‘নিজেকে ইমন বা পাখি করে রাখতে চাইনি’
করোনা তাঁকে পছন্দ করে না। এই অতিমারির সময় নিজেকে শিখিয়েছেন, বাড়িতে কেমন করে আনন্দে থাকা যায়। ৪০ বছর বাদে তাঁর বাবা টেবিল টেনিস খেলছেন বাড়িতে, তাঁর সঙ্গে। বাড়ি থেকেই বিদেশি ভাষা শিখছেন। সিনেমা নিয়ে চলছে পড়াশোনা। তিনি মধুমিতা সরকার।
প্রশ্ন: অতিমারির গৃহবন্দি জীবনকে এত পছন্দ আপনার?
মধুমিতা: সময়ের সঙ্গে চলতে হবে। এই বাড়িতে থাকা। দাদার সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলা। সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা। সৃষ্টিশীল কাজ করা, নিজের কাজ নিয়ে থাকাই আমার পছন্দের। বন্ধুরা রোজ পার্টি করতে ডাকলে ইচ্ছে করে না আর। সত্যি এখন যদি আমায় বলা হয় আগের জীবনে ফিরতে, বেশ বেগ পেতে হবে।
প্রশ্ন: এই বাড়িতে থাকার নতুন জীবনে ইনস্টাগ্রামের বড় ভূমিকা আছে। মানবেন?
মধুমিতা: মানে?
প্রশ্ন: এত জনপ্রিয় আপনি! লোকে তো পাগল আপনাকে নিয়ে। আপনি ইনফ্লুয়েন্সর হতে চান?
মধুমিতা: আমার আইকন হওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। আমি নিজেকে সেই ধারাবাহিকের 'ইমন' আর 'পাখি' করে রাখতে চাইনি। আমার যা বয়স, তার চেয়ে বেশি বয়সের চরিত্র হয়ে একটানা থাকতে চাইনি। আমি যে তার আগে মডেলিং করেছি, তা তো মানুষ জানতই না। আমি যে নিজেকে সব চরিত্রে ভাঙতে পারি, সব ধরনের পোশাকে যে আমায় মানায়— এ সব আমি নিজেই দেখতে চেয়েছিলাম। তাই আমার ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: কিন্তু হইচইয়ের নতুন ওয়েব সিরিজ 'উত্তরণ'-এ তো আপনি সেই শাড়ি পরেই...
মধুমিতা: হ্যাঁ। এখানে বিবাহিত চরিত্র। গৃহবধূ। সকলের ভাল চায়। কিন্তু তাই বলে 'উত্তরণ' তো আর আমার অভিনয় করা ধারাবাহিক 'কুসুমদোলা' নয়। সম্পূর্ণ আলাদা গল্প। রাজদীপের সঙ্গে কাজ করেও ভাল লাগল। নতুন গান প্রকাশ হওয়ার পরে সকলের নজর কেড়েছে। আসলে কী জানেন, আমি এই ধারার চরিত্র যেমন করব, তেমন 'চিনি'র মতো চরিত্রও করব। আমার অভিনয়ের সব ধারায় আমি কেমন? সেটাই তুলে ধরে আমার ইনস্টাগ্রাম। শুনুন, ইনস্টাগ্রাম আমি ফ্লার্ট করার জন্যও করি না। আর দশ জনকে দেখানোর জন্যও করি না। আমি পরিচালকদের জন্য ইনস্টাগ্রাম করি, তাঁরা যাতে চরিত্র নির্বাচনের সময় আমার বৈচিত্র্য মাথায় রাখতে পারেন। আর অতিমারির সময়ে কিছু না করে নিজের জন্য কোনও কাজ করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: নিন্দকেরা বলেন অভিনেতারা যদি ইনস্টাগ্রামেই সময় কাটিয়ে দেন, তা হলে অভিনয় করবেন কখন?
মধুমিতা: যারা বলছে, তারা জানছে কী ভাবে যে আমি ইনস্টাগ্রামে সময় কাটাই? আমি এক দিনের শ্যুট করে সারা মাস চালাই। আর পোস্ট করতে তো তিরিশ সেকেন্ড লাগে। তা ছাড়া, আমি তো করি না, ওই কাজের জন্য আলাদা লোক আছে। আর মানুষই বা দেখছে কেন? মানুষ বেশি সময় কাটায় ইনস্টাগ্রামে। তাই ফলোয়ারের সংখ্যা এত। নিন্দকেরা সমালোচনা করবেই। ও সব ভাবতে বসলে কাজ করতে পারব না।
প্রশ্ন: শরীরের যত্ন নিচ্ছেন? আপনি পুজোর সময়ে অসম্ভব রোগা হয়ে গিয়েছিলেন
মধুমিতা: আমার চোয়ালে একটা সমস্যা হয়েছিল। তখন তরল খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতেই পারতাম না! সে কারণেই রোগা হয়ে গিয়েছিলাম। এখন কিন্তু সম্পূর্ণ ঠিক আছি। সামান্য ওজন বেড়েছে।
প্রশ্ন: ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মধুমিতা সরকারকে কাজের জায়গায় সাহায্য করেছে?
মধুমিতা: অবশ্যই। শুধু আমি কেন? আনকোরা একজন অভিনেতা যদি ওটিটিতে ছোট চরিত্র পায়, তার সেটা করা উচিত। অনেক কাজের সুযোগ এখানে।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে বড় প্রযোজনা সংস্থা আছে। তাই আপনার এত কাজের সুযোগ?
মধুমিতা: আমি ধারাবাহিক দিয়ে শুরু করেছিলাম। সবাই তখন বলত সিনেমা করছিস না কেন? তখন পরিস্থিতি ছিল না। পরে ছবিতে আসি। আজও কিন্তু আমাকে সিনেমার ক্ষেত্রে নবাগতাই বলা হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার দশ বছর হয়ে গিয়েছে। তা-ও আমি নতুন! বড় প্রযোজনা সংস্থা সঙ্গে আছে, এর হাত ওর হাত আছে, অমুকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে— এ সব রটিয়ে কোনও লাভ নেই। তা হলে দশ বছরে মাত্র তিনটে ছবি হত না। যা কাজ পেয়েছি, তা আমার অভিনয়ের জন্য। পরিচালকরা জানতেন, আমায় দিয়ে হবে। আমি পরিচালকের কথা শুনব। আর হ্যাঁ, আমার অনুরাগীর সংখ্যা একটু বেশি। এগুলোই হয়তো চরিত্র নির্বাচনে কাজে লাগে।
প্রশ্ন: মিমি, নুসরত, শ্রাবন্তী, তনুশ্রী, পায়েল...এ ভাবে নাম এলে আজও আপনার নাম পরে আসে। খারাপ লাগে?
মধুমিতা: ওমা! খারাপ লাগবে কেন? আপনি যাঁদের নাম উল্লেখ করলেন বা অনেকের নাম উল্লেখ করলেন না, তাঁরা অনেক আগে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন। অনেক অভিজ্ঞ। অনেকে আমার চেয়ে ভাল অভিনয়ও করেন। আমাকে দর্শক যতটা সম্মান করেন, ভালবাসেন -এটা যেমন পাওয়া, তেমনই আমাকেও অনেক ভাল কাজ করতে হবে। রাস্তা লম্বা। আর কোথাও আমার সাফল্য এলে আমি সেটা নিয়ে কোনও দিন হইহই করিনি। অন্য আর কী করা যায় ভেবেছি। কাজ করার সময়ে ভেবেছি ছবি হিট না করলেও আমার কাজ নিয়ে যেন খুব সমালোচনা না হয়। মানে, মধুমিতার জন্যই খারাপ হয়েছে, এমন যে কেউ না বলে। চেষ্টা তো করি...
প্রশ্ন: আপনি এতটাই জনপ্রিয় যে আপনার বিয়ে, বিচ্ছেদ থেকে মৃত্যু সব নিয়ে কথা বলা হয়ে গিয়েছে
মধুমিতা: কত বার যে নিজের মৃত্যুর খবর পড়েছি! খারাপ লাগে। মা খুব অস্থির হয়ে যেত এক সময়ে ওই সব খবর পড়ে। কিন্তু খারাপের মধ্যে ভাল আছে। 'ডার্টি পিকচার' ছবিতে বিদ্যা বালনের চরিত্র খেয়াল করে দেখবেন, ওর সম্পর্কে খারাপ ভাল যা খবর প্রকাশিত হত, সেটা কেটে চোখের সামনে রাখত। আমিও সে রকমটাই ভাবি। মানে আমার বিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে যাই লেখা হোক খবর কাগজ বা ডিজিটাল মাধ্যমে, এতটা জায়গা তো আমায় দেওয়া হচ্ছে! এটাই অনেক।
প্রশ্ন: তা হলে মনখারাপ হয় না?
মধুমিতা: তা কেন? আমি মনখারাপ হলে ১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে পড়তাম আগে। এখন ওই বিষয়টা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। প্রচুর কাজ করি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy