Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Mrinal Sen-Ritwik Ghatak

গীতা সেনকে লেখা সুরমা ঘটকের চিঠি প্রকাশ্যে, সৌজন্যে মৃণাল-পুত্র কুণাল, কী রয়েছে সেখানে?

মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল মধুর। মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনকে চিঠি লিখেছিলেন ঋত্বিক-পত্নী সুরমা ঘটক। সেই চিঠি প্রকাশ্যে আনলেন মৃণাল-পুত্র কুণাল সেন।

Mrinal sen and Ritwik Ghatak

পরিচালক মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটকের পরিবারিক সুসম্পর্কের টুকরো স্মৃতি প্রকাশ্যে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ১৪:০২
Share: Save:

১৪ মে ছিল পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী। বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে অনেকে উদ্যোগী হয়েছেন। যে কোনও পেশায় কৃতী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সমকালীন ব্যক্তিত্বদের ‘প্রতিযোগিতা’র কথা নতুন নয়। এই নিয়ে বিভিন্ন আখ্যানও রয়েছে। কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিজীবনের গতিপথ কি শুধুই প্রতিযোগিতার নিক্তিতেই মাপা হয়? সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটকের নাম। দুই পরিচালকের সহধর্মিণীদের পারস্পরিক সুসম্পর্কের এক টুকরো ইতিহাস প্রকাশ্যে আনলেন মৃণাল-পুত্র কুণাল সেন।

শুক্রবার সমাজমাধ্যমে একটি চিঠি পোস্ট করেছেন কুণাল। সেই চিঠিটি মৃণালের স্ত্রী গীতা সেনকে লিখেছিলেন ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটক। এর আগে বিভিন্ন সময়ে মৃণাল সেন সম্পর্কিত একাধিক ছবি এবং দুষ্প্রাপ্য নথি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন কুণাল। ঋত্বিক-অনুরাগীদের কাছে তা নিঃসন্দেহে বাড়তি পাওনা। এই চিঠিটি ভাগ করে নিয়ে কুণাল লিখেছেন, ‘‘আমার মায়ের একটা পুরনো ব্যাগ ঘাঁটতে গিয়ে একটা ছেঁড়া চিঠি হাতে এল। চিঠিটা ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটকের লেখা, আমার মাকে। মা যত্ন করে নিজের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলেন। ঠিক কবে লেখা আমার জানা নেই। ভাবলাম হয়তো অন্যদের দেখতে ভাল লাগবে।’’

হলদে মলিন সেই চিঠির উপরেই ছাপার অক্ষরে সুরমা ঘটকের নাম এবং ঠিকানা। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র পরিচালকের কোনও এক জন্মদিন উপলক্ষে চিঠিটি লিখেছিলেন সুরমা। তবে চিঠিতে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই। সুরমা লিখছেন, ‘‘গীতা, আজ মৃণাল সেনের জন্মদিন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন মৃণালবাবুকে জানাচ্ছি।’’ এরই সঙ্গে ঋত্বিক-পত্নী লিখেছেন, ‘‘মৃণালবাবু একটা যুগের প্রতীক, একটা স্বপ্ন নিয়ে, কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন জীবনের পথে— এর পর সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের পাতায় মৃণাল সেন নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে ও থাকবে।’’

এর পর সুরমা তিন পরিচালক অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে কিছু শব্দ খরচ করেছেন। তাঁর লেখা চিঠিতে পড়া যাচ্ছে, ‘‘সত্যজিতের পরে মৃণাল ও ঋত্বিক, বা ঋত্বিক ও মৃণাল শব্দ দু’টি সব সময়েই একসঙ্গে উচ্চারিত হয়।’’

১৯৭৬ সালে প্রয়াত হন ঋত্বিক ঘটক। পরিচালকের প্রয়াণের পর তাঁর পরিবারের প্রতি মৃণাল সেনের দৃঢ় সমর্থনের কথাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সুরমা। তিনি লিখেছেন, ‘‘মৃণালবাবু সব সমসেয়ই আমার প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল।’’ এরই সঙ্গে স্মৃতি হাতড়ে চিঠিতে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন সুরমা। তাঁর লেখা বলছে, ‘‘মনে পড়ে, আমাকে শ্মশান থেকে উনি বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। ছিলে তুমি এবং অনুপকুমার— পরে বেলা ও নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি। সবাই মিলে সে দিন আমাকে উদ্ধার করে দিয়েছিলে।’’

এই প্রসঙ্গেই আরও একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন সুরমা। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি চাকরি পেয়ে যোগদান করার আগের দিন ছিল ধর্মঘট। মৃণাল সেন স্কুলে ফোন করে জানিয়ে দেন, আমি পর দিন সকালের ট্রেনে গিয়ে ১২টার মধ্যে যোগদান করব।’’ এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই সমাজমাধ্যমে দুই পরিচালকের অনুরাগীরা নস্টালজিক হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে অনুরাগীদের একাংশ এই চিঠিকে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘সময়ের মূল্যবান দলিল’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। সুরমা তাঁর চিঠি শেষ করেছেন এই ভাবে— ‘‘একটা যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের মধ্যেই তো মানুষ বেঁচে থাকে। আন্তরিক ভালবাসা তোমাকে। ইতি, লক্ষ্মী।’’

অন্য বিষয়গুলি:

mrinal sen Ritwik Ghatak Directors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy