জয় সরকার।
এবার মুখ খুললেন স্বয়ং জয় সরকার। এবং তাঁর সুর যথেষ্ট আক্রমণাত্মক!। রবিবার রাতে জি বাংলার ‘সারেগামাপা’র ফলাফল বেরোনোর পর থেকেই তিনি খলনায়ক। মঙ্গলবার নিজের নেটমাধ্যমের পাতায় এসে সরাসরি দর্শক-শ্রোতাদের সব অভিযোগের জবাব দিলেন জয়। অকপটে স্বীকার করলেন, সোমবার অভিযোগ শুনে আক্ষরিক অর্থেই মুষড়ে পড়েছিলেন। পাশাপাশিই গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্রর স্বামীর বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘শো-এর শুরু থেকে ট্রোলিং শুরু হয়েছিল। সেই ট্রোলিংয়ের গ্র্যান্ড ফিনালে উদযাপিত হল সোমবার।’’ জয়ের দাবি, গানের এই রিয়েলিটি শো প্রচণ্ড জনপ্রিয় বলেই তা নিয়ে এত বিতর্ক।
রবিবার 'সারেগামাপা' প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অর্কদীপ মিশ্রকে সেরা ঘোষণার পর থেকেই জয়ের বিরুদ্ধে দর্শক-শ্রোতারা ক্ষুব্ধ। নেটমাধ্যমে সরাসরি লেখা হচ্ছে, জয় প্রতিযোগীদের থেকে ঘুষ নিয়েছেন। গান-বাজনা না শিখেই বিচারক হয়েছেন। তাই অর্কদীপের মতো শুধু লোকগানের শিল্পী সেরার শিরোপা পেলেন। বহু জন বলেছেন, আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই অনুষ্কা, নীহারিকা, বিদীপ্তা, জ্যোতির মতো প্রতিযোগীকে ছাপিয়ে গিয়েছেন অর্কদীপ। ওঁর এই সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাই নেই।
লোপামুদ্রা সোমবার জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নেটমাধ্যমে। এ বার জয় তাকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন।
জয় কথা শুরু করেন সকলের গানকে ভালবাসার প্রশংসা করে। তাঁর কথায়, ‘‘গানকে প্রচণ্ড ভালবাসলে তবে এই অনুভূতি আসে। এবং সেই অনুভূতির জোয়ারে ভেসে তাৎক্ষণিক কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও চলে আসে। যেটি সোমবার থেকে নেটমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, দর্শক-শ্রোতাদের এই ‘ভালবাসার ভর্ৎসনা’-কে তিনি মাথা পেতে নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন, গত ১০ বছর ধরে তিনি ওই রিয়েলিটি শো-এর সঙ্গে যুক্ত। তা হলে ১০ বছর ধরেই কি তিনি ঘুষ নিচ্ছেন? একই সঙ্গে সবিনয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনি গান-বাজনা সত্যিই জানেন না। জয়ের কথায়, ‘‘প্রয়াত আলি আকবর খাঁ-ও এক সময় বলেছিলেন সঙ্গীত সমুদ্রের মতো। এক জীবনে তাকে জানা অসম্ভব।’’ জয়ের মতে, তিনি নিজে অতিসাধারণ। তাই তাঁর পক্ষে মাত্র ৩০ বছরে গান-বাজনাকে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু এর পরেই তিনি নস্যাৎ করেছেন ‘পূর্বনির্ধারিত ফলাফল’-এর মতো অভিযোগ। জয়ের কথায়, দর্শক-শ্রোতাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় কোন নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতা হয়। জয় বলেছেন, ‘‘চিত্রনাট্য মেনে আমরা কিছু করেই থাকি । সেই করে থাকায় আমরা প্রতিযোগীদের নাম জানি। তাঁরা কী গাইছেন সেটা জানি। আর তাঁদের নামের পাশে নম্বর বসাই। স্কোর বোর্ডে নম্বর দিই।’’ পেশায় সুরকার এবং ওই রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক জয় বলেন, ওই টুকুই চিত্রনাট্যের আকারে তাঁর হাতে এসেছে। ফাইনালে রাউন্ডে যে চার জন উঠেছিলেন, তাঁদের বাইরেও এমন অনেক প্রতিযোগী ছিলেন, যাঁদের কণ্ঠ, গায়কি কান পেতে শোনার মতো। কিন্তু নিয়ম মেনে ফাইনালে ছয় থেকে চার জনই উঠবেন। সেখান থেকে ‘সেরা’ হবেন একজন।
তবে অভিযোগের জবাব দিতে দিতে এক সময় জয়কে অভিমানীও শুনিয়েছে। য়খন তিনি বলেছেন, ‘‘শো-এর বিচারকের আসনে বসা ছাড়াও আমি আরও একটি ভূমিকা পালন করি। শো শেষের পর এই নতুন শিল্পীদের জন্য নতুন গান তৈরি করি। যাতে ওঁরা সেই গান গেয়ে নিজেদের পরিচয় আরও উজ্জ্বল করতে পারেন।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, শোভন-কুশলের মতো গায়ক প্রথম ছবির গান গেয়েছেন তাঁরই সুরে। ‘তানসেনের তানপুরা’ সিরিজে জয়ের সুরে গাইতে শোনা গিয়েছে অস্মিতা, অরুণিতা, জীমূত এবং পিউকে। এ ভাবেই আগামী দিনে তিনি কাজ করছেন অদিতি মুন্সির সঙ্গে। সেখানে লোকগানই প্রাধান্য পাবে।
জয়ের অনুযোগ, ‘‘বহু নামী শিল্পী বিচারকের আসন অলঙ্কৃত করেছেন। তাঁরা কিন্তু আমার এই বিশেষ ভূমিকা পালন করেননি। এত দিন নীরবে কাজ করে এসেছি। মনে করেছি, এ ভাবেই ওঁদের পাশে থাকা উচিত। এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টা জানাতে বাধ্য হলাম।’’ লোকগান নিয়ে কিছু মানুষের অশ্রদ্ধার মনোভাবেরওও নিন্দা করেছেন জয়। বলেছেন, ‘‘মার্গসঙ্গীতের পরেই লোকগানের স্থান। এই ধারার গানে এত বৈচিত্র্য, যে এই ঘরানার শিল্পীদের আর অন্য কোনও দিকে যেতে হয় না। অর্কদীপ তাই লোকগান গেয়েই খুশি।’’
তবে নেটমাধ্যমে বক্তব্যের শেষে বিস্ফোরক জয়। এ বার তাঁর অভিযোগের পালা। জয়ের দাবি, শো শুরু হওয়া থেকে ‘ট্রোল’ তাঁর সঙ্গী। এক জন করে প্রতিযোগী বাদ গিয়েছেন। বিচারকেরা ট্রোলড হয়েছেন। জয়ের কথায়, ‘‘অমিত যখন বাদ পড়েছে, তখনও সবাই বলেছিলেন অবিচার হচ্ছে। দিন এগিয়েছে ট্রোল বেড়েছে। তারও তো গ্র্যান্ড ফিনালের দরকার ছিল! সেটাই উদযাপিত হল সোমবার।’’ সুরকারের আফসোস, ট্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে নেটাগরিকেরা যতটা ঐক্যবদ্ধ, ততটাই যদি বাংলা গানের ক্ষেত্রে হতেন, তা হলে সমস্ত এফ এম চ্যানেলে বাংলা বেসিক গান বাজত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy