পয়লা বৈশাখ ‘দীপা’র জন্মদিন, আবার সে দিনই লাবণ্য সেনগুপ্ত পালন করতেন তাঁর প্রসাধনী ব্র্যান্ডের জন্মদিবস। মুখোমুখি সংঘাত দিয়েই শুরু হয়েছিল ‘অনুরাগের ছোঁয়া’। তিন বছর পেরিয়ে আবার সেই নববর্ষেই নতুন মোড় ঘুরছে। পরিবার, নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে এমন এক শুভ দিনেই কি দীপা রক্তস্নান করবে? দর্শক যখন টানটান পর্বের অপেক্ষায়, তখন পর্দার দীপা যেন প্রহর গুনছে বাস্তবে। নতুন প্রেমের পদধ্বনি! আনন্দবাজার ডট কম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানালেন স্বস্তিকা ঘোষ।
প্রশ্ন: কী হবে নববর্ষের শুভ দিনে?
স্বস্তিকা: কী হবে সেটাই তো দেখার। তবে দীপা যা করে তার সবটাই পরিবারের ভালর জন্য। প্রথম থেকেই চরিত্রটা এ রকম, তার কোনও উচ্চাশা নেই। নিজেকে ভাল রাখার প্রয়াস নেই। সে ভাল রাখতে চায় ভালাবাসার মানুষগুলোকে। সে জন্য সব করতে পারে দীপা। কিন্তু কোনও অন্যায় আজ পর্যন্ত করেনি। কেউ ভাবতেই পারে না দীপা একজন মানুষকে খুন করতে পারে।
প্রশ্ন: এর আগে তো মিশকাকে খুন করতে গিয়েছিল?
স্বস্তিকা: না, খুন করতে দীপা চায়নি। শাস্তি দিতে চেয়েছিল। ভয় দেখতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: এখন তো মিশকা নেই, কুমার নেই, নতুন শত্রু রুডি?
স্বস্তিকা: সে রকমই দেখানো হচ্ছে। তবে কুমার প্রত্যক্ষ ভাবে না থাকলেও, একেবারে নেই, সেটা এখনই বলা যায় না। রুডি আপাতত যেমন ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে আগামী কয়েক দিনে ভালই বেগ পেতে হবে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সেনগুপ্ত পরিবারকে।

প্রশ্ন: মিশকা তো দীপাকে গত তিন বছর ধরে জ্বালাচ্ছে, স্বস্তি নেই। বাস্তবে অহনা (দাস) সম্পর্কে স্বস্তিকার মনোভাব কেমন?
স্বস্তিকা: আমরা খুব ভাল বন্ধু। অহনা আমাদের অনুপ্রেরণা। কাজের প্রতি ওর দারুণ নিষ্ঠা। আপাতত ছুটিতে আছে ব্যক্তিগত কারণে। শীঘ্রই মা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু দিন আগেও আমরা শুটিং করেছি। অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেছে। অহনা খুবই ভালবেসে কাজ করে। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’য় ওর চরিত্রটা ও রকম না হলে হয়তো শেষ পর্যন্ত কাজ করে যেত।
প্রশ্ন: অহনা তো সমাজমধ্যমে খুব সক্রিয়, স্বস্তিকা নয়, স্বস্তিকাকে নিয়ে আলোচনা কম। খারাপ লাগে না? মনে হয় না প্রাধান্য কম পাচ্ছে দীপা?
স্বস্তিকা: একেবারেই না। প্রথমত, আমি যখন এই কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম, সেটা নিয়েই খুব আনন্দে ছিলাম। কখনওই মনে হয়নি আমার চেহারাটা পর্দায় কেমন দেখানো হচ্ছে। একদিনও মনে হয়নি, এ বাবা মানুষ তো আসল স্বস্তিকাকে চিনতেই পারবে না। এ সব নিয়ে আমি ভাবতেই পারি না।
একই ভাবে, আমি চাই-ই না, আমার খুব ব্যক্তিগত বিষয় সমাজমধ্যমে তুলে ধরতে। হ্যাঁ, নিজের কাজের প্রচার সবাই চায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার মনে হয়নি একটা ভ্লগ করি।

প্রশ্ন: ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ এক কালো মেয়ের গল্প। এখন আবার সে দু’টি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের মা। এত অল্প বয়সে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছ, এর পর কী হবে? মায়ের তকমা গায়ে লেগে যাবে না তো?
স্বস্তিকা: তেমন মনে হলে প্রথমেই মনে হত, যখন ছোট্ট সোনা-রূপা এল। আমি জানি না পরে কী হবে। এত কিছু ভেবে দেখিনি। দেখতেও চাই না। শুধু জানি, যদি অভিনয়টা ভালবেসে মন দিয়ে করতে পারি তা হলে সব ঠিক হবে।
প্রশ্ন: এটাই তো প্রথম কাজ?
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, প্রথম। তাই সব কিছু ইতিবাচক ভাবে নিতে চাই। আমি যখন অডিশন দিয়েছিলাম, নতুন-পুরনো অনেকে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আমি নির্বাচিত হয়েছি, এটাই তো অনেক। ভাবতেই পারিনি আমি এই সুযোগ পাব। তার পর ধীরে ধীরে মানুষের ভালবাসা পেয়েছি, পরিচিতি পেয়েছি। কত মানুষের কাজ নেই হাতে, আমাদের ধারাবাহিকটি তিন বছর চলছে, এ-ও তো কম কথা নয়। তাই ইতিবাচক ভাবে চাই।
প্রশ্ন: আর প্রেম? দীর্ঘ দিন ধরেই তো কানাঘুষো চলছে, সেখানেও কি ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে?

প্রিয় পোষ্যের সঙ্গে অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
স্বস্তিকা: কত মানুষ কত কথা বলেন। তবে আমি অপেক্ষায় আছি। যে দিন উল্টো দিকের মানুষটির তরফ থেকে সম্মতিসূচক ইঙ্গিত পাব, সকলকে জানাব।
প্রশ্ন: ও, তার মানে নতুন বছরে নতুন খবরের প্রত্যাশা রয়েছে?
স্বস্তিকা: আমি লুকোচুরিতে বিশ্বাসী নই, তেমন হলে আমি নিজেই জানাব সকলকে। তবে আজকাল একটু ভেবেচিন্তে প্রেম করতে হয়, যা দিনকাল!
প্রশ্ন: দীপার কাছে তো পরিবারই প্রথম, স্বস্তিকা কি পারে এত ব্যস্ততা সামলে পরিবারকে সময় দিতে?
স্বস্তিকা: একেবারেই পারি না। কাজের চাপে বাবা, মা, ভাইবোনের সঙ্গে দেখা হওয়াই মুশকিল হয়ে হচ্ছে।
প্রশ্ন: বাড়িতে কে কে আছেন?
স্বস্তিকা: বাবা, মা, দিদি, ভাই আর আমার প্রিয় পোষ্য।
প্রশ্ন: স্বস্তিকার প্রিয় পোশাক, প্রিয় খাবার কী?
স্বস্তিকা: আমি দীপার মতো ভারতীয় পোশাকেই বেশি স্বচ্ছন্দ। শাড়ি পরতে খুব ভালবাসি। তবে পশ্চিমি পোশাকও পরি। খিচুড়ি খেতে খুব ভালবাসি, আর মায়ের হাতের যে কোনও রান্না।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: নববর্ষে বিশেষ কী খাওয়াচ্ছেন মা?
স্বস্তিকা: জানি না, কোনও বিশেষ পরিকল্পনা নেই। কাজের খুব চাপ থাকবে। তবে শুটিংয়ে আমি বাড়ির খাবার খাই। মা পাঠিয়ে দেয়। ফলে পয়লা বৈশাখও মা কিছু না কিছু পাঠাবেই।
প্রশ্ন: পয়লা বৈশাখেও ছুটি পাওয়া যায়নি?
স্বস্তিকা: না, এই তো মহাপর্ব দেখা যাবে তার শুটিং চলছে।
প্রশ্ন: এক সময় টিআরপি তালিকায় প্রথম নাম থাকত ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র। মাঝখানে স্থানচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলা বছরের শেষ সপ্তাহে ফের অষ্টম স্থানে ধারাবাহিক। কেন এত জনপ্রিয়তা?
স্বস্তিকা: গল্পটাই তো শুরু হয়েছিল অন্য ভাবে। দর্শক হয়তো ওই সারল্যটা পছন্দ করেছিলেন। মাঝখানে অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, ভাল লাগছে না। এ বার বন্ধ হয়ে যাক এই ধারাবাহিকটি। আমি তাদের বলেছিলাম, দর্শক যদি আর না দেখেন তা হলে সত্যিই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বস্তিকার কী ভাবনাচিন্তা?
স্বস্তিকা: উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। অভিনয়ের জন্য ছেড়েছি। ইচ্ছে আছে পরে নাচ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার।