Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Hollywood Movies

হেথাক তুকে মানাইছে নাই গো...

ছবির অজস্র টুকরো টুকরো মুহূর্ত বুঝিয়ে দেয়, কেন ‘নোম্যাডল্যান্ড’ পুরস্কারের মঞ্চে এ ভাবে ঝড় তুলেছে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২২
Share: Save:

একটি দৃশ্য— যেখানে দুই অসমবয়সি আলাপচারিতায় রত। প্রৌঢ় মহিলাটি সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ছেলেটিকে বোঝাচ্ছে, এই বয়সে কেন সে পথে পথে ঘুরছে। আর তরুণটি জানাচ্ছে, কীসের তাড়নায় বাবা-মা, প্রেমিকা সকলকে ছেড়ে সে যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছে।

আর একটি দৃশ্য— একটি বাচ্চা ওই প্রৌঢ় মহিলাটিকে প্রশ্ন করে, ‘‘শুনলাম, তোমার ঘর নেই!’’ প্রৌঢ়া জানায়, ‘‘আমার ঘর আছে কিন্তু বাড়ি নেই। দুটো তো এক নয়?’’

এক প্রৌঢ় চাইলেই তার বাড়িতে যেতে পারে। স্ত্রী গত হলেও পুত্র-পুত্রবধূ রয়েছে। কিন্তু বাঁধনে বাঁধা পড়তে তার অনীহা।

ছবির এমন অজস্র টুকরো টুকরো মুহূর্ত বুঝিয়ে দেয়, কেন ‘নোম্যাডল্যান্ড’ পুরস্কারের মঞ্চে এ ভাবে ঝড় তুলেছে। স্লোগান, আন্দোলনের বাইরেও যে কঠিন কথাগুলো সপাটে বলে ফেলা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক ক্লোয়ি ঝাও। অভিবাসী সমস্যা, বেকারত্ব, বয়স্কদের সমস্যা, মন্দার মতো কঠিন বিষয় আলতো করে কাহিনির স্রোতের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নোম্যাডল্যান্ড
পরিচালক: ক্লোয়ি ঝাও
অভিনয়: ফ্রান্সেস, লিন্ডা, ডেভিড
৮/১০

‘নোম্যাডল্যান্ড’ একাকিত্বের গল্প বলে, আবার বন্ধুত্বেরও। ষাটের দোরগোড়ায় পৌঁছনো ফার্ন (ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড) তার আরভি (রিক্রিয়েশনাল ভেহিকল) নিয়ে পথে নেমেছে। আরভি বিদেশে বহুল প্রচলিত। চলমান সংসার। ফার্নের স্বামী গত হয়েছে, নিজের চাকরিও গিয়েছে। রাখা যায়নি বাসস্থানটিও। ফার্ন চাইলে তার আত্মীয়, বন্ধুদের বাড়িতে থেকে যেতে পারত। কিন্তু সে বেছে নেয় ভবঘুরে জীবন। কেন? কীসের তাড়নায় সে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়ায়? সেই উত্তর ফার্নের সঙ্গে দর্শকও খুঁজতে থাকেন ছবিতে।

সাংবাদিক জেসিকা ব্রুডারের লেখা সমনামের কাহিনির আধারে ক্লোয়ির ‘নোম্যাডল্যান্ড’। নোম্যাড অর্থাৎ যাঁদের স্থায়ী বাসস্থান নেই। পথকেই যাঁরা ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। ফার্নের কাহিনির মধ্য দিয়ে নানা কাহিনি, নানা চরিত্র ছুঁয়ে যায়। দর্শকের সামনে ফুটে ওঠে এক অন্য আমেরিকা, যা আসলে মোটেই সব পেয়েছির দেশ নয়। ফার্নের বন্ধু লিন্ডা মে (বাস্তব চরিত্র) বলতে থাকে, ১২ বছর বয়স থেকে সে কাজ করে চলেছে। জীবন সায়াহ্নে এসে তার তো আরামে অবসর কাটানোর কথা। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে সে সুযোগ দেয়নি। তাই চাকাওয়ালা সংসার নিয়ে আজও সে জীবনযুদ্ধের পথে। ‘নোম্যাডল্যান্ড’-এর কিছু জায়গা ‘আই, ড্যানিয়েল ব্লেক’ ছবিটির কথা মনে করায়। সেখানেও চাকরি সন্ধানে হাপিত্যেশ করে বয়স্করা, তাদের জীবনে কোনও রিটায়ারমেন্ট নেই।

‘নোম্যাডল্যান্ড’ আসলে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প, আবার নিজেকে হারানোরও। ‘‘ঘর কি শুধুই একটা শব্দ? একটা বাহ্যিক বস্তু? নাকি যা তুমি বয়ে বেড়াচ্ছ নিজের মধ্যে?’’

ভাবিয়ে তোলার মতো অনেক সংলাপ আছে ক্লোয়ির ছবিতে। বাজারে গিয়ে অত্যাধুনিক আরভি দেখে আহ্লাদিত ফার্ন কিন্তু নিজের গাড়িটি বদলানোর কথা ভাবতে পারে না। ওখানে যে সাজানো আছে তার সংসার, স্বামীর স্মৃতি। ফার্নের কাছে ছিল তার বাবার কেনা ডিনার সেটের অবশিষ্টাংশ। এত বছর ধরে আঁকড়ে রাখা প্লেটটা ভেঙে গেলে, সে রেগে যায়। মায়া ছাড়া আর কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় একে! এক সময়ে সেই মায়াও কাটিয়ে ফেলে ফার্ন। ডেভের (ডেভিড স্ট্রাথ্যার্ন) সঙ্গে নতুন করে ঘর বাঁধার সুযোগ থাকলেও, সে তা নেয় না।

ফার্নের চরিত্রের সঙ্গে ফ্রান্সেস পুরোপুরি একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। তাঁর মুখের রেখায় ফুটে ওঠে চরিত্রের জীবনযুদ্ধের কাহিনি। ছবির প্রতিটি চরিত্রই এত জীবন্ত যে, সিনেমা আর বাস্তব মিলেমিশে যায়। আর সিনেমাটোগ্রাফার জোশুয়া জেমস রিচার্ডের ক্যামেরার সামনে প্রকৃতি যেন নিজেকে ঢেলে দিয়েছে। অনেকের মনে হতে পারে, ধীর লয়ের এ ছবির দৈর্ঘ্য বেশি। কিন্তু সেটার বোধহয় প্রয়োজন ছিল।

ছবির অনেক জায়গাতেই চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে, কিন্তু সামলে নিতে হয়। ঠিক যে ভাবে ফার্ন সব অপ্রাপ্তি সামলে নিজের স্থির করা পথে চলতে থাকে...

অন্য বিষয়গুলি:

Hollywood Movies hollywood Nomadland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy