Leela Naidu, Indian film actress who spent a lonely life dgtl
Entertainment news
সরোজিনী নায়ডুর আত্মীয়, প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া এই বলি নায়িকার শেষ জীবন কেটেছে অর্থকষ্টে, নিঃসঙ্গতায়
এমন বিলাসবহুল জীবন যাঁর ছায়াসঙ্গী ছিল, সেই লীলা নায়ডুর শেষ জীবন কেটেছে খুবই কষ্টের মধ্যে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নায়ডুর আত্মীয়, প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া...। তবে এত কিছুর পাশে লীলা নায়ডুর আলাদা একটা পরিচয়ও রয়েছে। তিনি এক সময়ের বহুল চর্চিত বলি অভিনেত্রী। (এই প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশের সময় ভুলবশত লীলা নায়ডুকে সরোজিনী নায়ডুর ভাইঝি বলা হয়েছিল। এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)
০২১৮
জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। তাঁর পড়াশোনা বিদেশের নামীদামি স্কুলে। এমন বিলাসবহুল জীবন যাঁর ছায়াসঙ্গী ছিল, সেই লীলা নায়ডুর শেষ জীবন কেটেছে খুবই কষ্টের মধ্যে। নিঃসঙ্গ অবস্থায় মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। সঞ্চিত অর্থ প্রায় কিছুই ছিল না। জীবনধারণের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে হয়েছিল।
০৩১৮
লীলা নায়ডুর জন্ম ১৯৪০ সালে বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বই)। বাবা পাত্তিপাতি রামাইয়া নায়ডু একজন নামজাদা নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী ছিলেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মেরি কুরীর সঙ্গে কাজও করেছেন তিনি। মা মার্থে ম্যাঙ্গে নায়ডু ছিলেন সাংবাদিক এবং ভারতবিদ। তিনি ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক।
০৪১৮
পরপর সাতবার গর্ভপাত হওয়ার পর বাবা-মার একমাত্র জীবিত সন্তান ছিলেন লীলা। তাই তিনি অনেক আদর-যত্নে মানুষ হন। জন্মের পর অনেক ছোট বয়সেই লীলা বাবা-মার সঙ্গে ইউরোপে চলে যান। জেনেভার নামকরা স্কুলে তাঁর পড়াশোনা।
০৫১৮
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল লীলার। ইউরোপে জিন রেনোয়ের কাছে তিনি অভিনয়ে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর ভারতে ফিরে এসে ১৯৬২ সালে ডেবিউ ফিল্ম ‘অনুরাধা’। বক্স অফিসে সাফল্য মেলেনি, তবে লীলা নায়ডুর অভিনয় ভীষণ প্রশংসিত হয়েছিল। এই ফিল্ম জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিল।
০৬১৮
এর পর তিনি অশোক কুমারের বিপরীতে ‘উম্মিদ’ ছবিতে অভিনয় করেন। তারপর ‘ইয়ে রাস্তা হ্যায় প্যায়ার কে’, ‘দ্য হাউসহোল্ড’-এ অভিনয় করেন। ‘দ্য হাউসহোল্ড’-এ তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান সত্যজিৎ রায়। শোনা যায়, লীলা নায়ডুকে নিয়ে একটি ছবির প্লট সাজিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তাতে মার্লন ব্র্যান্ডো এবং শশী কপূরেরও অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু সেই ছবিটা আর করা হয়নি সত্যজিতের।
০৭১৮
১৯৬৪ সালের ‘বাঘি’ ছবি করার পর দীর্ঘ বিরতি গিয়েছে তাঁর কেরিয়ারে। তারপর ১৯৬৯ সালে তাকে ‘গুরু’ ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসাবে দেখা গিয়েছিল লীলাকে। ১৯৮৫ সালে তিনি ‘ত্রিকাল’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ১৯৯২ সালে ‘ইলেক্ট্রিক মুন’ ছিল তাঁর শেষ অভিনীত ছবি।
০৮১৮
শোনা যায়, লীলা নায়ডুর অভিনয় এবং রূপে রাজ কপূর এতটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে, বারবার তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। আর বারবারই ব্যস্ত থাকায় রাজ কপূরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লীলা। লীলার সঙ্গে অভিনয়ের ইচ্ছাটা রাজ কপূরের অপূর্ণই রয়ে গিয়েছিল।
০৯১৮
চলার পথে লীলা নায়ডুর জীবনের মোড় বদলেছে বারবার। ১৯৫৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিলক রাজ ওবেরয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী তিলকের বয়স তখন ৩৩ বছর। এই অসমবয়সি প্রেম এবং বিয়ে নিয়ে যদিও উভয় পরিবারে কোনও আপত্তি ছিল না। ওবেরয় হোটেল ব্যবসায়ী বাড়ির বৌমা হয়েছিলেন তিনি।
১০১৮
কিন্তু তাঁর প্রথম ভালবাসা বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যেই লীলার দুই যমজ কন্যা সন্তান হয়, মায়া এবং প্রিয়া। তার কয়েক বছর পরই তিলক-লীলার সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। দু’জনের ডিভোর্স হয়ে যায়। আইনত দুই মেয়ের দায়িত্ব নেন তাঁর স্বামী।
১১১৮
এর পর ১৯৬৯-এ তাঁর জীবনে দ্বিতীয় প্রেম মুম্বইয়ের কবি দোম মরিয়স। ওই বছরই দু’জনে বিয়ে করেন। দোমের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন লীলা। ভোগ ম্যাগাজিনের বিশ্ব সুন্দরীদের তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে লীলা নায়ডুর ছবি ছাপা হয়েছিল। সেই ছবি দেখেই লীলার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন কবি।
১২১৮
এর পর অনেকটা সময় কেরিয়ার থেকে দূরে ছিলেন লীলা। স্বামীর সঙ্গে হংকং, নিউ ইয়র্ক কখনও নয়াদিল্লি, মুম্বইয়ে কাটিয়েছেন। ২৫ বছর একসঙ্গে থাকার পর তাঁদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। কিন্তু এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা মেনে নিতে পারেননি লীলা।
১৩১৮
নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে শুরু করেন তিনি। মুম্বইয়ের কোলাবায় ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর দেখভালের জন্য ছিলেন একজন মাত্র পরিচারক।
১৪১৮
এরপর লন্ডনে জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তি একজন দার্শনিক ও সুবক্তা ছিলেন। জিদ্দুর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে লীলা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
১৫১৮
কিন্তু তারপরও তাঁর নিঃসঙ্গতা কাটেনি। কোলাবার পুরনো ফ্ল্যাটেই বাকি জীবনটা কাটিয়েছেন। তবে দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনিদের খোঁজখবর নিতেন মাঝে মধ্যেই।
১৬১৮
ঘরের ভিতরে একপ্রকার নিজেকে বন্দি করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পরিচারক মাঝে মধ্যে গিয়ে শুধু তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। শেষের দিকে খুব অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। আর্থ্র্রারাইটিসের জেরে চলাফেরাও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
১৭১৮
অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া রাখতে হয়েছিল তাঁকে। সেই ভাড়ার টাকাতেই তাঁর খরচ চলত।
১৮১৮
২০০৮ সালে তিনি খবর পান, তাঁর মেয়ে প্রিয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, তারপর মানসিক ভাবে যেন আরও ভেঙে পড়েছিলেন। শেষে ৬৯ বছর বয়সে ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।