কেমন হল ‘বেবি জন’? ছবি: সংগৃহীত।
পর্দায় ‘এন্ড টাইটেল’ স্ক্রল হয়। লেখা ‘সব বাবাদের উদ্দেশে’।
বাবারাই তো শিশুর প্রথম নায়ক। সে নায়ক কি শুধুই খলনায়ককে পেটায়? পর্দা জুড়ে মারধর করে? স্কুলে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে মন কষাকষি মিটমাট করে ফেলে এক তুড়িতে। পছন্দের খাবার নিয়ে হাজির হয় হঠাৎ। শীতের সকালে মাথায় মাঙ্কি টুপি, গায়ে চাদর আর রঙচটা লুঙ্গি। বাজারের ব্যাগ উপুড় করে ঘরময় ছড়িয়ে দেয় স্বর্গীয় ঘ্রাণ। বাবার রেখে যাওয়া পেতলের ঘড়ি, ধুলো পড়ে যাওয়া মানিব্যাগ, রাজস্থানি কলম আর জানালার ফাঁক গলে চলকে আসা এক চিলতে আলো। এ কি খলনায়ক পেটানোর থেকে কম নায়কসুলভ!
এমনই এক সাধারণ বাবা-মেয়ের গল্পের হাত ধরে ছবির শুরুয়াত। রোজ মেয়েকে বাইকে করে স্কুলে পৌঁছে দেয় বাবা! যাওয়ার পথে দু’জনের হরেক কিসমের খুনসুটি। স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। মিষ্টি বকুনি দেয় শ্রেণিশিক্ষিকা! শহর থেকে অনেক দূরে বেবি জন আর খুশির নিরুপদ্রব যাপন। এক সময় দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ আধিকারিক সত্য বর্মার ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত দাপুটে রাজনীতিবিদ, ত্রাস ছড়ানো পাচারকারী থেকে নিজের ডিপার্টমেন্ট। প্রেমিকার সঙ্গে রোম্যান্টিক মুহূর্ত। কাঠখড় পুড়িয়ে শ্বশুরের মন জয় করা। ভরা সংসারের স্বপ্নে মশগুল সত্য। সব ছেড়ে হঠাৎ মেয়েকে নিয়ে বাবার ছিমছাম দিন গুজরান! সত্য বর্মার কেন বেবি জনের ছদ্মবেশ? বেবি জন কি আবার ফিরে আসবে পুলিশের উর্দিতে? গল্পে চেনা ছক।
‘জওয়ান’ খ্যাত অ্যাটলির ‘থেরি’, ‘বেবি জনে’র অনুপ্রেরণা। পরিচালক ক্যালিস অ্যাটলির এক সময়ের সহকারী। অতিনাটকীয় নির্মাণের ভাঁজে সামাজিক বার্তা। ‘বেবি জন’ সেই অ্যাটলির ঘরানার ব্যর্থ প্রয়াস। ‘থেরি’তে বরুণের চরিত্রটি করেছিলেন বিজয়। বরুণের হাতে ছিল একাধিক তুরুপের তাস! একের পর এক খলনায়ক শেষ করে ফেলার সুযোগ। যথেচ্ছ ‘স্লো মোশন’, ‘লো অ্যাঙ্গেল’। জবরজং আবহ! আর সিটিকুড়োনো কেতা! বেবি জন ও সত্য বর্মা, আবেগ ও আগ্রাসনের সাপলুডো। পর্দায় চারিত্রিক দ্বিবিধতার গ্রাফ এঁকেছিলেন বিজয়। বরুণ তা পারলেন কই! সত্য বর্মাকে এক জায়গায় নারীদের রক্ষাকর্তা আখ্যা দেওয়া হয়। নারী পাচার, ধর্ষণের মতো সামজিক ব্যাধির অনুষঙ্গ আসে। কাহিনির সঙ্গে সংযোগহীন, খাপছাড়া সাবপ্লটেই সে অনুষঙ্গের ইতি।
কীর্তি সুরেশের স্বচ্ছ দৃষ্টির ঝলক দু’-একবার দর্শকের চোখ ধাঁধিয়ে পর ক্ষণেই তা মিইয়ে যায়। বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’য় ওয়ামিকার সারল্যে ভরা মুখ জানিয়েছিল সেলুলয়েড দাপাতে আরও এক নায়িকা হাজির। এই ছবিতে ওয়ামিকা কেন আছেন সম্ভবত নিজের কাছেও স্পষ্ট নয়। কমল হাসনের ঢঙে চেয়ারের হাতলে ঊরু ছড়িয়ে পা তুললেই কি হাড়হিম খলনায়ক তৈরি হয়? কেন বব্বর শের দীর্ঘ দিন জেলযাপন করে? পর্দায় জ্যাকি শ্রফের উপস্থিতি আলোড়নময় হলেও বব্বর শের সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তবে কি প্রাপ্তির ভাঁড়ার আগাগোড়াই শূন্য? অতিনাটকীয় নায়কের পাশে বুকে ভর দিয়ে সরীসৃপের মতো চলে হেড কনস্টেবল রাম সেবক। রাজপাল যাদবের অভিনয় ভাঁড়ারে এক টুকরো হিরে! ক্যালিস যদি ভেবে থাকেন শেষ দৃশ্যে সলমন খানের অবির্ভাব দর্শককে বাড়তি উৎসাহ জোগাবে, দু’-একটা সিটি জুটবে কপালে, ভুল ভেবেছেন। যথেচ্ছ পপকর্ন ছড়িয়ে প্রেক্ষাগৃহ তত ক্ষণে ফাঁকা! সমালোচক ছাড়া কেউ নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy