Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
SAREGAMAPA

লোকগান গাইলে সেরা হওয়া যায় না? পারলে সারেগামাপা-র পুরস্কার ফিরিয়ে দিতাম: অর্কদীপ

অর্কদীপ মিশ্রের ভাষায়, রাতারাতি তিনি জনপ্রিয়, কুখ্যাতও। কী করে সামলাচ্ছেন সবটা? 

জয় সরকারের সঙ্গে অর্কদীপ মিশ্র

জয় সরকারের সঙ্গে অর্কদীপ মিশ্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ১২:১৯
Share: Save:

অর্কদীপ মিশ্রের ভাষায়, রাতারাতি তিনি জনপ্রিয়, কুখ্যাতও। কী করে সামলাচ্ছেন সবটা? আদতে খেলাপাগল ছেলে কী ভাবে গানপাগল হয়ে উঠলেন? শঙ্কর মহাদেবন, শিবমণির সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া জি বাংলা ‘সারেগামাপা’র এ বারের ‘সেরা’ গায়ক সমস্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে।

প্রশ্ন: রাতারাতি নাম-যশ-অর্থ-খ্যাতি। কেমন লাগছে?

অর্কদীপ: ভালই লাগছে। বেশ ভাল। খ্যাতির সঙ্গে কু-খ্যাতিও জুটেছে রাতারাতি (হাসি)।

প্রশ্ন: কুখ্যাতি কিসের? দর্শক-শ্রোতাদের আপনার কোনটা নিয়ে আপত্তি?

অর্কদীপ: আমার লোকগান গাওয়া নিয়ে বেশ কিছু মানুষের আপত্তি রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, শুধুই লোকগীতি গেয়ে কী ভাবে সেরা হলাম? কারণ, তাঁদের মতে লোকগান নাকি আলাদা করে শিখতে হয় না। খুবই সহজ ব্যাপার! আমি নাকি আমার ‘কমফর্ট জোন’ থেকেই বেরোইনি! অথচ শো বলছে, আমি কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, অমিত ত্রিবেদী, শাহরুখ খান অভিনীত ছবির গান সহ নানা ধারার গান গেয়েছি। তার পরেও শুনতে হচ্ছে, আমি নাকি এক ধারার গান গেয়ে এই সম্মান পেয়েছি। আমার পাতায় গেলেই দেখতে পাবেন আমার গান, গায়কির সমালোচনার পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: খ্যাতির বিড়ম্বনা টের পাচ্ছেন?

অর্কদীপ: সমালোচনা ভাল। সমালোচনা দরকারও। সারাক্ষণ 'ভাল' শোনাটাও ভাল নয়। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত বিষয় বা মা-বাবা তুলে খারাপ মন্তব্য করেন কেউ, গায়ে লাগে। এটাও ঠিক, আমরাই কত সময় বাড়িতে মাংস-ভাত খেতে খেতে সচিন তেণ্ডুলকরের খেলার সমালোচনা করি। এটাই জীবন। এগুলো নিয়েই চলতে হবে এখন থেকে। তবে আমার দিক থেকে আমি খুবই পরিষ্কার। ফাঁকি দিয়ে এই সম্মান পাইনি। বিচারকেরা এই বিশেষ সম্মান জানিয়েছেন। তাকে অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই। তবে এখন মনে হচ্ছে, ক্ষমতা থাকলে এই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়াই শ্রেয় ছিল।

প্রশ্ন: জীবনটা কঠিন হয়ে গেল?

অর্কদীপ: একেবারেই না। এখন আমায় লোকে চেনেন। আমি কিছু বলতে চাইলে তাঁরা শুনবেনও। কিন্তু যখন আমার এই পরিচিতি ছিল না, তখনও স্বাধীন ভাবে কাজ করেছি। আমার একটি ব্যান্ড রয়েছে, ‘দ্য ফোক ডায়েরি’। মুম্বইয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের রিয়েলিটি শো করেছি। জাতীয় স্তরের একটি রিয়েলিটি শো-তেও অংশ নিয়েছি। তখন লড়াই বেশি শক্ত ছিল।

প্রশ্ন: ২০১৯-এর ‘সেরা’ অঙ্কিতা ভট্টাচার্যও আপনার মতোই শহরতলির...

অর্কদীপ: (হেসে ফেলে) হ্যাঁ, ও গোবরডাঙার। সবাই বলছেন, শহরতলিরই জয়জয়কার। ভাল লাগছে। চেনা মানুষদের এই ভালবাসাই মনের জোর বাড়াচ্ছে। এবং অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব জি বাংলা, টিম ‘সারেগামাপা’-কে। এ বারের শো-এ আমরা প্রত্যেকে ভীষণ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। অতিমারির সঙ্গে যুঝতে হয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিযোগী আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনেকেই খুব প্রিয় মানুষদের হারিয়ে ফেলেছেন। সেই সব যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়ে আমাদের শো করতে হয়েছে।

প্রশ্ন: শঙ্কর মহাদেবন, শিবমণিকে মুগ্ধ করলেন কী ভাবে?

অর্কদীপ: মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সত্যিই অত কিছু ভাবিনি। পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছিল। প্রত্যেক বারের মতো গ্র্যান্ড ফিনালের দিনেও নিজেকে বার বার বুঝিয়েছি, এটাই আমার শেষ বার মঞ্চে উঠে গান গাওয়া। সুতরাং সেরাটা দিতে হবে। প্রতিযোগিতায় জিততে পারব কিনা, তাই নিয়ে একটুও মাথা ঘামাইনি। হয়ত সেটাই ক্লিক করে গিয়েছে। আমি শুরু থেকে শুধুই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই আজ সবাই যখন বিরোধিতা করছেন, বেশি খারাপ লাগছে।

প্রশ্ন: ২ আন্তর্জাতিক তারকার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার ভাল স্মৃতি নিশ্চয়ই আছে?

অর্কদীপ: গান শেষ হতেই শঙ্কর মহাদেবন উঠে দাঁড়িয়ে পর পর ৪টি সিটি দিয়েছিলেন। ‘ওয়ান্স মোর’ বলে আসন ছেড়ে উঠে এসে আমার সঙ্গে গাইলেন। ‘স্বাধীন সঙ্গীত’ নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিলেন। শিবমণি মা-কে ডেকে নিয়েছিলেন মঞ্চে। বার বার বলেছেন, মা-বাবার কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে মানি। কারণ, ওঁদের সহায়তাতেই আমি আজ এই জায়গায়।

প্রশ্ন: মা সেতার বাদক। বাবা মঞ্চাভিনেতা?

অর্কদীপ: হ্যাঁ। আমিও আমাদের দল ‘সেমন্তী নৈহাটি’ নাট্য সংস্থার অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। রূপঙ্কর বাগচীর ‘কৃষ্টি পটুয়া’র ‘জেহাদ’ নাটকে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করেছি। পাশাপাশি, মা-বাবার আগ্রহেই গানের দুনিয়ায়।

মিকা সিংহের সঙ্গে অর্কদীপ মিশ্র

মিকা সিংহের সঙ্গে অর্কদীপ মিশ্র

প্রশ্ন: না হলে আজ ব্যাট হাতে ময়দানে ৪, ৬ হাঁকাতেন?

অর্কদীপ: (হেসে ফেলে) আমার দাবাড়ু হওয়ারও ইচ্ছে ছিল। দাবা খেলতে পারি। তাই আগে গানে মন বসত না। ধীরে ধীরে অভ্যেস করতে করতে গান রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলায় একটুআধটু লেখালিখিও করতে পারি। অনেকেই জেনে অবাক হয়েছেন। আসলে আমার গায়কি, সাজপোশাক, গতিপ্রকৃতির সঙ্গে বাংলা-ই মানানসই। যদিও আমি রসায়নে স্নাতক। পরে লোকগীতিতে স্নাতকোত্তর পড়েছি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

প্রশ্ন: টানা ৬ মাস এক ছাদের নীচে এত জনের সঙ্গে থাকতে হয়েছে। জীবন কেমন ছিল?

অর্কদীপ: মঞ্চের গল্প আর মঞ্চের পিছনের গল্প একদম আলাদা। শো-এর আগের দিন হয়ত কেউ খুব অসুস্থ। সেই অসুস্থতা ঢেকে মঞ্চে গান গাইতে হয়েছে। তা ছাড়া, মহড়া দেওয়া এবং প্রশিক্ষণের পিছনেও সময় দিতে হয়। সেরাটা দিতে প্রচুর খাটতে হয় আমাদের। খুঁটিনাটি অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। শুরুতে আমরা এক ঘরে ২ জন করে থাকতাম। অতিমারির ভয়ে সারাক্ষণ বিধি-নিষেধ মানতাম। তার পরেও সতীর্থরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমারও সম্ভবত করোনা হয়েছিল। সম্ভবত বলছি তার কারণ, ওষুধ খেয়ে ১৭ দিন পরে যখন পরীক্ষা করিয়েছিলাম তখন ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল। তার মধ্যেও আমরা সবাই এক জোট ছিলাম।

প্রশ্ন: ঈর্ষা ছিল না?

অর্কদীপ: বিশ্বাস না করলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ছিল না। কারও গান কোনও দিন খারাপ হলে আমরা সবাই মনখারাপ করতাম। আদা জল খেয়ে লেগে পড়তাম পরের দিন ‘সেরা’টা ছিনিয়ে আনার জন্য। আমি কিছুতেই গানের লাইন মনে রাখতে পারতাম না। তাই গান মুখস্থ করতাম। আর আমার সতীর্থ অভিষেক নট্ট রোজ নিয়ম করে পড়া ধরার মতো মুখস্থ ধরত। ঈর্ষার জায়গাটাই ছিল না।

প্রশ্ন: আর কী কী প্রতিভা আছে আপনার, যা লোকে জানে না?

অর্কদীপ: অনেক কিছু। ভাল ক্রিকেটার, লোকের সমস্যার সমাধান করা, লেখালিখি, অভিনয়, মঞ্চের আবহ তৈরি করা-- সবটাই লোকচক্ষুর বাইরে।

প্রশ্ন: জীবনে প্রেম নেই? শিল্পী অর্কদীপের ক’জন প্রেমিকা?

অর্কদীপ: (লাজুক হেসে) এই মুহূর্তে স্পষ্ট করে কারও নাম বলা যাবে না। তবে যে ছিল বা আছে, সে-ই ভবিষ্যতে থাকবে। একাধিক নেই। কারণ, একাধিক বিশেষ বান্ধবী থাকলে তাদের সামলাতে গিয়ে আর শিল্প হবে না! তার মানে আবার এটাও নয় যে বিশেষ বান্ধবীর সঙ্গে অন্য বন্ধুরা থাকবে না। সবাই আছে যে যার মতো করে।

প্রশ্ন: বিচারকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল? ইমন আপনার ‘গুরু বোন’?

অর্কদীপ: শুধু ইমন চক্রবর্তী বা রূপঙ্কর বাগচী নন, সবার সঙ্গে আমি খুব মিশে গিয়েছিলাম। সবাই ভীষণ সাহায্য করতেন। রথিজিৎ ভট্টাচার্যের স্টুডিয়োয় গিয়ে অনেক রেকর্ডিং করেছি। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব?

প্রশ্ন: ওই জন্যেই নিন্দুকেরা আপনার জয় ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলছেন?

অর্কদীপ: লোকের মুখ তো আটকাতে পারি না। খারাপ লাগছে শুনে। আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সারাক্ষণ তাই গেম খেলায় ডুবে আছি।

অন্য বিষয়গুলি:

Joy Sarkar SAREGAMAPA Arkadeep Mishra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy