ব্যোমকেশ বক্সী-র চরিত্রে সুশান্ত। ছবি: সংগৃহীত।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ ছবিতে তাঁর সহ অভিনেতা মৌমিতা চক্রবর্তী কলম ধরলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য।
২০১৪-র শুরু। জানুয়ারি মাস। কলকাতার বুকে নেমেছে শীত। বালিগঞ্জের এক ক্যাফেতে দিবা কাকাই (পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়) সুশান্তের সঙ্গে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় আমার। দূর থেকে হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে হেঁটে আসতে দেখে মনে মনে বলেছিলাম, "দেখতে তো বেশ"। শান্ত হয়ে পাশে বসল। নিজে থেকেই আলাপ জমাল আমার সঙ্গে। কে বলবে তখন মুম্বইয়ে বেশ কয়েকটা বছর কাটিয়ে নাম করে ফেলেছে ও?
শুরু হল আমাদের ওয়ার্কশপ। ও ব্যোমকেশ। আর আমি লীলা। মানে ব্যোমকেশের প্রাক্তন। কী হাসিখুশি, শান্ত স্বভাবের একটি ছেলে। নায়কোচিত হাবভাব নেই, কোনও চাহিদা নেই। সারাদিন মজা করছে। হইহল্লা করছে....
ব্যোমকেশ বক্সী ছবিতে সুশান্ত এবং মৌমিতা। নিজস্ব চিত্র।
এর কিছু দিন পর শুরু হল শুটিং। তখন কিন্তু সুশান্তের একেবারে অন্য চেহারা। কী সিরিয়াস! মন দিয়ে কাজ করছে। স্ক্রিপ্ট পড়ছে।
আরও পড়ুন: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, আত্মহত্যা বলে সন্দেহ
আমার প্রথম শটটাই ছিল ওর সঙ্গে। লীলা ওকে ডাম্প করছে। সাফ জানিয়ে দিচ্ছে ব্যোমকেশকে, "তোমায় বিয়ে করতে পারব না"। সিনটা শুট করতে গিয়ে কেন জানি না কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম আমি। আসলে সে সময় আমার ব্যক্তিগত জীবনেও ঝড় উঠেছিল। এ দিকে আমার কান্না থামে না। সুশান্ত এল। পাশে বসে জানতে চাইল, কী হয়েছে। যেন কত দিনের চেনা, কবেকার বন্ধু আমার!
এর পরেরদিন আমার ধুম জ্বর। কিন্তু শুটে যেতে হবে। জ্বর নিয়েই গেলাম ওষুধ খেয়ে। কিন্তু জ্বর আর কমে না। শরীর আর দিচ্ছে না। মেক আপ ভ্যানে গা এলিয়ে দিয়েছি। ঠিক এমন সময়েই কোথা থেকে খবর পেয়ে সুশান্ত এল। খবর নিল। জানতে চাইল, কিছু লাগবে কী না। আমি তখন মুম্বইয়ে নতুন, কী দায় ছিল ওর?
বন্ধুত্বের সূত্রপাতটা ওখান থেকেই। আমি মুম্বই শিফ্ট করছি শুনে খুব খুশি হয়েছিল। দেখা হত, কথা হত।
আরও পড়ুন: মা...স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চোখের জলে: শেষ পোস্ট সুশান্তের
ইতিমধ্যেই আমার বাবার খুব শরীর খারাপ হয়। মুম্বইয়ের প্ল্যান ড্রপ করে আমি কলকাতা ফেরার তোড়জোর করছি। সুশান্তকে ফোন করি। ও আসে। সব শুনে খানিক রাগ করেই বলে, "ওয়াপাস আনা। মুম্বই কিসি কো খালি হাত জানে নহি দেতা"।
আমার আর যাওয়া হয়নি। সুশান্ত চলে গেল। আমি আমার বন্ধুকে হারালাম।
"ফিরে এস ব্যোমকেশ। দেখ, লীলা এ বার তোমায় আর ফেরাবে না...."।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy