হয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর ভাবনায় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন কী করে, কিংবা উদয়পুরের ছোট শহরের জীবনযাপন থেকে দিল্লির জাঁকজমকে, পুরুষ-নারীর খোলামেলা সম্পর্কে আকৃষ্ট হয়ে লীনাকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলা রঘু ঠিক কেন ফের লীনার বিহনে কাতর হয়ে পড়েন, তার উত্তর মেলেনি। তবে বীর এবং রঘু, দুই ভূমিকাতেই মানানসই অভিনয়ে প্রাণবন্ত লেগেছে কার্তিককে। বরং স্ট্রিটস্মার্ট হতে গিয়ে বেশ লাউড লাগে সারাকে। রূপ-লাস্যে, মেকআপ-কস্টিউমে নজর কাড়লেও অভিনয়ে দাগ কাটতে পারেননি সেফ আলি-অমৃতা সিংহের সুন্দরী কন্যে। তার চেয়ে পাশের বাড়ির মেয়ের মিষ্টি সৌন্দর্যে, খানিকটা টিউলিপ জোশীকে মনে পড়িয়ে দিয়ে আরুষি স্নিগ্ধতা ছড়ান খানিক। এ ছবির প্রাপ্তি সেই অর্থে একমাত্র রণদীপ হুডাই। তাঁর মাপা অথচ বলিষ্ঠ অভিনয় কখনও হাল ধরেছে, কখনও বা এগিয়ে দিয়েছে গল্পের গতি। বলা ভাল, এ গল্প বোনা সুতো ছিল তাঁরই হাতে।
তবে বাকিটা স্রেফ কুড়ি বছরে যুগ পাল্টে যাওয়াকে মাথায় গেঁথে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা। ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’, ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এর গানে, রকের আড্ডায়, পাড়ার নাচের স্কুলে, লুকিয়ে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়া, শাড়ি-সালোয়ারের সারল্য থেকে পশ্চিমি সংস্কৃতির পুরোদস্তুর প্রভাব, ডেট-ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড, সোশ্যাল মিডিয়া স্টকিং, কোওয়ার্কিং স্পেসে কাজ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসার হালচালের হাত ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাওয়া দুই প্রজন্মের মানসিকতার ফারাক।
তবে প্রেম দিবসের আবেগে ভাসাভাসি সকালে প্রীতম চক্রবর্তী, ইশান ছাবড়ার রোম্যান্টিক সুরে মাখা গানগুলো মন্দ লাগে না অবশ্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy