ছবি: মাটি
পরিচালনা: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়: আদিল হোসেন, পাওলি দাম, মনামী ঘোষ, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়,অপরাজিতা আঢ্য
পুজোর বাকি এখনও মাস তিনেক। গতকাল প্রিয়া সিনেমা হলে পৌঁছে কিন্তু সব গুলিয়ে গেল। ঢাকের শব্দে চারিদিক গমগমে। পাঞ্জাবি, শাড়ি আর মাথায় ফুলের মালা। সবাই লাইন দিয়ে হলে ঢুকছেন একে একে। যাকে বলে রীতিমতো ফেস্টিভ মুড।
কারণ?
‘মাটি’র প্রিমিয়ার। পাওলি না বলে পারলেন না, “বহু দিন পর কোনও বাংলা ছবির এত ভাল মার্কেটিং ও প্রিমিয়ায় দেখলাম।” নেপথ্যে দু’জন। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ধারাবাহিকের কিং মেকার লীনা ইতিমধ্যেই বহুশ্রুত। ফিচারের পরিকল্পনা চলছিল বহু দিন। অবশেষে মুক্তি পেল ‘মাটি’।
পর্দা সরতেই মাটির গন্ধ। বাংলাদেশের কুতুবদিয়া থেকে জিনিয়া (মনামী ঘোষ) আসে কলকাতায়। তাদের এক সময়ের প্রতিবেশী চৌধুরীবাড়িতে নিমন্ত্রণ জানাতে। জিনিয়ায় বিয়ে।
আরও পড়ুন, দীপিকা পাড়ুকোনের চেয়ে কোনও অংশে কম যান না তাঁর এই স্টাইলিস্ট
যারা দেশ ছেড়েছে বহু কাল তারা কি আসবে? সংশয়ে থাকে জিনিয়া। ইতিহাস গবেষক মেঘলা চৌধুরী (পাওলি দাম) শিকড়ের টান উপেক্ষা করতে পারে না। ভিসার ঝড়ঝাপটা সামলে সটান পৌঁছে যায় দেশের মাটিতে। শুরু হয় দেশ গাঁয়ের ইতিহাস অনুসন্ধান। মেঘলার সম্বল বলতে ঠাকুমা কুমুদিনী দেবীর ডায়েরি। যে ডায়েরি আসলে এক রূপকথার গল্প বলে। রূপকথার মানুষ, গ্রাম, বাড়ি আর সবুজ গাছপালার গল্প। ঠিক সেখানেই বাস্তবের অনিবার্য সংঘাত। আজও তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটেতে দুই সম্প্রদায়ের বিয়ে নিয়ে তুমুল ঝামেলা বাধে। জ্বলে ওঠে গ্রামের পর গ্রাম। আবার জামিল হোসেনের (আদিল হোসেন) মতো মানুষরাও সেখানে থাকে। যারা কেরিয়ার, বিদেশে মোটা টাকার চাকরি, সংসার— সব ছেড়ে কুতুবদিয়ায় ফিরে আসে দেশেকে ভালবেসে। প্রাথমিক সংশয়, সন্দেহ কাটিয়ে জামিলের চোখ দিয়ে নতুন দেশকে আবিষ্কার করতে করতে এগোয় মেঘলা। এখন গ্রামের হাসপাতালে তার ঠাকুমার মূর্তি বসেছে। ঠাকুমার নামে স্কুল। কিন্তু যে কুমুদিনী দেবী শুধুমাত্র নিজের ভিটেতে থাকবেন বলে স্বামী, সংসার সব ছেড়েছিলেন তিনিও রেহাই পাননি ধর্মীয় অন্ধকার থেকে। কারণ ধর্ম তো আসলে গণ হিস্টিরিয়া।
‘মাটি’র দৃশ্যে পাওলি দাম।
দেশভাগের গল্প মানেই শুধুমাত্র কাঁটাতার, শরণার্থী স্রোত কিংবা র্যাডক্লিফ লাইন নয়। ‘মাটি’ বোঝায় দেশভাগ আসলে এক অনুসন্ধানের গল্প। ইতিহাস বইয়ের পাতার বাইরে সাধারণের ইতিহাস খোঁজার গল্প। আর যখন সুদূর মার্কিন দেশে পড়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটির জন্য বুক হু হু করে ওঠে জামিলের, তখন এ গল্প পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিকতায়। মাটি দেখতে দেখতে মনে হয়, আমরা প্রত্যকেই আসলে দেশহারা। পরিযায়ী পাখির মতো ঘুরে বেড়াই এক দেশ থকে অন্য দেশে। মাটির টানে।
আরও পড়ুন, বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী হাসিন, অফার এল বলিউডেরও
আদিল হোসেন কি অভিনয় করেন? তার সহজ স্বাভাবিক অনুভূতির প্রকাশ আবারও মুগ্ধ করল। আদিলের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিলেন পাওলি। লীনার ধারাবাহিকের ঘরের লোকেরা প্রায় সবাই আছেন। প্রত্যেকেই যথাযথ। ছোট্ট চরিত্রে নজর কাড়লেন চন্দন সেন ও মনামী ঘোষ। এ ছবির ছুপা রুস্তম দেবজ্যোতি মিশ্র। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে সঙ্গীত বুনেছেন অনবদ্য। প্রত্যাশা মতোই পরিচালকদ্বয় সেট সাজিয়েছেন লার্জ স্কেলে। ছবি দেখতে দেখতে বাড়তি পাওনা কি জানেন? পাওলি আদিলের সঙ্গে চট করে ঢাকা ইউনির্ভাসিটি আর ভাষা আন্দোলনের শহিদ বেদীও ঘুরে আসা হবে। মিলিয়ে মিশিয়ে স্কোর শিটে প্রথম ইনিংসেই পরিচালকদ্বয় নিঃসন্দেহে লেটার মার্কস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy