Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Mission Mangal

মুভি রিভিউ: হাল না ছাড়ার আখ্যান শোনায় ‘মিশন মঙ্গল’

২০১৪-র ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’ মাত্র ৪৫৪ কোটি টাকা বাজেটে প্রথম প্রচেষ্টায় ‘মঙ্গলযান’ পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহের মাটিতে।এই পথ খুব একটা কুসুমকোমল ছিল না। চন্দ্রযান ‘ফ্যাট বয়’ প্রথম বার উৎক্ষেপণে চরম ব্যর্থ হয়। সারা বিশ্বের কাছে রাতারাতি হাসির খোরাক হয়ে ওঠে ‘ইসরো।

মিশন মঙ্গল

মিশন মঙ্গল

বিহঙ্গী বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৯ ১৮:৫৬
Share: Save:

অবশেষে তাঁরা এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। মঙ্গলযানকে পাঠালেন মঙ্গলের মাটিতে। দেখিয়ে দিলেন, যে বাড়িতে ব্রেকফাস্ট বানায় সে ইসরোতে মঙ্গলযান বানাতেও সাহায্য করে। গোটা ছবি জুড়েই নারী শক্তির জয়জয়কার। সত্য ঘটনা অবলম্বনে, কিছুটা বলিউডি মশলার মোড়কে পরিচালক জগন শক্তি রান্নাটা যে ভালই করেছেন তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হলের ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স’-এই মালুম হয়!

ছবির নাম ‘মিশন মঙ্গল’। ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিল,প্রোটাগনিস্ট বুঝি অক্ষয় কুমার। কিন্তু সিনেমা দেখতে গিয়ে বোঝা গেল,লাইমলাইটে আসলে বলিউডের মহিলা ব্রিগেড। বিদ্যা বালান, তাপসী পান্নু, কীর্তি কুলহারি, সোনাক্ষি সিংহ এবং নিত্যা মেনন— প্রত্যেকেই নিজের চরিত্রে অনবদ্য।

লাইমলাইটে বলিউডের মহিলা ব্রিগেড

২০১৪-র ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’ মাত্র ৪৫৪ কোটি টাকা বাজেটে প্রথম প্রচেষ্টায় ‘মঙ্গলযান’ পাঠিয়েছিল মঙ্গল গ্রহের মাটিতে।এই পথ খুব একটা কুসুমকোমল ছিল না। চন্দ্রযান ‘ফ্যাট বয়’ প্রথম বার উৎক্ষেপণে চরম ব্যর্থ হয়। সারা বিশ্বের কাছে রাতারাতি হাসির খোরাক হয়ে ওঠে ‘ইসরো। ‘ফ্যাট বয়’-এর কাণ্ডারি রাকেশ ধবনকে বদলি করে দেওয়া হয় ‘মঙ্গল মিশন’-এ। ফিল্মে দেখানো হচ্ছে, রাশিয়া, চিন সমেত অনেক দেশই এর আগে মঙ্গলে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে সরকারি কর্মচারী রাকেশকে সরাসরি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবেনা। তাই কিছুটা কৌশল করেই রাকেশ ওরফে অক্ষয় কুমারকে দেওয়া হল ‘মিশন মঙ্গল’-এর দায়িত্ব। কর্তাব্যক্তিরা ভেবেছিলেন, এত কঠিন প্রজেক্টে ভয় পেয়ে নিজেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেবেন রাকেশ। কিন্তু ওই যে,বলিউড বাদশা শাহরুখ তো কবেই বলেছেন, ‘হেরে গিয়ে যে জিতে যায় তাঁকে বাজিগর বলে’। ওই ‘মঙ্গল মিশন’-এ সবাই যেন বাজিগর। স্বপ্ন দেখেছিলেন রাকেশ। আর তা পূরণ করতেই নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন বাকি বিজ্ঞানীরা। নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা গৌণ হয়ে গিয়েছে সেখানে। তাই দিনে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতেও ওঁরা পিছপা হননি। সরকার টাকা দিতে চাইছেন না নতুন প্রজেক্টের জন্য। ভারত মঙ্গলে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাবে শুনে আড়ালে হেসেছিল বাকি দুনিয়া। চতুর্দিকে হাজারও বাধা। তা সত্ত্বেও একদল মহাকাশ বিজ্ঞানীর হাল না ছাড়ার গল্পই বলে ‘মিশন মঙ্গল’।তাপসী, কীর্তি, সোনাক্ষি, সবার অভিনয়ই নজর কাড়বে। তবে প্রজেক্ট ডিরেক্টর তারা সিন্ধের চরিত্রে বিদ্যা বালান যেন সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। তথাকথিত নায়িকাসুলভ ফিগার নেই। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিনয় শৈলী দিয়ে দাপিয়ে গিয়েছেন পুরো ছবি। অক্ষয় কুমারের চরিত্রটি অন্যরকম। চরম টেনশনের মুহূর্তে তিনি গুনগুনিয়ে গান গান, রাতের পর রাত জেগে থাকেন কাজের জন্য, সবাই যখন মুষড়ে পড়ে, সাহস জোগান।

রাকেশ ধবনের চরিত্রে অক্ষয় কুমার

সরমন যোশীর চরিত্রটিও দাগ কাটবে মনে। কমিক এলিমেন্টে ভরপুর এই চরিত্রটি নিঃসন্দেহে রিলিফের কাজ করেছে। স্পেশাল এফেক্টের অসাধারণ ব্যবহার, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মন কাড়বে নিঃসন্দেহে। দু’টি অর্ধই টানটান। প্লটটা সকলেরই জানা। তবু বোরডম আসবে না কোনও ভাবেই। ‘হোম সায়েন্স’, অর্থাৎ গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের মধ্যেই যে মহাকাশ বিজ্ঞানের মূলসূত্র লুকিয়ে রয়েছে তা হয়তো ছবিটি না দেখা পর্যন্ত আপনাকে কোনও দিনও ভাবাবে না। সবটা ভালই চলছিল। কিন্তু ঝাড়ু হাতে তথাকথিত বলিউডি কায়দায় বিজ্ঞানীদের অকারণ নাচ খানিকটা হাস্যকর।ছবিতে দেখানো হয়েছে, বাচ্চাদের খাবার বানিয়ে, ঘরের সমস্ত কাজ করে নিজে গাড়ি চালিয়ে ইসরো যাচ্ছেন বিদ্যা। তা সত্ত্বেও বিদ্যার স্বামী তাঁকে কাজ ছাড়ার জন্য জোরাজুরি করেন। একসময় রাজি হয়েও যান বিদ্যা। পরে অবশ্য প্লট ঘোরে অন্যদিকে। কোথাও গিয়ে নারীশক্তির মোড়কে ‘মেয়েদের দৌড় রান্নাঘর অবধি’ কনসেপ্টকে হাইলাইট করা হল কি? প্রশ্নটা রয়েই যায়।তবে সব মিলিয়ে হলে গিয়ে দেখার মতো ছবি ‘মিশন মঙ্গল’। জোর করে চাপানো দেশাত্মবোধ নেই, অথচ অজান্তেই ইসরোর কর্মী ও বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য বুকের ছাতি চওড়া হবে বেশ কয়েক গুণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE