আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট ডিআইজি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: পুলিশ মানেই যেন কাটখোট্টা, তিনি অভিনয়েও অনায়াস কী করে?
প্রসূন: তিনটি উপাদান থাকলে হয়তো এটা সম্ভব। প্যাশন, দক্ষতা, সময় বের করে নেওয়া। কোনও কিছুর প্রতি প্যাশন থাকলে আপনি নিজের তাগিদে সেই কাজে কিছুটা উন্নতি করবেন। বাকিটা দক্ষতা। ধরুন, কাজটি আপনি ভাল জানেন। কোনও কারণে হয়তো তার থেকে দূরে। আবার সেই কাজ শুরু করলেও কিন্তু সফল হবেন। ছোট থেকেই মঞ্চে অভিনয় করছি। ছবি নিয়ে পড়াশোনা করছি অনবরত। জানি, এই কাজটি আমি পারি, ভালওবাসি। ফলে, প্রশাসনের কারণে দূরত্ব বাড়লেও অভিনয় ভুলিনি। তাই হয়তো অনায়াসেই এই কাজে আবারও ফিরতে পেরেছি। আমি যেমন পরিচালনা, লেখালিখি, ছবি তোলা, এ সবেও আগ্রহী। সময় বের করে নিতে পারি বলেই হয়তো এত কিছু করতে পারি। আবার এটাও ঠিক, আমি যত ভাল অভিনেতা ততটাও নিজেকে মেলে ধরতে এখনও পারছি না। কারণ, প্রশাসনিক কাজ। আমি ওই কাজেও ফাঁকি দিতে পারব না।
প্রশ্ন: আদর্শ শিল্পীর এত গুণ থাকা সত্ত্বেও আপনি প্রশাসনে! আর্থিক নিরাপত্তার কারণে?
প্রসূন: কেউ নিজেই জীবন গড়েন। কারও জীবন উপরওয়ালা গড়ে দেন। আমার ক্ষেত্রে, জীবন আমায় খুঁজে নিয়েছে। এটাই ভবিতব্য। এক জীবনে দুটো দিক সামলাচ্ছি। প্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ, অভিনয়। দুটো দিক থেকেই প্রচুর ভালবাসা পাচ্ছি। যখন বানভাসি এলাকায় গিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জীবন বাঁচাই বা অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি তাঁরা দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন। ভালবাসেন। প্রশাসনিক পোশাক অনেক কিছু শিখিয়েছে। এই পাওয়াগুলো দুর্মূল্য। তেমনই অভিনয় দেখে যখন সবাই প্রশংসা করেন বা আমার লেখা ছোট গল্প পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তারও আলাদা তৃপ্তি। আমার জীবন নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: ৬ বছর বয়স থেকে মঞ্চ চেনেন, এখন ইন্ডাস্ট্রিকেও চিনছেন! কল্পনার সঙ্গে মিলছে?
প্রসূন: সত্যি বলব? এই টেলিপাড়া, অভিনয় দুনিয়া আমার জীবনে দক্ষিণের বারান্দা। সেখান থেকে আসা টাটকা বাতাসে ফুসফুস ভরি। গতানুগতিক পেশা দুনিয়াটা বড্ড ভারী। নিয়মে বাঁধা। আমি আমার উপরমহলকে ভয় পাই। অধস্তন আমায়। এক এক সময় দম আটকে আসে। ইন্ডাস্ট্রিতে যেই পা রাখি তখনই আমি প্রসূনদা। সবাই জোরে জোরে এ ভাবেই ডাকেন। কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। কত গল্প শুনি। আমি ইন্ডাস্ট্রির প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
প্রশ্ন: একই ভাবে ধারাবাহিক ‘দেশের মাটি’র ‘অভিমন্যু’র প্রেমেও যে দর্শকেরা পড়লেন!
প্রসূন: ‘অভিমন্যু’ চরিত্রটাই যে এমন। যার জীবনে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছে। ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত। যদিও সেই যন্ত্রণা সে লুকিয়ে রাখে। আমার উপলব্ধি, মহিলা দর্শকেরা এই ধনের চরিত্রকে মনে মনে ভালবেসে ফেলেন। সেটাই হয়েছে। আমার বদলে অন্য কেউ চরিত্রটিতে অভিনয় করলেও একই ফল হত। এই চরিত্রগুলো গাছের ডাল ধরে ঝোলে না। ফুরফুরে প্রেমও করে না। বরং ভীষণ গভীর। এর তো আলাদা আকর্ষণ থাকবেই। কৃতিত্বের সিংহভাগ তাই লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের। ওঁর অন্যতম প্রিয় চরিত্র এটি। প্রচুর স্তর রয়েছে। বারেবারে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আলোচনা করেছি আমরা। বুঝতে বুঝতে অভিনয় করেছি। চরিত্র জীবন্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যদি ৫০ শতাংশ কৃতিত্বের দাবিদার হন বাকি কৃতিত্ব কি মঞ্চাভিনেতা এবং ‘ব্যক্তি’ প্রসূনের যন্ত্রণার?
প্রসূন: (এ বার গলা ছেড়ে হাসি) আপনি তো দেখছি যখন-তখন যে কাউকে বিপদে ফেলে দেবেন! (একটু থেমে) আমার জীবনেও অবশ্যই নানা ঘাত-প্রতিঘাত আছে। নানা ‘ব্যথা’ও আছে হয়তো। সে সবের কিছু হয়তো প্রতিফলন ঘটেছে। আসলে, জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার পরে মধ্যবয়সী এক পুরুষ সব দিক থেকে সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। সেটা তার সেরা সময়। অতীত ফিরে দেখার সময় তাই তার চোখের তারায় হালকা অহঙ্কার হয়তো ঝলসে ওঠে। সেই আলোয় সে আগামিকে দেখার চেষ্টা করে। ‘অভিমন্যু’ সেই বয়সের প্রতিনিধি। তাই হয়তো মনে হয়েছে, আমিই ‘অভিমন্যু’!
প্রশ্ন: এই ‘চরিত্র’ সেই সময় বহু নারীর ঘুম কেড়েছিল! আপনার ঘুম কখনও, কোনও নারী কাড়েনি?
প্রসূন: (খোলা গলায় হাসি) সব সত্যি কি বলা যায়? আমায় অনেক বার প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেমন নারী আপনার পছন্দ? আমি সেই উত্তরটাই বরং আবার দিই। সত্যজিৎ রায়ের ‘জন অরণ্য’র শর্মিলা ঠাকুর আর ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’র ‘নীতা’কে আমার খুব পছন্দ। শর্মিলা ছবি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্য জিইয়ে রাখলেন। এই অধরা নারীর আকর্ষণই আলাদা। আর দিনের শেষে যে কোনও পুরুষ শান্তির আশ্রয় খোঁজে। ‘নীতা’ সেই নিরাপদ আশ্রয়। দুটো গুণ এক নারীর মধ্যে মিশলে বেশ হয়।
প্রশ্ন: ললিত মোদী-সুস্মিতা সেনের প্রেম নিয়ে কী বলবেন?
প্রসূন: সুস্মিতা সেন ৮-১০টি প্রেম করেছেন, বিভিন্ন খবরের কাগজে পড়েছি। তিনিও সত্যজিৎ রায়ের ছবির নায়িকার মতোই অধরা। এটাই সুস্মিতা। সেই তিনি ললিত মোদীর প্রেমে! কোথাও যেন ধাক্কা খেয়েছি। ললিত ধনী। প্রাক্তন আইপিএল কর্তা। তা বলে সুস্মিতার প্রেমিক! মানতে কষ্ট হচ্ছে। সুস্মিতা সাদা চুলের নাসিরুদ্দিন শাহ-র প্রেমে পড়তেই পারতেন। মানাত তাঁকে। ললিত বোধহয় তাঁর জন্য নয়।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক উঠতি মডেল-অভিনেত্রীর আত্মহত্যার খবরে প্রসূনের কোন সত্তা সজাগ? প্রশাসনিক না অভিনেতা?
প্রসূন: প্রশাসনিক প্রসূন এখানে কোথাও নেই। সবটা জুড়ে শুধুই অভিনেতা প্রসূন। এই প্রসূন খবরগুলো শুনে খুব ব্যথা পেয়েছে। মনে করেছে, সহ-অভিনেতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আসলে এই প্রজন্ম এক্ষুণি সব পেতে চান। বোঝেন না, ২৪-এ না পেলে ৩৪-এও পেতে পারেন। অত ধৈর্যই নেই কারওর। ফলে, এই ধরনের অঘটন।
প্রশ্ন: পেশাসূত্রে আপনি রাজনীতিবিদ, অভিনেতা উভয়কেই কাছ থেকে দেখেছেন, কারা ভাল অভিনয় করেন?
প্রসূন: জানি, রাজনীতিবিদদের নিয়ে জনগণের অনেক প্রশ্ন। আমি দেখেছি, ওঁদের ‘অ্যাসিড টেস্ট’ দিয়ে এই পেশায় আসতে হয়। ওঁরা কিন্তু অভিনয় করেন না। ওঁদের পেশায় যেটা করা উচিত সেটাই করেন। কত লক্ষ জনগণের দায় ওঁদের কাঁধে বলুন তো? অভিনেতারাই অভিনয় করেন। কারণ, এটাই ওঁদের পেশা।
প্রশ্ন: ‘অভিমন্যু’ বড় পর্দায় আসবেন না?
প্রসূন: সম্ভবত খুব শিগগিরিই আসছি। প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থা, পরিচালকের ছবিতে। এর বেশি আর কিছু এখন বলতে পারব না।
প্রশ্ন: নতুন আর কী করছেন?
প্রসূন: আমার লেখা একটি রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প নিয়ে ওয়েব সিরিজ পরিচালনার কথা ভাবছি। সেখানে আমি ভীষণ নিষ্ঠুর, অন্ধ। এক সংবাদপত্রের মালিক। বাকি চরিত্রের জন্য অভিনেতা বাছছি।
প্রশ্ন: কখনও রোম্যান্টিক চরিত্রে অভিনয় করলে নায়িকা কে হবেন?
প্রসূন: আমি কি রোম্যান্টিক চরিত্র পারব? আদৌ মানাবে? জানি না। তবে সুযোগ পেলে অবশ্যই করব। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে দারুণ লাগে। ভীষণ ধারালো। নিজের নায়িকা বাছার অনুমতি বোধহয় পাব না। পেলে আমার নায়িকা স্বস্তিকা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy