অকপট অঞ্জনা।
ছোট-বড় পর্দা মিলিয়ে ঝুলিতে একমুঠো কাজ। বাকিদের মতো তিনিও কি তবে রাজনীতি থেকে দূরে? ভাইরাল জ্বরে কাবু অঞ্জনা বসু ফোনেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে অনর্গল...
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
অঞ্জনা: ভাইরাল জ্বলে কাবু! সর্দি-কাশি প্রচণ্ড। গলার অবস্থা খুবই খারাপ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। এ দিকে শ্যুট চলছে। তাই তড়িঘড়ি চিকিৎসকের কাছে এসেছি।
প্রশ্ন: কালার্স বাংলার ‘মন মানে না’-র পরে জি বাংলার ‘পিলু’ ধারাবাহিকেও আপনি?
অঞ্জনা: (অল্প হেসে) এক যুগ পরে জি বাংলায় ফিরলাম। আমার প্রথম কাজ এই চ্যানেলের ধারাবাহিক দিয়েই। তখন জি বাংলা জি আলফা ছিল। তার পরেও একটি ধারাবাহিক করেছিলাম। সেটা শেষ হওয়ার পরে টানা ১২ বছর আর কোনও কাজ নেই! আমি মুখিয়ে ছিলাম কবে আবার জি বাংলায় কাজ করব। অবশেষে শখ মিটতে চলেছে।
প্রশ্ন: কোনও বিরোধ?
অঞ্জনা: একেবারেই না। আসলে, স্টারের সঙ্গে একের পর এক ধারাবাহিকে জুড়ে গিয়েছিলাম। ওরাও তখন পরপর কাজ দিচ্ছিল। সব মিলিয়ে খাতায়কলমে না হলেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের চোখে অলিখিত ভাবে যেন আমি ওঁদেরই! তাই জি বাংলার সঙ্গে কাজ হয়ে উঠছিল না। মাঝে আড়াই বছর আমি অভিনয় থেকেই দূরে সরে গিয়েছিলাম। তখন শুধুই রাজনীতি, সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এ গুলোই দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণ হয়তো।
প্রশ্ন: ‘মন মানে না’-য় আপনি দাপুটে খলনায়িকা, ‘পিলু’-তেও তাই?
অঞ্জনা: এখন ছোট পর্দায় আমি মানেই ব্যক্তিত্বময়ী কর্ত্রী। জি বাংলার নতুন ধারাবাহিকের নাম শুনলেই বুঝবেন, ‘পিলু’ নামটা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগের নাম। আমার বাবা সঙ্গীত দুনিয়ার দিকপাল ব্যক্তিত্ব। তাঁর মেয়ে আমি। অতীতে গানের দুনিয়ায় আমারও অনায়াস গতিবিধি ছিল। বিয়ের পরে বিশেষ কারণে গান ছেড়েছি। বাবার প্রিয় ছাত্র অভিনেতা কৌশিক চক্রবর্তী আমার স্বামী। তিনিই বাবার অবর্তমানে তাঁর সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আসলে আমিই সব। প্রতিষ্ঠান থেকে সংসার, সবেতে আমিই শেষ কথা। চরিত্রে হয়তো কিছুটা নেতিবাচক দিক থাকবে। তবে সেটাও আভিজাত্যের মোড়কে। তবে গান কেন ছাড়লাম, সেটা বড় রহস্য। ওটা আপাতত রহস্যই থাক! (হাসি)
প্রশ্ন: গৌরব রায়চৌধুরী আপনার ছেলে, না মেঘা দে আপনার মেয়ে?
অঞ্জনা: দু'জনের এক জনও আমার কেউ নয়। আমার মেয়ে ইদিকা পাল। যিনি ‘রিমলি’ ধারাবাহিকে ‘রিমলি’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। গৌরব আমার স্বামীর প্রিয় ছাত্র। আমার ননদের ছেলে। ননদও খুবই ভাল গান গাইত। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে গান বন্ধ তারও। নানা সাংসারিক সমস্যায় জর্জরিত ননদ তার ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসারেই থাকে। ধারাবাহিকের পরিচালক ‘মিঠাই’, ‘রাসমণি’-খ্যাত রাজেন্দ্র প্রসাদ দাস। আমার অংশের শ্যুট সম্ভবত ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে শুরু হবে।
প্রশ্ন: আড়াই বছর পরে ফিরে কী দেখছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ওরা-আমরা’র বিভেদ আছে না মিটেছে?
অঞ্জনা: তার থেকেও আরও ভয়ানক অনুভূতি গ্রাস করেছে ইন্ডাস্ট্রিকে। কাজে নিরাপত্তার অভাব। শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকলেই কাজ থাকবে, সেই নিশ্চিন্ততাও আর নেই। এটা কিন্তু আগে ছিল না। সবাই সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শিল্পীদের থেকেও এই ভয় বেশি কলাকুশলীদের। কিন্তু কী কারণে? সত্যিই জানি না। তবে দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এই ভয়ের কাছে কিন্তু ‘ওরা-আমরা’র বিভেদ তুচ্ছ। আর বিভেদটাও বোধহয় এখন আর নেই। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ‘কিশমিশ’ ছবিতে দেব, আমি আর জুন মালিয়া অভিনয় করলাম। তিন জন তিন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী। আমরা কিন্তু মন খুলে নিজেদের দলের ভাল-মন্দ নিয়ে কথা বলেছি। কোনও অসুবিধে হয়নি। এটাই তো চাই! তবে বাকিদের থেকে একই ব্যবহার পাব কিনা জানি না। জানেনই তো, ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। যাঁরা কিছুই না তাঁদের হম্বিতম্বিই সার। যাঁরা আদতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ তাঁরা কিন্তু যথেষ্ট ভদ্র, সংযত।
প্রশ্ন: ‘কিশমিশ’-এও কি আপনিই সংসারের শেষ কথা?
অঞ্জনা: (আবার হাসি) এটার গল্প বেশ অন্য রকম। এখানে দেব কলেজ পড়ুয়া। রুক্মিণী মৈত্র ওঁর প্রেমিকা। আমি আর খরাজ মুখোপাধ্যায় দেবের মা-বাবা। ওদের সম্পর্কের পাশাপাশি বিশ্বনাথ-আমি-কমলদার সম্পর্কের কথাও বলবে ছবি। সেটা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে। সদ্য ডাবিং শেষ করেছি। আপাতত ব্যস্ত অনীক দত্তের অপরাজিত ছবি নিয়ে। ওখানে আমি ‘সর্বজয়া’ করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করছি।
প্রশ্ন: রাজনীতি করছেন না?
অঞ্জনা: করছি তো! অসুস্থতার জন্য এক্ষুণি পুরভোটের প্রচারে বেরোতে পারছি না। ইচ্ছে আছে, শেষবেলায় বেরোব। দেখা যাক। রাজনীতি থেকে দূরে থাকব, এমন কোনও চিন্তা আমার মাথায় নেই।
প্রশ্ন: এক সঙ্গে দু’দিক সামলাতে পারবেন?
অঞ্জনা: ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে কেন সব দিক সামলাতে পারব না?
প্রশ্ন: আপনি তা হলে ব্যতিক্রম, নির্বাচনে পরাজিত হয়েও বাকি পরাজিত তারকা প্রার্থীদের মতো ক্ষোভ উগরে দল ছাড়েননি...
অঞ্জনা: আমি কারওর সমালোচনা করছি না। তবে বাস্তব ঘটনা হল, যাঁরা বিজেপিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের মাথায় সম্ভবত কিছু ভাবনা ছিল। সেই সময় দল রাজ্যে আসছে তেমন কথা শোনা গিয়েছিল। ফলাফল উল্টো হওয়ায় তাঁদের হয়তো স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তাই তাঁরা দলে নেই। আমি বিজেপি-তে যখন যোগ দিয়েছিলাম তখন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায় কেউই আসেননি। সেই সময় রাজ্যে দলের আসন সংখ্যা মাত্র ২টি। এখন ৭০টি। আমি দল ছাড়ব কেন? বরং, আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম সবাই তখন আমায় বুদ্ধিহীন বলেছিল। সাবধানও করেছিল। নিষেধ করেছিল, যেন বিজেপি-তে যোগ না দিই। কারণ, সবাই তখন দলে দলে শাসকদলে যোগ দিচ্ছে। কারওর কথা শুনিনি। আজ প্রমাণিত, আমি ঠিক। আড়াই বছরের রাজনীতি, সমাজসেবা আমায় জিতিয়ে দিয়েছে। ওটাও জীবনে দরকার ছিল।
প্রশ্ন: নির্বাচনের ফলাফল দেখে দলকে কোনও পরামর্শ দিয়েছেন?
অঞ্জনা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যত সহজে পৌঁছনো যায় আমাদের দলের শীর্ষে থাকা নেতা-মন্ত্রীর কাছে অত সহজে পৌঁছনো যায় না। সবটাই দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ওঁরাও ভাবছেন। আমার কথাও কিছু কিছু শুনেছেন।
প্রশ্ন: পুর নির্বাচনে বিজেপি জাদু দেখাতে পারবে?
অঞ্জনা: মনে হয় না। বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমাকেই শাসকদল প্রচার করতে দেয়নি। দাবিয়ে, দমিয়ে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে কতটা স্বাধীনতা পাব, কী করে বলি? কেন্দ্রীয় বাহিনি এনেও যে ভাবে ভোটে কারচুপি হয়েছে সেটাই এ বারেও হবে। ফলে, ফলাফল কী হবে, রাজ্যের মানুষ আগাম বুঝে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy