Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সাত বছর ধরে সপ্তর্ষিই আমায় সামলাচ্ছে: সোহিনী

২ অগস্ট সোহিনী সেনগুপ্ত-সপ্তর্ষি মৌলিকের বিয়ের সপ্তম বছর। প্লাস, ছোটপর্দায় আবার ফিরছেন অভিনেত্রী, ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকে। নতুন মেগা, বিয়ের বছর, নেপোটিজম এবং টেলিপাড়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভর দুপুরে জমিয়ে আড্ডা দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে। কে বলে সোহিনী অলস? ২ অগস্ট সোহিনী সেনগুপ্ত-সপ্তর্ষি মৌলিকের বিয়ের সপ্তম বছর। প্লাস, ছোটপর্দায় আবার ফিরছেন অভিনেত্রী, ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকে। নতুন মেগা, বিয়ের বছর, নেপোটিজম এবং টেলিপাড়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভর দুপুরে জমিয়ে আড্ডা দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে। কে বলে সোহিনী অলস?

দু'জনে: সোহিনী এবং সপ্তর্ষি

দু'জনে: সোহিনী এবং সপ্তর্ষি

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ১৯:৫৯
Share: Save:

আপনি নাকি অলস, ঘরকুনো?

সোহিনী: একদম। বাড়ি থেকে গুছিয়ে সংসার করতে পারলে, রান্না করতে, বই পড়তে, একা সময় কাটাতে পারলে, পোষ্যদের সঙ্গে হুল্লোড় করতে পারলে আর কিচ্ছু চাই না। বাড়ি আমার কাছে সবচেয়ে শান্তির জায়গা।

আপনার এই ইচ্ছে তো সপ্তর্ষি আর আপনার সুখী দাম্পত্যের প্লাস পয়েন্ট?

সোহিনী: আমরা সুখী। তবে মোটেই এই জন্য নয়। সপ্তর্ষি ভীষণ রেগে যায় আমার অলসতা দেখলে, কাজ কামাই করলে। বলে, আমি অভিনেত্রী। আমার অনেক কিছু করার আছে। এ ভাবে ঘরের কোণে বসে থাকলে চলবে! স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করি রোজ। ডায়লগ মনে রাখার জন্য। সপ্তর্ষি রোজ কিছু না কিছু লিখে দেয় তার জন্য। ব্যায়াম-ট্যায়াম করতে বলে।

যাতে শেপে থাকেন?

সোহিনী: একেবারেই না। যাতে সুস্থ থাকি।

আপনাকে তাহলে সামলান সপ্তর্ষি?

সোহিনী: গত সাত বছর ধরে সেটাই করে আসছে। আজ আমাদের সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী।

তাই? কেমন কাটল সাতটা বছর? জোরদার সেলিব্রেশন, উপহার দেওয়া-নেওয়া, আর কী কী প্ল্যান আজকে?

সোহিনী: (হেসে ফেলে) বন্ধুরা কাল এসে কেক কেটে যা পালন করার করে দিয়েছে। আজ শুধুই আমরা দু’জন। বাড়িতে থাকব। নিজেদের মতো করে সময় কাটাব। বিকেলের দিকে হয়তো বেরোব। আমরা দু’জনেই ভীষণ সিনেমার পোকা। বাড়ির কাছে সিটি সেন্টার হওয়ায় প্রায়ই রাতে ছবি দেখতে যেতাম। এখন সেই অভ্যাসে পূর্ণছেদ। তবে হাঁটতে বেরোতেই পারি! আর উপহার? গত সাত বছর ভীষণ নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছি আমরা, এর থেকে ভালো উপহার আর কী হতে পারে? সাতকে গুণিতক ধরে পাওয়া সংখ্যাগুলোই আমাদের বিয়ের বছর হোক, এটাই আগামী দিনের উপহার হিসেবে চাইব।

সাত বছর পার

‘রিটার্ন গিফট’ স্টার জলসার ‘খড়কুটো’য় আপনার প্রত্যাবর্তন?

সোহিনী: (আবার হাসি) সেটা দর্শক ভাল বলতে পারবেন।

কার ভরসায় ‘খড়কুটো’ আঁকড়ে ধরলেন?

সোহিনী: লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের (হাসি)। অনেক বছর ধরে লীনাদির অনুরোধ, ছোটপর্দায় ওঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য। কিছুতেই রাখতে পারছিলাম না। অবশেষে সুযোগ হল। আমিও তার সদ্ব্যবহার করলাম। আসলে, আমার লোভটাও কম নয়। লীনাদি এত ভাল গল্প বলে, সংলাপ লেখে, চরিত্রের জন্ম দেয় যে ওগুলো করার লোভ জাগে মনে। ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে আমার মুখে কী ভাল ভাল সংলাপ বসিয়েছিল! সেই লোভটাও ছোটপর্দায় আবার একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে জাগিয়েছে।

একবছর আগে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’তে আপনি ‘ঠাকুমা’ ছিলেন। এবার?

সোহিনী: ‘খড়কুটো’য় আমি বোন। আমার তিন ভাই, যৌথ পরিবার। সেই বোন স্কুলের দিদিমণি। একটু রাগী। গল্পের এখান থেকে শুরু। তারপর লীনাদির মতো করে মেগা তার ডালপালা মেলবে।

বাস্তবেও আপনি শিক্ষক। রাগীও?

সোহিনী: (হাসতে হাসতে) তা একটু বই কি। একটু বেশি প্যাশনেট। কাজে কেউ ফাঁকি দিলে রেগে যাই। আমার মতো করে সহকর্মীরা না খাটলে, ডেডলাইন মিস করলে বা গা-ছাড়া দিলে রেগে যাই। কোনও কাজ গুছিয়ে না করে উঠতে পারলে নিজের ওপর রাগ করি। বাস্তবে আমি একটু রাগী-ই।

অভিনয়ে আর কে কে থাকছেন আপনার সঙ্গে?

সোহিনী: প্রচুর ভাল ভাল অভিনেতা থাকছেন। দুলাল লাহিড়ি, চন্দন সেন, রত্না ঘোষাল, অনুশ্রী দাস, রাজন্যা, অম্বরীশ ভট্টাচার্য। নায়ক-নায়িকা কৌশিক রায়, তৃণা সাহা।

সপ্তর্ষি নেই?

সোহিনী: (অবাক হয়ে) না তো!

সে কী, এক চ্যানেল, একই চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, আগের ধারাবাহিকে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন....এবার হচ্ছে না?

সোহিনী: (প্রচণ্ড হাসি) এবার আর সুযোগ নেই। তবে এটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। লীনাদির অভিমান, আমি নাকি ওঁর ‘শ্রীময়ী’ দেখি ‘ডিঙ্কা’ওরফে সপ্তর্ষির জন্য! কথাটা যদিও খুবই সত্যি। আমি মেগা দেখতে শুরু করি সপ্তর্ষির জন্যই। ওর খুঁত বের করে টিজ করব বলে। কিন্তু ওটা এখন আমার রোজের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। মামণিদি, সুদীপদা, ঊষসী, টোটা— সবাই এত ভাল অভিনয় করছেন যে না দেখে থাকা যাচ্ছে না।

যাহ! এখানে টক্কর দেখার সুযোগ নেই। মঞ্চে দ্বৈরথ হয় নিশ্চয়ই?

সোহিনী: খুবই হয়। মঞ্চ শেয়ার করলেই একে অন্যকে টপকে যেতে চেষ্টা করি।

যেদিন যিনি জেতেন সেদিন কী করেন?

সোহিনী: সেদিনটা তার নামে। পরের দিন আবার নতুন করে লেগে পড়ি আমরা। এ ভাবেই কোনও দিন সপ্তর্ষি জেতে। কোনও দিন আমি।

সোহিনী যখন 'ঠাকুমা'

মঞ্চ, বড়, ছোটপর্দায় কাজের পরে কোনটা কেমন লাগছে?

সোহিনী: কাজ একটাই, অভিনয়। সে যে মাধ্যমেই করি। তাই অভিনয়টাই মন দিয়ে করে যেতে হবে। আমার মতে, কোনও অভিনেতার কোনও একটি মাধ্যম নিয়ে ট্যাবু থাকা উচিত নয়। সবেতেই সমান আগ্রহী হওয়া উচিত। এতে কাজ পাওয়ার সুবিধে অনেক। অভিনয়েরই তো নানা মাধ্যম এগুলো।

সামাজিক দূরত্ব মেনে ইমোশনাল দৃশ্যে অভিনয় আর করোনা সংক্রমণ, টেলিপাড়ার জ্বলন্ত ইস্যু। কী বলবেন?

সোহিনী: দুটো প্রশ্নের দুটো উত্তর। সবাই আমাকে বলেন, আমি খুব ভাল অভিনেত্রী। শুনতেও ভাল লাগে। তবে ছোটপর্দা আমার কাছে এখনও নতুন। এই স্ট্রিমটা আমি ভাল করে জানি না। ফলে, শুধু সামাজিক দূরত্ব মেনে ইমোশনাল দৃশ্যে অভিনয় নয়, কাজ করাটাই এখানে আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। তাই ভাল পারব তো, এই ভয় কাজ করছে মনে। আর সংক্রমণের কথা বললে বলব, আমি তো বেরোচ্ছি, স্কুলে যাচ্ছি। উবরও চড়ছি, রিক্সাও চাপছি। না করে উপায়ই বা কী? কাজ তো করতেই হবে। যখন মনে দ্বিধা আসে তখন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা ভাবি। আর, ঘরে বসে খাবার মতো আমার এত টাকা নেই। কাজ ছাড়া তাই গতিও নেই।

ফের দাম্পত্যের গল্পে ফিরি? সাত বছর পরে কী মনে হচ্ছে, কে বেশি অ্যাডজাস্টেবল?

সোহিনী: অবশ্যই সপ্তর্ষি। ও অনেক আমায় সাহায্য করে, সকালের বেড টি বানিয়ে দিয়ে, বাজার করে দিয়ে, নিজের এঁটো থালা ধুয়ে দিয়ে। জানেন, একেক সময় মনে হয় নিমেষে যেন সাতটা বছর উড়ে গেল। আর বড় দেরি করে দেখা হল সপ্তর্ষির সঙ্গে। আরেকটু আগে হলে আরও ভাল হত।

সাত বছরে ডমিনেটিং কে বেশি? আপনি বড়, নিশ্চয়ই আপনিই?

সোহিনী: ঠিক তার উল্টো। আমি সপ্তর্ষির উপর ডিপেন্ড করি। ওর থেকে পরামর্শ নিই। ও আমার থেকে অ-নে-ক বেশি বাস্তববাদী, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী। আমি এখনও অনেক ক্ষেত্রে বোকা। আগে যেমন মা-বাবা আমায় সামলে দিতেন এখন সেই জায়গায় সপ্তর্ষি।

করোনা আবহে বিশ্ব ওলোটপালট। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘নিউ নর্মাল’ শব্দকে অনুভব করতে পারলেন?

সোহিনী: (একটু দম নিয়ে) সব দেখেশুনে এটুকু বুঝলাম, থামলে চলবে না। করোনা আবহে ‘নিউ নর্মাল’ মানে শুধুই কিছু নতুন অভ্যাস পালন নয়, যেনতেন প্রকারেণ বেঁচে থাকা। রোজগার করা। আমি যেমন স্কুল করছি, অভিনয় করছি, একটা ইনস্টিটিউট তৈরির পথে। এ ভাবেই যে যা পারবেন তাঁকে সেটাই করে খেতে হবে। এটা নয় ওটা, বলা যাবে না। নইলে বরবাদ। ‘ডিপ্রেশন’ এখন মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যবহার হচ্ছে। ডিপ্রেশন আর মনখারাপ কিন্তু এক নয়। এটা বুঝতে হবে। যিনি এটা মেনটেন করতে পারলেন, রয়ে গেলেন। না পারলেই সব শেষ।

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মতো ফুরিয়ে যেতে হবে? তারপর রব উঠবে নেপোটিজম, স্বজনপোষণের?

সোহিনী: এখনও সুশান্তের মৃত্যু রহস্যে মোড়া। ফলে, ওটা নিয়ে এখনই মন্তব্য নয়। আর নেপোটিজম এত বিস্তৃত বিষয় যে, ওটা নিয়েই আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আলাদা আড্ডা দেওয়া যায়। সেটাই বরং হোক আরেক দিন?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy