গাজি আব্দুন নূর।
ছবির ক্যাপশনে ‘পুজোর মুডে’ উল্লেখ করে ট্রোলড সঞ্চালক-অভিনেতা মীর। ‘দেবী দুর্গা’ সেজে বিতর্কে নুসরত জাহান। ২০১১ থেকে ২০১৯— প্রথমে থিয়েটার এবং এর পর ২০১৭তে 'রাণী রাসমণী' ধারাবাহিকে রানিমা'র স্বামী রাজচন্দ্র দাসের ভূমিকায় অভিনয় করেও একদিনের জন্য অশ্রদ্ধার পাত্র হননি গাজীআব্দুন নূর ! বাংলাদেশ থেকে ফোনে অকপট স্বীকারোক্তি আনন্দবাজার ডিজিটালকে।
‘‘দিতিপ্রিয়াকে মনে পড়ে?....’’
বলতেই যেন জাম্প কাট নূরের, ‘‘মনে পড়বে না! এখনও ফর্মাল যোগাযোগ আছে। ২৩ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিনে উইশ করল দিতিপ্রিয়া। এ টুকুই.।’’ তাই? প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সেটে সারাক্ষণ আব্দুন আর দিতিপ্রিয়া ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’...। অথচ অন ক্যামেরা কী ভাব! জবাব তৈরিই ছিল, ‘‘একদমই তাই। আব্দুন লাল পছন্দ করলে দিতিপ্রিয়া নীল রং তুলে নেবে। অদ্ভুত রসায়ন কাজ করত সেটে। মুখোমুখি হলেই অভিনয় এসে যেত আপনা থেকে। দিতিপ্রিয়া গড গিভটেড অভিনেত্রী।’’
দিতিপ্রিয়া বড় পর্দায় আসছেন। এই খবরটাও রাখেন নূর। জুটি বাঁধবেন? ‘‘পর্দায় ‘জুটি’ একটা বড় ফ্যাক্টর তাই না?’’ হাল্কা হেসে পাল্টা প্রশ্ন এল। তারপরেই সংযত, শুধু দিতিপ্রিয়া নয়, সুযোগ পেলে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গেও কাজ করবেন নূর। অবাক তিনি, ‘‘আজও ঋতুদি সেকেন্ড লিড হলেন না! সেই কবে থেকে কাজ করে চলেছেন! আমার সঙ্গে একটা কাজের কথা হয়েছিল। পুরোটাই ঘেঁটে গেল।’’
অতিমারি, ওজনে বাড়াবাড়ি...!!
প্রায় একটা বছর ভারতমুখো হননি নূর। এ পার বাংলার দর্শকদের কৌতূহল তাঁকে নিয়ে।
দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে গাজি আব্দুন নূর।
আরও পড়ুন: পায়েলের হেনস্থা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারসোভা থানায় পৌঁছলেন অনূরাগ কশ্যপ
বাংলাদেশে কী করছেন? ফোনালাপ অনুযায়ী, দুটো বাংলাদেশি ছবির কাজ শেষ করেছেন। প্রথম ছবি, নাট্যকার সেলিম আল দীনের "যৈবতী কন্যার মন" শ্রুতিনাটক অবলম্বনে "যৈবতী কন্যার মন।" পরিচালনায় দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নার্গিস আখতার। এই ছবিতে নূর মুসলিম গায়েনের চরিত্রে। প্রেম হবে সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে মেয়ের সঙ্গে। দ্বিতীয় ছবির পটভূমিকায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। সেই সময় পাক শাসকগোষ্ঠী এবং মিত্রশক্তি হিন্দু বাঙালিদের বাধ্য করেছিল ভারতে পালিয়ে যেতে। এমনই এক হিন্দু পরিবারকে নিয়ে ছবি করেছেন আরেক জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক শাহনওয়াজ কাকলি। এই ছবিতে নূর গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ।
‘‘মজার কথা শুনবেন?’’ নুর নস্টালজিক। জানালেন, রাসমণি চলাকালীন ২০১৭ -র নভেম্বরে
প্রথম চলচ্চিত্র 'যৈবতী কন্যার মন' এর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পর রাসমণীর জন্য ওজন বাড়াতে হয়। ওই ছবির যে শতাংশ কাজ বাকি ছিল তা করতে গিয়ে আবারও ওজন কমাতে হয়েছে তাঁকে।
এখানেই শেষ নয়, নূর জানালেন, "দ্বিতীয় ছবির পরিচালক বললেন, আবার মোটা হতে হবে। ফলে, ফের হৃষ্টপুষ্ট। সেই ছবির কাজ হতে হতে অতিমারি। একদম ঘরে বসা। কী করি? পড়াশোনা শেষ করলাম। সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে লেপ্টে থেকেছি। ছবি, সিরিজ, বই, গান নিয়েই কেটে যাচ্ছে। তার মধ্যেই লকডাউন উঠতে শেষ করলাম ছবির কাজ।’’
আরও পড়ুন: হাথরসের পর বলরামপুর, ফের গণধর্ষণের জেরে উত্তরপ্রদেশে মৃত্যু দলিত মহিলার
এ পার বাংলা থেকে ডাক পাননি? থমকেই ফের সহজ, ‘‘২০১৯-এর শেষে ভারতীয় শাসকদলের হয়ে প্রচারে বেরিয়েছি। আমাকে বলা হয়েছিল ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে চলে যেতে। আমিও এ দেশে আসার আবেদন জানাইনি এখনও।"
‘‘কালীঘাটের পুরোহিতেরা কোলে করে মায়ের পা ছুঁইয়েছিলেন’’
কিছুদিন আগেই ছবির ক্যাপশনে ‘পুজোর মুডে’ উল্লেখ করে ট্রোলড সঞ্চালক-অভিনেতা মীর। ‘দেবী দুর্গা’ সেজে বিতর্কে নুসরত জাহান। রাজচন্দ্র দাসের ভূমিকায় অভিনয়ের পর আবারও দ্বিতীয় ছবিতে তিনি হিন্দুর ভূমিকায়। অথচ ট্রোলড হননি! কী বলবেন নূর? ‘‘আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। সময়টা সম্ভবত ২০১৭। রাসমণি করছি।
সেই সময় রাসমণি তে রাজচন্দ্রের ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস হারানোর গল্প চলছিল। শুট শেষে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম কালীঘাট। নামতেই দেখি দূর থেকে লক্ষ্য করছেন পুরোহিত মশাইয়েরা। কয়েক পা এগিয়ে আমি হতভম্ব! কোলে তুলে নিয়ে তাঁরা সটান গর্ভগৃহে। সারা গায়ে গঙ্গা জল ছিটিয়ে স্পর্শ করালেন মায়ের পা। ২০ মিনিট বন্ধ দরজার ওপারে আমি আর দেবী মা। বেরোলাম যখন, সবাই মিটিমিটি হাসছেন! এমন উদারতা সত্যিই বিরল’’ শোনালেন নূর। নিজের দেশের ছবিতেও ‘হিন্দু ব্রাহ্মণ’ সেজেছেন। কারও কোনও আপত্তি শোনেননি অভিনেতা। এ দেশে এলেই ‘মামণি’ অলকানন্দা রায়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ বাঁধা।
‘‘আরও শুনবেন? একসময় নিয়মিত দক্ষিণেশ্বরে যেতাম। কখনও বাধা পাইনি। তখনও জানতাম না, ভবিষ্যতে এই দক্ষিণেশ্বরের গল্পে আমি অভিনয় করব!’’ আবেগে ভাসলেন নূর। যোগ করলেন, জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মে বিশ্বাসী প্রত্যেকেই। কিন্তু কোনও ধর্ম অন্য ধর্মের অসম্মান করতে শেখায় না।
অন্য় মুডে গাজি আব্দুন নূর।
মাথা মুড়িয়েছি...আর প্রেমে নেই!!
পাঁচ বছর পরে আবার নূর রোম্যান্টিক। তাঁর ৩ সেপ্টেম্বরের সোশ্যাল পেজ তেমনটাই বলছে...। নতুন প্রেমিকা কেমন? প্রশ্নটা শুনেই যেন ছিটকে উঠলেন, ‘‘২০১৫ তে ব্রেক আপের সময় নিজের হাতে মাথা মুড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছি, সব করব প্রেম করব না। আর ওই পথ মাড়াই? যাচ্ছেতাই গিয়েছে দিনগুলো। কী ভাবে শুট করতাম আর তার পর কী ভাবে ভেঙে পড়তাম, বন্ধুরা জানেন।’’ সোশ্যাল পেজে তাহলে অত প্রেম প্রেম ভাব! নূরের দাবি, পুরোটাই কল্পনা। সব পুরুষের যেমন থাকে। তাঁরও আছে। পরনে সবুজ শাড়ি, হাত ভরা কাঁচের চুড়িতে। হাওয়ায় উড়বে তার অবাধ্য কোমর ছাপানো চুল...বলতে বলতেই হো হো হাসি। জানালেন, ‘‘হয়ত এমন মেয়ে কপালে জুটবে যে কোনও দিন শাড়িই পরেনি!’’
বাংলাদেশেও ড্রাগ বেআইনি... তলায় তলায় চলে
ভারত তোলপাড় বলিউডের মাদক কেলেঙ্কারি নিয়ে। বাংলাদেশের ছবি কী? ‘‘এখানে তামাক ছাড়া সমস্ত মাদক নিষিদ্ধ। এমনকি লিকারও। যে মদ ভারতে ৫০০ টাকায় মেলে সেই মদের দাম এখানে ৫ হাজার। তা বলে কেউ খায় না? সবই হয় তলায় তলায়’’ দাবি, নূরের। বিরক্তি, বিশ্বে সমস্যা প্রচুর। তাই নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সবার যত আলোচনা-সমালোচনা, কোন তারকার ক’জন বউ বা স্বামী, কে নেশা করল, কে খাটো পোশাকে ছবি দিল---এই-ই নিয়ে।
সঙ্গে এও জানালেন, একবার ঘুরে যান বাংলাদেশ। চিনতে পারবেন না। গত ৯-১০ বছর আগের ছবি আমূল বদলে গিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার প্রচুর উন্নতি করেছে গোটা দেশের। আমার জেলা শহর যশোর কত ঝাঁ চকচকে! রাজনীতিতে আসছেন? হেসে ফেললেন অভিনেতা, ‘‘বাবা পাক নৌ বাহিনিতে ছিলেন। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে। আমার মা, এক কাকা মুক্তি যোদ্ধা। এক সময় স্বপ্ন দেখতাম, বাবার মতো ডিফেন্সে যোগ দেব। সেটা যখন হল না, অভিনয় নিয়েই তৃপ্ত। পাশাপাশি, শিক্ষকতাও করতে পারি।
রাজনীতি? নৈব নৈব চ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy