আবার বাংলা ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী।
সাল ২০১৭-র পরে সাল ২০২২। মিঠুন চক্রবর্তী আবার বাংলা ছবিতে। না, ‘এমএলএ ফাটাকেস্ট’ নন। দেব অধিকারীর ‘বাবা’ ‘প্রজাপতি’র মতো উড়ছেন! কেমন বাবা তিনি? ছেলেই বা কেমন? প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরীর আগামী ছবির শ্যুটের অবসরে প্রথম আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় ‘মহাগুরু’।
প্রশ্ন: চার বছর পরে আবার বাংলা ছবিতে...
মিঠুন: হ্যাঁ, এখন অনেক বেছে ছবি করছি। খুব ভাল গল্প না হলে আর ‘হ্যাঁ’ বলি না। মুঠো মুঠো ছবি করতে আর ভালও লাগে না। ৩৭০-এর উপরে ছবি করে ফেলেছি।
প্রশ্ন: টলিউড অনেক বদলে গিয়েছে?
মিঠুন: কিচ্ছু বদলায়নি। কিচ্ছু বদলায়ও না। বাংলা ছবির গল্প বদলাতে আরম্ভ করেছে। আমার ছবির কথাই ধরুন। ‘প্রজাপতি’র গল্প কী মিষ্টি! অভিজিৎ সেন যেমন ভাল পরিচালক তেমনি ভাল কাহিনিকার। একদম অন্য স্বাদের। ওই জন্যই রাজি হয়েছি। বাবা-ছেলের সম্পর্কের কথা থাকবে। মিষ্টি প্রেমও থাকবে। বাংলা ছবি যেমন হয়। সবার মন জয় করবে, কাজ করতে করতেই বুঝতে পারছি।
প্রশ্ন: পর্দায় দেব কেমন ছেলে? আপনিই বা কেমন বাবা?
মিঠুন: টক-ঝাল চানাচুর খেয়েছেন তো? পর্দায় মিঠুন চক্রবর্তী আর দেব অধিকারী তেমনই বাবা-ছেলে। চরিত্রের খাতিরে দেব একটু দুষ্টু। বদমায়েশি করে। মিষ্টিও। বাস্তবে যদিও খুবই ভাল। ওর মতো ছেলে হয় না। পর্দায় আমিও ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুষ্টুমি করব। নইলে সামলাতে পারব না তো! আমার বাইরে শক্ত আবরণ। ভিতরে ভিতরে ছেলের জন্য সারা ক্ষণ প্রাণ কাঁদে। বাবা-ছেলের সম্পর্কের মধ্যেই টুক করে প্রেম ঢুকে পড়বে। দর্শকেরা শেষ পর্যন্ত না দেখে উঠতে পারবেন না।
প্রশ্ন: ‘মৃগয়া’র ৪৬ বছর পরে আবার মিঠুন-মমতাশঙ্কর, প্রিয় ‘মম’ একই আছে?
মিঠুন: এখনও ওর সঙ্গে শ্যুট শুরু হয়নি। দেখাও হয়নি। তবে আমার বিশ্বাস, আমার ‘মম’ বদলাতেই পারে না। একই আছে। আমার কাছে ও আজও শুধুই ‘মম’। খুব ভাল বন্ধু আমরা। অভিনয় প্রতিভাতেও ভাটা পড়েনি নিশ্চয়ই। ভীষণ শক্তিশালী অভিনেত্রী। খুব স্বাভাবিক অভিনয় করে। আশা, এত বছর পরে কাজ করে সেই প্রথম বারের মতোই আনন্দ পাব।
প্রশ্ন: মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি মানেই ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’র মতো সংলাপ, ‘প্রজাপতি’তেও তেমন সংলাপ থাকবে?
মিঠুন: (হেসে ফেলে) দর্শক তেমনই কিছু শুনতে পাবেন। ছোট ছোট মিষ্টি কিছু সংলাপ আছে আমার মুখে। দর্শকদের পছন্দ হবে। তবে ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’ বা ‘তুফান’-এর সংলাপের সঙ্গে মিল নেই। ওগুলো অন্য রকম ছিল। এই ছবির সংলাপ অন্য রকম। (হাসতে হাসতে) জোরালো সংলাপ ছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী হয়?
প্রশ্ন: বাংলা ছবির নতুন ধারা কি ‘তারকা’র জন্ম দিচ্ছে? আগে আপনাদের নামে টিকিট ব্ল্যাক হত। এখন অভিনেতা প্রচুর। তারকা মাত্র তিন জন— প্রসেনজিৎ, জিৎ, দেব...
মিঠুন: যাঁদের নাম বললেন তাঁরা সত্যিই ভাল কাজ করছেন। দেখুন, তারকার জন্ম দিতে গেলে বড় বাজেটের, বড় মাপের ছবি বানাতে হবে। প্রতিযোগিতায় নামতে গেলে প্রতিযোগীকেও তো চিনতে হবে। কেবল বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা হলে বাংলা ছবি কোথাও আটকে থাকবে। দক্ষিণের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে খরচের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বলিউডকে হলিউডের মাপে ছবি করতে হবে। যদিও বলা খুব সোজা। টলিউডের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বলব, বাংলা কিন্তু লড়ে যাচ্ছে। নিজেদের মতো করে ভাল করার চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন: এই কারণেই দক্ষিণের কাছে বাংলা এবং বলিউড তুলনায় পিছিয়ে?
মিঠুন: এটুকু বলতে পারি, ওরা অনেক বড় মাপের ছবি বানায়। ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। প্রচুর ব্যবসাও দিচ্ছে। তবে ছবির ক্ষেত্রে আগাম তো বলা যায় না, কোনটা লেগে যাবে। নিশ্চয়ই বাংলা ছবিরও ভাল সময় আসবে। দুর্ধর্ষ ব্যবসা করবে। যেমন, একটা সময় আমার প্রত্যেকটা ছবি ব্লকবাস্টার হিট হত। পরপর সুবর্ণজয়ন্তীর মুখ দেখত।
প্রশ্ন: ছোট পর্দার বিচারক দেব, অভিনেতা দেব আর প্রযোজক দেবের মধ্যে কি আকাশপাতাল ফারাক?
মিঠুন: আমি প্রযোজক দেবকে সবার প্রথমে রাখব। এখনও পর্যন্ত ঠিকঠিক পারিশ্রমিক দিচ্ছে (হো হো হাসি)। সঙ্গে অতনু রায়চৌধুরী, প্রণববাবুও রয়েছেন। ওঁরা সবাই খুব ভাল, ভদ্র। কোনও অসুবিধে হতে দিচ্ছেন না। দু’দিন কাজ হয়ে গেল। আমি কিন্তু উপভোগ করতে করতে কাজটা করছি।
প্রশ্ন: বাংলার বহু অভিনেতা বলিউডে চুটিয়ে কাজ করছেন, প্রচণ্ড জনপ্রিয়ও, কিন্তু কেউ তাঁরা আপনার মতো বলিউডের ‘দাদা’ নন! কেন?
মিঠুন: এর পিছনে একটা মানুষের জীবনের ইতিহাস আছে। লড়াই আছে। রক্ত জল করা পরিশ্রম আছে। চোখের জল আছে। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা আছে। অকথ্য অপমান আছে। মস্ত বড় গল্প। আর এক দিন বলব।
প্রশ্ন: ‘ডিস্কো ডান্সার’ বা ‘ডান্স ডান্স’-এর মতো শুধু নাচ নিয়ে আর কোনও ছবি হয় না! কেন?
মিঠুন: হয়নি কারণ, আমার নাচটাই ছিল অন্য ধরনের। আমি ঘরানা তৈরি করে নিয়েছিলাম। নাচের ধারা বদলে দিয়েছিলাম। আমার স্টাইল আজও অননুকরণীয়। হৃতিক রোশন খুব ভাল নাচে। কিন্তু ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘ডান্স ডান্স’ ‘কসম পয়দা করনেওয়ালি কি’র মতো শুধু নাচ-নির্ভর ছবিতে অভিনয়ের সাহস কেবল আমিই দেখাতে পেরেছিলাম। এখন কেউ ঝুঁকিও নেবেন না। ঈশ্বর পাশে ছিলেন। আমি ইতিহাস হওয়ার ছিলাম। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: পরিচালনায় আসবেন?
মিঠুন: সুযোগ পেলে অবশ্যই আসব। (তার পরেই মজার সুরে) প্রযোজকদের আমায় নিয়ে অনেক ভাবনা। কেউ ভাবেন, কাজ শুরু করে শেষ করবেন তো! হয়তো আর ডেট দেবেন না। পিছনে চলে যাবেন। কেউ আগাম পয়সা গুনতে বসেন! ভাবেন, মিঠুন চক্রবর্তী পরিচালক মানেই তো প্রথম দিন থেকেই প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল বোর্ড ঝুলবে।
প্রশ্ন: আর প্রেম? মিঠুন চক্রবর্তী আগের মতোই প্রেমে পড়েন?
মিঠুন: এখন আমি অন্য ভাবে প্রেম করি। (একটু থমকে) আপনি কি আমায় মার খাওয়ানোর ফন্দি আঁটছেন? ছবি নিয়ে কথা হতে হতে হঠাৎ প্রেম! উঁহু, এই নিয়ে আর কিচ্ছু বলব না।
প্রশ্ন: অভিনেতাদের পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ বেশি না রাজনীতিতে?
মিঠুন: (হেসে ফেলে) দুষ্টু প্রশ্ন! কিছুতেই উত্তর দেব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy