লতা মঙ্গেশকর।
নব্বই ছুঁই ছুঁই জীবনেও তিনি নবীনা। লতা মঙ্গেশকর। আজ কেমন আছেন তিনি? হোয়াটস্অ্যাপে তাঁর শেষ রেকর্ডিং-এর গুজব নিয়ে এই প্রথম আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মুখ খুললেন ‘লতা মঙ্গেশকর মিউজিক কোম্পানি’র অধিকর্তা, সুরকার ময়ূরেশ পাই।
হোয়াটস্অ্যাপে লতাজিকে নিয়ে গুজব বন্ধ হোক!
ওর সামনে থাকা, সঙ্গে থাকা মানেই এক আকাশ পজিটিভ এনার্জির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।লতা মঙ্গেশকর।
কোনও অন্যায় সমালোচনা, প্রচার ওঁকে ছুঁতে পারে না।
এই যেমন বেশ কিছু দিন ধরে হোয়াটস্অ্যাপে লতাজির একটা গান ঘুরছে। আমরা তো হোয়াটস্অ্যাপকে ভগবান ভাবি। সেখানে বলা হচ্ছে এটাই লতাজির শেষ গান! এই মিথ্যে গুজব এ বার বন্ধ হোক। আশা করি আনন্দবাজার ডিজিটাল এই গুজব থামাতে সাহায্য করবে।
২০১৩-তে যে মরাঠি গান হোয়াটস্অ্যাপে লতাজির শেষ রেকর্ড করা গান বলে ঘুরছিল সেটা আদপে ওঁর শেষ গান নয়। এর পরেও ২০১৪-এ ‘সুরধ্বনি’ অ্যালবামের একটি গান সলিল চৌধুরির কথায় আর আমার সুরে লতাজির গাওয়া। অন্যটি দেবপ্রসাদ চক্রবর্তীর কথায় আর নিজেরই সুরে লতাজির গাওয়া।
লতাজির প্রথম রেকর্ডিং অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন
এই প্রসঙ্গেই বলি, এ বছর লতাজির গান রেকর্ডের ছিয়াত্তর বছর। ভাবলে শিউরে উঠি। ১৯৪২-এ প্রথম রেকর্ড, সে বছর অমিতাভ বচ্চন জন্মালেন! ভাবা যায়?
লতাজি এই জীবনে যত গান রেকর্ড করেছেন তত সংখ্যক গানের বয়স অবধি আমরা যেতে পারিনি। আজও কথা বললে মনে হয়, একুশ বছরের গলা শুনছি।
রেকর্ডিং প্রসঙ্গে কিছু কথা বলি। যখন উনি ফ্লোরে ঢোকেন ওঁর অ্যাপিয়ারেন্স দেখার মতো। হয়তো বললাম চেয়ারে বসে রেকর্ডিং করতে যাতে ওঁর সুবিধে হয়। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘‘ময়ূরেশ, চেয়ারে বসে আজ অবধি কোনও গান রেকর্ড করিনি। গাইতে হলে দাঁড়িয়ে গাইতে হয়।’’
আরও পড়ুন, অনসূয়া আর কনীনিকার ঝামেলা মেটাতে এলেন ঋতুপর্ণা!
রেকর্ডিং শুরু। চলল প্রায় তিন-চার ঘণ্টা। দেখলাম, কয়েকটা ছোট জায়গায় কারেকশন আছে। দিদিকে বললাম, ‘‘আপনি লাঞ্চ করে নিন, তারপর আমরা কারেকশনগুলো ঠিক করে নেব।’’ শুনে বললেন, ‘‘যে দিন রেকর্ডিং থাকে আমি তো সে দিন কিছু খাই না। ভরপেটে রেকর্ডিং হয় নাকি! স্রেফ চায়ে পিতি হুঁ। তুমি আমার জন্য পারলে আধ বাটি স্যুপ আনিয়ে দাও।’’
লতাজিকে এই ছোট ছোট ঘটনা দিয়েই চেনা যায়...
লতাজি নতুন বাংলা গান রেকর্ড করবেন
আর এই যে সমস্ত মানুষ অকারণ রটিয়ে বেড়াচ্ছে, এটা ওর শেষ গান তাদের জন্য বলি। লতাজি খুব শিগগিরি হিন্দি গানের রেকর্ডিং করবেন। আর উনি সবসময় বাংলার কথা ভাবেন। নিজেও এত ভাল বাংলা বলেন! রেকর্ডিং করবেন অথচ বাংলা গান করবেন না? তা হয় না। আমরা এখন ভাল কথার খোঁজে। ওঁর পছন্দ হলেই বাংলা গানের রেকর্ডিং শুরু হবে। ওঁকে দেখে এটুকু বুঝেছি যে বাংলার প্রতি ওঁর একটা অদম্য টান আছে।কথায় কথায় হেমন্তদা, কিশোরদা, গীতা দত্ত, সলিল চৌধুরীর কথা বলেন।
রেকর্ডিংয়ে শচীনদেব বর্মণ এবং রাহুলদেব বর্মণের সঙ্গে লতা।
সাবা লতাজির নতুন বেবি
এখন কেমন আছেন লতা মঙ্গেশকর?
লতাজি এখন ‘সাবা’-ময়। সম্প্রতি এক পোষ্য এসেছে ওঁর কাছে। ‘সাবা’, লতাজির ‘বেবি’।তার খাওয়া, স্নান, শোওয়া— এ সব নিয়ে এখন তিনি খুব ব্যস্ত। রাতে লতাজি আর সাবা একসঙ্গে শোয়।
সচিন লতাজিকে মা বলেন
ওঁর বাড়িতে যদি ঢোকেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন কী বলতে চাইছি। পুরো বাড়িতে সিনেমার নামগন্ধ নেই। কোনও সিনেমার গান বাজে না। সেক্রেটারির দাপাদাপি নেই। শুধু এক দিকে অল্প ভলিউমে ভজন শুনতে পাবেন। আর সারা বাড়ি জুড়ে রয়েছে দারুণ পারফিউমের গন্ধ। তবে গোটা বাড়িতে কোনও দেখনদারি নেই। এর পর তিনি নিজেই এসে দেখা করবেন। অসম্ভব নম্রভাবে কথা বলবেন। জানতে চাইবেন আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্বন্ধে। তারপর যদি তাঁর পছন্দ হয়, তবেই তিনি আপনার গান রেকর্ডিং করবেন।
ক্রিকেট দিদির প্রাণ। সচিন ওঁকে ‘মা’বলে ডাকেন।
আরও পড়ুন, ‘জবা’র সঙ্গে পল্লবীর জীবনের কোথায় মিল?
ছোটবেলায় পয়সা ছিল না কিন্তু আনন্দ ছিল
এত রেকর্ডিং, লাইভ পারফরম্যান্স, বিশ্বে এত নাম ডাক। মিহি সুরেলা কণ্ঠ! ওঁর কাছে জানতে চেয়েছি এই ম্যাজিকের রহস্য কী?
উনি খুব অনায়াসে বলেছেন, ‘‘কাজটাকেই আসলে আমার ধ্যানজ্ঞান করে রেখেছি। তার বাইরে কোনও কিছুতে জড়াইনি। সেই ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। জীবনে প্রথম যখন বাবার সঙ্গে মঞ্চে উঠি, আমার বয়স তখন নয়। ফিল্মে নামি তেরো বছর বয়সে। বহুত তকলিফ উঠায়ি হ্যয় ম্যয়নে। বাবার একটা নট্টকোম্পানি ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আমরা চলে এলাম পুণে। বাবা মারা গেলেন। পয়সাও সংসারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ল। কাজে মনপ্রাণ বসিয়ে দিতে হল। কিন্তু তাতে কখনও দুঃখ পাইনি। আমরা পরিবারের সবাই হাসিমুখেই থাকতাম। ঈশ্বরের বিশাল স্নেহধন্য আসলে আমি।’’
লতার সঙ্গে সুরকার ময়ূরেশ পাই।
মীরা, বিবেকানন্দ আর ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ
এই জন্যই তিনি সরস্বতী! সুর সম্রাজ্ঞী!
মীরা, বিবেকানন্দ, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, আর ওঁর বাবা লতাজির জীবনের আদর্শ।বলেছিলেন একবার, ‘‘আমার জীবন চিনতে গেলে মীরার ভজন শুনো। খুঁজে পাবে আমায়।’’
সময় দ্রুত বদলেছে ওঁর সামনে দিয়ে। কিন্তু লতাজি সময়ের সঙ্গে চলেন। প্রচন্ড টেক স্যাভি। হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার সব দেখেন। আজ ইউটিউবে একটা গান গায় লোকে আর সাধারণ মানুষের ফোন তোলে না। একটু কাজ করলেই কি অহঙ্কার সকলের! মাটিতে পা পড়ে না। এত বছর ধরে দেখছি ওঁকে, কোনও অহঙ্কার নেই।উল্টে বলেন, ‘হম কভি বদলেঙ্গে নেহি। সিম্পল অউর ন্যাচরাল রহো।’
অনেক কষ্ট করে যারা ওঠে তারা বদলায় না
বুঝিয়ে দেন সুন্দর করে। বলেন, ‘‘যাঁরা অনেক কষ্ট করে, অনেক বাধা, জড় কাটিয়ে তাঁর মঞ্জিলে পৌঁছন, তাঁরা বদলান না। চড়াই বেয়ে উঠেও আমি আমার সংস্কার আর অনুশাসনগুলো ভুলিনি। গানের ভেতরে অনেক বড় অনুশাসন আছে। সেটা চিনে নিতে হবে। অনেককে দেখেছি একটু বড় হলেই তাদের মাথা ঘুরে যায়। আর মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না। খাটাখাটনি ছেড়ে দেয়। এটা ভুল!’’
জীবন শেখা যায় ওঁর কাছে। প্রলোভন আর ভোগবাদের যুগে সহজ থাকার শিক্ষা ওঁর কাছ থেকেই পাওয়া।
তিনি লতা মঙ্গেশকর, সরস্বতীর মানবী রূপ!
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy