ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’ শেষ হতেই তিয়াশা রায় বাইরে হাওয়াবদলে। সুবান রায় ‘পাগল’ হয়ে পথে পথে ঘুরছেন! ব্যপারটা কী? সন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন
ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’ শেষ হতেই তিয়াশা রায় বাইরে হাওয়াবদলে। সুবান রায় ‘পাগল’ হয়ে পথে পথে ঘুরছেন! ছেড়া পোশাক। গায়ে-হাত-পায় নোংরা। দাঁত ভেঙে গিয়েছে! ব্যপারটা কী? সন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন
প্রশ্ন: সুবান রায় নাকি পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরছেন?
সুবান: (হেসে ফেলে) যা শুনেছেন ঠিক শুনেছেন। বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। কারওর কথা শুনছেন না। ব্যতিক্রম ভাইয়ের বউ। সে-ই খুঁজে বের করেছে ধারাবাহিক ‘দেবী’র ‘রাজু’ ওরফে সুবান রায়কে। গায়ে-হাতে-পায়ে নোংরা। ছেঁড়া পোশাক। কত দিন ভাল করে খেতে পায়নি বেচারা। দাঁতে পোকা। শব্দ শুনলেই খেপে যায়। কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। ভাইয়ের বউয়ের চেষ্টায় অনেক কষ্টে নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরেছে।
প্রশ্ন: চরিত্রটি উপভোগ করছেন?
সুবান: একদম। মনে পড়ে যাচ্ছে গৌরব চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘দুর্গা’ ধারাবাহিকের কথা। সেখানে আমি ‘নন্টে’ ছিলাম। পর্দায় গৌরবদাও এ ভাবে বাড়িতে আটকে থাকতেন। তাঁকে সামলাতেন তাঁর স্ত্রী। ওঁকে জোর করে পাগল বানানো হয়েছিল। আমি নানা কারণে পাগল হয়ে গিয়েছি। কী কারণ? ধারাবাহিকে আপাতত সেই খোঁজ চলছে।
প্রশ্ন: ‘খুকুমণি হোম ডেলিভারি’র ‘বিহান’ চরিত্রটিও অনেকটাই এ রকম...
সুবান: ‘বিহান’ ধারাবাহিক ‘দুর্গা’য় অভিনীত গৌরবদার চরিত্রের মতো। সম্পত্তির কারণে জোর করে পাগল সাজিয়ে রাখা হয়েছে ওদের। আমার চরিত্রটি আচমকা সত্যিকারের পাগল হয়ে গিয়েছে। ফারাক অনেকটাই।
প্রশ্ন: নিজেকে কী করে তৈরি করলেন?
সুবান: একটু সমস্যা হয়েছিল। রাস্তায় যে সব পাগলদের আমরা দেখি তাঁরা কিন্তু কখনও কথা বলেন না। ফলে, ওঁরা কী করে কথা বলেন সেটা দেখতে পাইনি। তবে ওঁদের খুব খেয়াল করতাম। আমার পরিবারে এক জন স্কিৎজোফ্রেনিক রোগী ছিলেন। অনেক পুরনো, ১৪-১৫ বছর আগের কথা। ওঁকে দেখে অনেক সময়েই মনে হত, এই ধরনের ধূসর চরিত্র যদি করতে পারি! সেটাই এ বার সুযোগ পেলাম।
প্রশ্ন: আপনি পথে পথে পাগল হয়ে ফিরছেন! ও দিকে তিয়াশা ‘কৃষ্ণকলি’ শেষ করে বেড়াতে বেরিয়ে পড়েছেন
সুবান: সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’তে ‘শ্যামা’র ভূমিকায় অভিনয় করল ও। একটু অবসরের প্রয়োজন হয়ই। সেটাই হয়তো নিচ্ছে। আমার হাতে কাজ। আমি সেটা করছি।
প্রশ্ন: কখনও অভিনেত্রী স্ত্রী একা একা বেড়াতে চলে যাচ্ছেন, কখনও মদন মিত্রের সঙ্গে প্রচারে। তাই নিয়ে কটাক্ষের বন্যা...
সুবান: যখন তিয়াশা এই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। কিচ্ছু বুঝত না। প্রতি পদে হাতে ধরে শেখাতে হত। এক এক সময় দম বন্ধ লাগত। কোথায় প্রেম করব, স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরব-বেড়াব না বাচ্চাদের মতো আগলাতে হচ্ছে! তিয়াশা এ গুলো আমায় তখন দিতে পারেনি। বউয়ের অপেক্ষায় অধীর হয়ে বসে থাকার বদলে সারা ক্ষণ তাকে যেন ‘বাবা’র মতো আগলাতাম। বউকে এ ভাবে সব সময় আগলাতে কোনও স্বামীর ভাল লাগে?
প্রশ্ন: আপনি তিয়াশার স্বামী কম অভিভাবক ছিলেন বেশি?
সুবান: ঠিক বলেছেন। চেয়েছিলাম স্বামী, প্রেমিক হতে। দেখি, অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে! আক্ষরিক অর্থেই বাচ্চা মেয়ে ছিল তিয়াশা। অভিনয়ে চলে এল। অথচ ইন্ডাস্ট্রির কিচ্ছু বুঝত না। কোন পথে হাঁটলে ভাল, কোনটা খারাপ--- বলে বলে বোঝাতে হত। কখনও শাসন করে। কখনও আদর করে বুঝিয়ে। এত সরল কাউকে সামলানো খুবই মুশকিল। এখন নিজেকে অনেকটাই সামলাতে শিখেছে। ভাল-মন্দ বুঝতে শিখেছে। নিজের মতো করে জীবন কাটাচ্ছে।
প্রশ্ন: তা হলে তো এখন চুটিয়ে প্রেম করার কথা আপনাদের, বদলে ‘দু’টি পাখি দু’টি তীরে’!
সুবান: অনেক দিন আটকে ছিল। ইচ্ছে মতো সব কিছু করতে পারত না। আমি আগলে রাখতাম। এখন আর তার দরকার পড়ছে না। নিজের মতো করে বাঁচতে চাইছে। আমিও ছেড়ে দিয়েছি। জানি, এখন আর তিয়াশা ভুল করবে না। ওকেও তো ওর মতো করে জীবন উপভোগ করতে দিতে হবে। এ ভাবে যদি তিয়াশা ভাল থাকে, থাকুক। (একটু থেমে) স্বাধীনতা পেয়ে আদতে ও কি আমায় বুঝতে পারল? কে জানে! নানা সাক্ষাৎকারে তিয়াশা ইদানীং বলে, ও নাকি বড় হয়েছে। নিজের মতো করে জীবনকে উপভোগ করছে। আদৌ সত্যিই কি বড় হল? তাও জানি না।
প্রশ্ন: আপনাদের স্টেটাস তা হলে কী? প্রেমিক-প্রেমিকা, দম্পতি না বিচ্ছিন্ন?
সুবান: কেন বিচ্ছিন্ন হতে যাব! যেমন ছিলাম তেমনি আছি। শুধু আগলে রাখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে যার মতো করে দিন কাটাচ্ছি। বিচ্ছেদের কথা উঠবে বুঝলে সেটাও মেনে নেব।
প্রশ্ন: মদন মিত্রের সঙ্গে নাম জড়িয়ে তিয়াশাকে নিয়ে এত কথা, কানে আসে?
সুবান: শুধু তো মদন মিত্রকে নিয়ে নয়, আরও অনেক জনের সঙ্গেই তিয়াশাকে ওঠা বসা করতে হয়েছে। এবং সেটা পুরোটাই ধারাবাহিকের স্বার্থে। ‘কৃষ্ণকলি’র প্রচারের স্বার্থে তখন মদন মিত্রের সঙ্গে প্রচারে যেতে হয়েছে। অনেক জায়গাতেও যেতে হয়েছে। তার ফলে এত কথা। অনেকে এই কাজ লুকিয়ে রাখে। তিয়াশা সেটা করেনি। মদনবাবুও মিশুকে মানুষ। খোলামেলা ভাবে মেশেন। সেই মেলামেশা প্রচারও করেন। ফলে, এত চর্চা।
প্রশ্ন: তিয়াশাকে ভবিষ্যতে রাজনীতির মঞ্চে দেখলে খুশি হবেন?
সুবান: কেন নয়! আমি ভালবাসি না বলে তিয়াশা যাবে না, এমনটা একে বারেই নয়। একটা সময় ও বলত, রাজনীতিতে একেবারেই নয়। বড় হয়েছে। ইচ্ছে-অনিচ্ছে বদলেছে তিয়াশার। যদি যেতে চায়, যাবে। নিষেধ করব না। খুশিই হব।
প্রশ্ন: বড়-ছোট পর্দা বা সিরিজে কোনও দিন স্ত্রীর ‘রিল হিরো’ হবেন?
সুবান: কোনও দিন জুটি বাঁধলে আমি তিয়াশার খলনায়ক হব! একটু একটু করে নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পাচ্ছি। খুব শিগগিরিই খবর দেব। কিন্তু আমার জনপ্রিয়তা খলনায়ক হিসেবেই। এই ধারার ধূসর চরিত্র করেও আনন্দ পাই। তার মানে এই নয়, সারা ক্ষণ ভিলেনি করতে চাই। তিয়াশা যথেষ্ট শক্তিশালী অভিনেত্রী। তাই ওর বিপরীতে খলনায়ক হলেই অভিনয় করে মজা পাব।
প্রশ্ন: যদি কখনও তিয়াশার ইচ্ছে বদলে যায়? যদি আপনি তখন নায়কের বদলে খলনায়ক হয়ে যান
সুবান: (হেসে ফেলে) মনে হয় হব না। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমিও অনেকটাই বদলে গিয়েছি। আগের আমি প্রচণ্ড প্রতিবাদী ছিলাম। এখন এনেক শান্ত, চুপচাপ হয়ে গিয়েছি। সমঝোতা করতে শিখেছি। তিয়াশা ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির অনেক কিছুর প্রতিবাদ করতাম। পরিবারের সদস্যদের আগলে রাখতাম। অনেকের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। তিয়াশার মতো তারাও ভুল বুঝত। চুপ করে যাওয়ার পর থেকে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আমি ঠিক, এটা মেনে নিয়েছে। আগামী দিনে সেটা আরও বেশি করে হবে, গ্যারান্টি। আমার অকারণে খলনায়ক হওয়ার আর ইচ্ছে নেই।
প্রশ্ন: আপনার সাক্ষাৎকার মানেই অবধারিত ভাবে তিয়াশার প্রসঙ্গ, আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন। এটাও আগামী দিনে বন্ধ হবে?
সুবান: তিয়াশাকেও তো একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ওর সাক্ষাৎকারে আমি ঢুকে পড়ি। আমার সাক্ষাৎকারে ও। এটা হবেই। আমাদের এক পেশা বলে। আগে আমরা এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। এখন আর দেখাই না। ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এটাও মেনে নিতে শিখে গিয়েছি (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy