Jimmy Sheirgill is considered as one of the underrated actors in Bollywood dgtl
Jimmy Sheirgill
ধর্মাচরণ না করায় ক্ষুব্ধ পরিবার, নায়িকা এবং জনপ্রিয়তা অধরাই থাকল জিমি শেরগিলের কাছে
পিসতুতো দাদার কথায় তিনি ঠিক করেন, অভিনয়কেই নিজের পেশা করবেন। সঞ্জয় দত্ত এবং সানি দেওলের ছবির ভক্ত ছিলেন জিমি। তাঁর বাবা সত্যজিৎ সিংহ শেরগিলের শখ ছিল ছবি আঁকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ১২:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সুদর্শন এবং সুঅভিনেতা। ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন সিকি দশক আগে। কিন্তু এখনও দেখলে মনে হয়, তাঁর বয়স থমকে আছে একই জায়গায়। সেই সঙ্গে থেমে আছে পরিচিতি এবং খ্যাতিও। যোগ্যতার তুলনায় ইন্ডাস্ট্রির থেকে প্রাপ্তির ভাঁড়ার যাঁদের নামমাত্র, তাঁদের মধ্যে অন্যতম জিমি শেরগিল।
০২২০
উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের সর্দারনগর গ্রামে এক অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম। সম্পন্ন এই পরিবারে কয়েক প্রজন্মের জমিদারি ছিল। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, ভারতীয় ও হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত অমৃতা শেরগিল ছিলেন তাঁর বাবার পিসি।
০৩২০
জন্মের পরে তাঁর নামকরণ হয়েছিল যশজিৎ সিংহ। প্রাথমিক পড়াশোনা লখনউয়ের মিশনারি স্কুলে। তার পর তিনি চলে যান তাঁদের আদি ভূমি পঞ্জাবে। বাকি স্কুল ও কলেজজীবন কেটেছিল পঞ্জাবেই। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পরে তিনি মুম্বই পাড়ি দেন।
০৪২০
পিসতুতো দাদার কথায় তিনি ঠিক করেন, অভিনয়কেই নিজের পেশা করবেন। সঞ্জয় দত্ত এবং সানি দেওলের ছবির ভক্ত ছিলেন জিমি। তাঁর বাবা সত্যজিৎ সিংহ শেরগিলের শখ ছিল ছবি আঁকা।
০৫২০
জিমি ঠিক করলেন অভিনেতাই হবেন। মুম্বই এসে প্রথমে অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নেন। পরিবারে অভিনয়ের কোনও ধারা না থাকলেও জিমি স্বপ্ন দেখতে লাগলেন ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরেই।
০৬২০
মুম্বইয়ে এসে যশজিৎ থেকে তিনি হয়ে যান ‘জিমি’। তার আগে জন্মের পর থেকে ১৮ বছর বয়স অবধি তিনি শিখ ধর্মের রীতি মেনে লম্বা চুল রাখতেন। পাগড়ি পরতেন। কিন্তু তার পর সেই রীতি অনুসরণ করা বন্ধ করে দেন। এর ফলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা টানা দেড় বছর কথা বলেননি তাঁর সঙ্গে।
০৭২০
১৯৯৪-এ মুম্বই এসে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন জিমি। তাঁর বাবা এবং পরিবারের বাকি সবাই নিশ্চিত ছিলেন টিনসেল টাউনের পরিশ্রম বেশি দিন সহ্য করতে পারবেন না। এক দিন ঠিক ফিরে যাবেন বাড়িতে।
০৮২০
কিন্তু তাঁদের ভুল প্রমাণ করেন জিমি। তবে মুম্বইয়ে স্ট্রাগল করার দিনগুলিতে প্রতিষ্ঠিত পরিবারের অর্থসাহায্য পেতে তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি। এক দিন বন্ধুদের কাছে তিনি খবর পেলেন, গুলজার একটি ছবি তৈরি করবেন। তার জন্য কলাকুশলী খুঁজছেন।
০৯২০
জিমি দেখা করলেন গুলজারের সঙ্গে। অভিনেতা হিসেবে নয়, কাজ চাইলেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। গুলজারের কথায় পরিচালনা থেকে অভিনেতা হওয়ার দিকে মন দেন জিমি। তাঁর চেহারা এবং মার্জিত ও পরিশীলিত হিন্দি উচ্চারণে গুলজার মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি ‘মাচিস’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন জিমিকে।
১০২০
১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় ‘মাচিস’। ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যান জিমি। এই ছবির সুবাদে তিনি ‘মহব্বতেঁ’ ছবিতে কাজের সুযোগ পান। প্রথম ছবিতে গুলজারের মতো নামী পরিচালক। দ্বিতীয় ছবিতে যশরাজ ফিল্মসের মতো বড় ব্যানার। কেরিয়ারের শুরুটা জিমি করেছিলেন উল্কাগতিতে।
১১২০
এর পর যশরাজের আরও একটি ছবি ‘মেরে ইয়ার কি শাদি’-তে অভিনয় করেন জিমি। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এ এক ক্যানসার-রোগীর ভূমিকাতেও তাঁর অভিনয় সবার মনে দাগ কেটে যায়।
১২২০
এক দিক থেকে বলিউডের বাকি নায়কের থেকে অন্য রকম ছিলেন জিমি। কেরিয়ারের শুরুতে সাধারণত অভিনেতারা বিয়ে করা থেকে দূরেই থাকেন। ভয় পান নায়কোচিত ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার। জিমি অবশ্য সে পথে হাঁটেননি।
১৩২০
পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর ভাল লেগেছিল এক তরুণীকে। প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা নামের ওই তরুণীর সৌন্দর্যে। ২০০১-এ তাঁকে বিয়ে করেন জিমি। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম বীর।
১৪২০
‘লগে রহো মুন্নাভাই’, ‘একলব্য’, ‘দশ কহানিয়াঁ’, ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘এ ওয়েডনেসডে’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’, ‘হ্যাপি ফির ভাগ যায়গি’-র মতো ছবিতে জিমির অভিনয় প্রশংসিত হয়।
১৫২০
কিন্তু তার পরেও প্রত্যাশিত লক্ষ্য অধরাই থেকে গিয়েছে। সুপারহিট নায়ক হতে পারেননি তিনি। খুশি থাকতে হয়েছে বহু তারকাখচিত ছবির একটি অংশ হয়েই। হিন্দির পাশাপাশি জিমি কাজ করেছেন পঞ্জাবি ছবিতেও।
১৬২০
২০১৭-এ জিমি শেরগিল অভিনয় করেছিলেন ‘বীরে কি ওয়েডিং’ ছবিতে। ওই একই সময়ে অনিল কপূর প্রোডাকশনের ছবি ‘বীরে দি ওয়েডিং’-এর কাজও চলছিল। দু’টি ছবির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল একই সময়ে। কিন্তু প্রায় একইরকম নামের কারণে বিভ্রান্তি হচ্ছিল।
১৭২০
এই নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন অনিল। তিনি দাবি করেন, জিমির ছবির নাম পাল্টাতে হবে। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, নাম এক হলেও ছবির বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ আলাদা। তা ছাড়া দু’টি ছবির মুক্তির মধ্যেও এক বছরের ব্যবধান আছে। ফলে নাম নিয়ে আর কোনও সমস্যা হয়নি।
১৮২০
জিমির ফিল্মোগ্রাফি খেয়াল করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ ছবিতেই নায়িকা তাঁর কাছে অধরা রয়ে যান। চিত্রনাট্য অনুযায়ী ছবির শেষে নায়িকা তাঁকে ছেড়ে চলে যান। ফলে দর্শকদের একটা অন্যরকম অনুভূতি আছে তাঁর ক্ষেত্রে।
১৯২০
প্রায় ২৩ বছর ধরে কেরিয়ারে আছেন জিমি। কিন্তু এখনও অবধি কোনও বিতর্কে তাঁর নাম জড়ায়নি। কোনও নায়িকাকে নিয়ে শোনা যায়নি মুচমুচে গুঞ্জন। বলিউডে যৎসামান্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নায়কদের মধ্যে তিনি এক জন।
২০২০
অনেকের মতে, তাঁর এই নিপাট ভালমানুষ ভাবমূর্তিই জনপ্রিয়তার পথে অন্তরায় হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত চাকচিক্য থেকে দূরেই থাকতে হয়েছে তাঁকে। আবার ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে এও শোনা যায়, অভিনয় ভাল হলেও জিমি শেরগিলের জনসংযোগ, বলিউডের পরিচিত ভাষায় ‘পি আর’ নাকি দুর্বল। ফলে সব রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে প্রাপ্য জনপ্রিয়তা থেকে।