উত্তমকুমারের বাড়িতে মঙ্গলবারেই লক্ষ্মী আরাধনা
রত্না বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তমকুমারের ভাইঝি। ওঁর কাছে উত্তমকুমার ‘ভালকাকু’। আর তিনি? উত্তমকুমারের আদরের ‘মাঈ’! ছোট থেকে তিনি দেখে এসেছেন, লক্ষ্মীপুজো থেকে ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানে বাড়ির সবাই থাকবেন। আনন্দ করবেন। কোমর বেঁধে কাজ করবেন। এটাই তাঁর ‘ভালকাকু’ চেয়ে এসেছেন বরাবর। সেই রীতি-রেওয়াজ আজও অমলিন।
যে আসনে বসে উত্তমকুমার, পরে তরুণকুমার দেবীর আরাধনা করতেন সেই আসনে এখন বসেন নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। এ বছর দু’দিন ধরে লক্ষ্মীপুজোর উদযাপন। ভবানীপুরে দেবীর আরাধনা হচ্ছে মঙ্গলবার। সন্ধে থেকেই পরিবারের সবাই পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। নবমিতা, উত্তম-পুত্র গৌতমের দুই স্ত্রী, ভাইঝি, নাতবৌ সবাই হাতে হাতে জোগাড় করছেন। কেউ পদ্মের পাপড়ি খুলছেন। কেউ দিচ্ছেন আলপনা। এ বছর দেবলীনা কুমারের বিয়ের পর প্রথম লক্ষ্মীপুজো। সকাল থেকেই তিনি আজ সাজসজ্জায় যেন জ্যান্ত লক্ষ্মী। রানিরঙা সিল্কের শাড়ি। সিঁথি ঢেকেছে সিঁদুরে। মানানসই গয়নায় সালঙ্কারা উত্তমকুমারের নাতবৌ। দেবলীনার বাপের বাড়িতেও বড় আকারে পুজো হয়। খবর, অভিনেত্রী দশভুজার মতোই এক সঙ্গে সামলাচ্ছেন দুই বাড়ির পুজোর সমস্ত আয়োজন।
এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রত্না দেবী জানিয়েছিলেন, উত্তমকুমারের বাড়ির পুজো মানেই এই লক্ষ্মীপুজো। মহানায়ক ধুমধাম করে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন বাড়িতে প্রতিমা এনে পুজো করতেন। কেন করতেন? তাঁর অনুরাগীরা জানেন না। মহানায়কের ভাইঝি তাঁর মায়ের কাছে শুনেছিলেন, তাঁর কাকুর দেবীদর্শন হয়েছিল। পুজোর কিছু আগে ছাদে একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলেন। বাড়িতে তখন মেয়ে বলতে একমাত্র রত্না। কাকু তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বৌদি মাঈ ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে। পড়ে যাবে। ওকে দেখো।’’ মা বলেছিলেন, "মাঈ তো ঘুমোচ্ছে!" শুনে কাকু অবাক।
এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই পরের ঘটনা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দু’দিন আগে থেকে রোজ একটি লক্ষ্মী প্যাঁচা উত্তমকুমারের বাড়িতে আসতে আরম্ভ করল। দেখতে দেখতে তাঁর নাম, যশ, অর্থ বেড়ে চার গুণ। সেই থেকে তাঁর বাড়িতে ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো শুরু। বাড়িতে তৈরি মিষ্টি দিয়ে মায়ের পুজো হবে, এই ইচ্ছে থেকে ‘ভালকাকু’ ভিয়েন বসাতেন। সেখানে গরম গরম পান্তুয়া তৈরি হত। কাকু ডেকে ডেকে সেই পান্তুয়া খাওয়াতেন বাড়ির সবাইকে।
লক্ষ্মীপুজোর রাতে ছোটদের বড় প্রাপ্তি উত্তমকুমারের ছবি দেখতে পাওয়া। বড় স্ক্রিন টানিয়ে ‘ভাল কাকু’ সবাইকে ওঁর অভিনীত দু'টি ছবি দেখাতেন। তখন প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার অনুমতি পেতেন না কেউ। ওই একটি দিন কারওর, কোনও ব্যাপারে নিষেধ নেই। সব থেকে মজার কথা, ছবি দেখতে দেখতে বাড়ির বড়রাই ভুলে যেতেন, উত্তমকুমার তাঁদের পরিজন। জনপ্রিয় দৃশ্য বা গান শুরু হলে তাঁরাই ‘গুরু গুরু’ বলে চেঁচিয়ে উঠতেন। বিষয়টি কিন্তু দারুণ উপভোগ করতেন মহানায়ক। হেসে ফেলতেন পরিবারে লোকজনদের অবস্থা দেখে।
পুজোর পরের দিন উত্তমকুমার সবাইকে মাছ খাওয়াতেন। ওই দিন রুপোলি পর্দার সব তারকা জড়ো হতেন মহানায়কের বাড়িতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy