সিরিয়ালে মূল চরিত্রে ইন্দ্রাণী হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
জার্মান মার্কসিস্ট নারী আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন (১৮৫৭-১৯৩৩) সেই কবেই নারীর গৃহশ্রমের মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজও মেয়েদের গৃহশ্রমের মূল্য দেয় না কেউই। নিজের যাবতীয় স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে তাঁরা ‘হোম মেকার’ বা ‘হাউজ ওয়াইফ’ হয়েই থেকে যান। স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’ ঠিক এই বিষয়টাই ধরতে চেয়েছে। সোমবার, ১০ জুন থেকেই শুরু হল ‘শ্রীময়ী’র যাত্রা।
শ্রীময়ীর চরিত্রাভিনেতা ইন্দ্রাণী হালদারের কথায়: “সবাই মনে করে যাঁরা হাউজওয়াইফ তাঁদের কোনও কাজ নেই। আমরা যারা ওয়ার্কিং তারা হাউজওয়াইফদের বলি, ‘ও, তুমি হাউজওয়াইফ! তা হলে তো তোমার কোনও কাজ নেই। খুব মজা।’ কিন্তু ওয়ার্কিং উইমেনদের থেকেও অনেক বেশি কাজ হাউজওয়াইফের এবং তাঁর ওয়ার্কিং আওয়ার কিন্তু আনলিমিটেড। সেই সকালবেলা সবার আগে ঘুম থেকে উঠে...তার পর মানে পর পর কাজ। এর একটাও যদি গণ্ডগোল হয় বাড়ির সদস্যদের প্রতি দিনের লাইফেও গোলমাল হয়ে যাবে। তাই নয় কি? আজকে যদি আমার মা সকালে বাজারটা না করে, রান্নাটা না করায়— নিজে করুক বা গৃহকর্মীকে দিয়ে করাক, আমি কিন্তু শুটিংয়ে গিয়ে দুপুরের খাবারটা পাব না।’’
ইন্দ্রাণী বলেন, ‘‘আমার মায়ের দিন শুরু হয় আমারও অনেক আগে। তো আমার মা আমার থেকে অনেক বিজি। বাড়ির কাজের জন্য অ্যাপ্রিসিয়েশন নেই। টেকেন ফর গ্রান্টেড আর কি। ধরেই নেওয়া হয়, এ তো মা করবেই। কিন্তু এক দিন যদি মা বলে, ‘আজ নিজেরা কাজ করে নাও’। তখন কিন্তু বুঝতে হবে ঠ্যালাটা কী।”
সিরিয়ালে তাঁর চরিত্র স্পেশাল, জানালেন ইন্দ্রাণী।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: বিয়ের পর প্রথম অনস্ক্রিন দম্পতি রণবীর-দীপিকা, কোন ছবিতে?
প্রযোজক, কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যোগ করলেন, “বেশির ভাগ মা এমন ভাবে জীবন কাটান যে তাঁদের স্বপ্নগুলো পূরণ হয় না, আলোতে আসে না। মনে হয়েছিল, কমিউনিকেট করা দরকার কোথাও, একটা মানুষেরও যদি পজিটিভ সেন্সে মোটিভেশন হয় তো আমার ভাল লাগবে। দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র মেয়েরাই ডিপ্রেসড কন্ডিশনে আছে এটা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সেখান থেকে একটা মেয়ে ফাইট ব্যাকও করবে। তার যোগ্যতা অনুযায়ী করবে, সে হঠাৎ এক দিনে মারাত্মক কিছু হয়ে যাচ্ছে না। যে যে রকম অবস্থানে আছে সে রকম অবস্থানে থেকেই সে তার লড়াই করবে। আসলে সব মেয়েরই তো কিছু না কিছু পোটেনশিয়াল থাকে। সেটা কখনও এক্সপ্লোর করা হয় না। তো শ্রীময়ী এটা এক্সপ্লোর করবে ফাইন্যালি। ভেতরের যে শক্তি প্রত্যেক মেয়ের মধ্যে থাকে সেই শক্তিটাকে কোথাও একটা এক্সপ্লোর করার চেষ্টা ‘শ্রীময়ী’...এটুকুই বলব। শ্রীময়ীকে দেখে দর্শকদের মধ্যে যদি এক জনেরও...যাদের অনেক স্বপ্ন ছিল, হারিয়ে গেছে...তাঁরা যদি এক জনও সেই স্বপ্ন ফিরে পান তা হলে আই উইল বি গ্রেটফুল।”
শ্রীময়ী কি আপনার কাছে স্পেশাল? কেন? ইন্দ্রাণী শেয়ার করলেন, “অবশ্যই। শ্রীময়ী রিয়েল কাইন্ড অব ক্যারেক্টার। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে শ্রীময়ী আছে। সে জন্য খুব স্পেশাল। শ্রীময়ী শুধু গল্প নয়, জীবনের কথা। আমি তো সবসময় স্ট্রং চরিত্র করেছি, যাদের কনফিডেন্স আছে। এই চরিত্র কিন্তু ইনকনফিডেন্ট। চরিত্রটা করতে ভীষণ ভাল লাগছে, ভয়ও লাগছে যে দর্শক আমায় নেবেন কি না।”
শ্রীময়ীর জার্নি ঠিক কী রকম? লীনা বুঝিয়ে দিলেন, “শ্রীময়ী এক জন ঘরোয়া মেয়ে, বিএ পরীক্ষা ফাইনালি দিতে পারেনি, বিয়ে হয়ে যায়...যে রকম অনেক মেয়েরই হয়। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি আসে। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তার ডিফারেন্স আছে, অর্থনৈতিক ভাবে বাপেরবাড়ি পিছিয়ে। যার ফলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ডমিনেট করে। শ্রীময়ীকে কেউ পাত্তা দেয় না। ছেলেমেয়েরাও মাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাবে। খুব কমন ছবি আর কি। শ্রীময়ীরও কিছু করতে ইচ্ছে করে। ছেলেমেয়ের মুখে হাসি ফোটানোর কথা মনে হয় তার। সে মনে করে তা হলে ছেলেমেয়ে খুশি হবে। মেয়ের স্কুলে কোনও প্রোগ্রাম হলে মাকে নিয়ে যেতে লজ্জা পায় মেয়ে। মেয়ে মনে করে, মা স্কুলে গিয়ে কথা বলতে পারবে না, মা তো ইংরেজিও বলতে পারে না। তো এ রকম ছোট ছোট চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে শ্রীময়ীর জার্নি এগোবে।”
আরও পড়ুন: ‘ভুয়ো খবর’-এর বিরুদ্ধে তোপ হৃতিক রোশনের দিদি সুনয়নার
সারা পৃথিবীতেই অডিও ভিজুয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যামেরার সামনে ও পিছনে মেয়েদের সংখ্যা কম। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। ইন্দ্রাণীর অভিমত, “এ বিষয়ে টেলিভিশন কিন্তু অনেকটা এগিয়ে। আমি টেলিভিশনে তিরিশ বছর কাজ করছি, যবে থেকে টেলি সোপ শুরু হয়েছে তবে থেকেই কাজ করছি। আমি যতগুলো টেলি সোপ করেছি...‘তিথির অতিথি’, ‘কুয়াশা যখন’, ‘বহ্নিশিখা’...এখন ‘সীমারেখা’, ‘গোয়েন্দা গিন্নি’, ‘শ্রীময়ী’...সব কটাই কিন্তু নারীকেন্দ্রিক। সব কটাই নারী স্বাধীনতা বা নারীদের অস্তিত্ব সৃষ্টির গল্প। টেলিভিশন সব সময় নারীকে সাপোর্ট করে কাজ করে। পুরুষকেন্দ্রিক টেলিভিশন প্রোডাকশন খুব একটা হিট হয় বলে দেখা যায় না। তার সবচেয়ে বড় কারণ টেলি দর্শকদের বড় অংশই মেয়েরা। মেয়েরা মেয়েদের গল্পের মধ্যে নিজেদের আইডেন্টিফাই করে। ‘শ্রীময়ী’র মধ্যেও এই দর্শক নিজেদের আইডেন্টিফাই করবেন।”
এই ধারাবাহিকে ঊষসী চক্রবর্তীর ভূমিকা কী? ঊষসী ভাঙতে চাইলেন না। শুধু বললেন, “সিরিয়ালের প্রোমোতে আমার চরিত্রটা দেখা গেছে। ভেরি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যারেক্টার...এ রকম একটা বলা যেতে পারে।” তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে লীনা বললেন, “ও এখানে পারিবারিক বন্ধু। এই চরিত্রর স্টোরি লাইন আপ এখনই বলতে চাইছি না।”
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy