আলোচনায় সুবোধ সরকার
গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ দ্য কনক্লেভ-এ বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন, অক্ষর (Aakhar) ও পূর্ব-পশ্চিমের উদ্যোগে এক অতি মনোজ্ঞ কবিতা পাঠ ও আলাপচারিতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরিবেশনায় শ্রী সিমেন্ট লিমিটেড। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন-এর সংস্থা অক্ষর সর্বভারতীয় ভাষাগুলি নিয়ে কাজ করে চলেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন ভাষার কবি এবং লেখকদের নিয়ে আলাপচারিতার আয়োজন করা হয়। তাদের সঙ্গে এই কাজে ব্রতী হয়েছে নাট্যদল পূর্ব-পশ্চিম।
সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত, জনপ্রিয় কবি ও অধ্যাপক পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি সুবোধ সরকারের কবিতা পাঠ ও তাঁর কবিতা বিষয়ক আলোচনা নিয়ে ছিল এই দিনের অনুষ্ঠান। সঞ্চালনায় ছিলেন শিবাশিস মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্র। সুবোধ সরকারের বেশ কিছু কবিতা যেমন ‘বেহালা ছেলেটা’, ‘রূপমকে একটা চাকরি দিন’ ও অন্যান্য কবিতার উল্লেখ করে শিবাশিস মুখোপাধ্যায় তাঁর আলাপচারিতার সূত্রপাত করেন। যে আবেগ উতলে দেওয়া, মুগ্ধ করে দেওয়া বাংলা কবিতা রচনা করতেন সুবোধ সরকার, সেই কবিতার চূড়ান্ত খ্যাতি থেকে এক আকস্মিক বাঁক নিয়েছে তাঁর কবিতা। পেয়েছে তার নবরূপ। এমনই সমস্ত কবিতা নিয়ে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে দু’টি কবিতাগুচ্ছ। প্রেমই যার মূল বিষয়। সম্প্রতিতম প্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ, ‘জোছনা নিয়ে একটা কিছু করো’ থেকে বেশ কিছু কবিতা পাঠ করেন কবি।
গত তিন বছর ধরে তিনি এই নতুন ধারার কবিতা রচনা করে চলেছেন। অতিমারির সময়ে প্রায় তিনশোটি কবিতা রচনা করেছেন। ‘দিনের বেলা দেখা যায় না’, ‘নক্ষত্রের জামা’ শীর্ষক বই দু’টিও প্রকাশ পেয়েছে এই সময়। তাঁর কাছে এটি এক চমৎকার চক্রব্যূহ। তাঁর লেখা ‘নতুন প্রেমের কবিতা’ বইটি থেকে ‘হলুদ তোমার সঙ্গে যা করেছি সেটা পাপ’, ‘অক্সফোর্ড বুকস্টোর’ নামক কবিতা দু’টিও পাঠ করেন তিনি। এরপর তাঁর রচিত আরও অন্যান্য কবিতা পাঠ করে শোনান তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল প্রশ্ন উত্তর পর্ব। এই পর্বে শিবাশিস মুখোপাধ্যায় তাঁর কাছে জানতে চান প্রেমের কবিতার সঙ্গে বাস্তবিক প্রেমের সম্পর্ক। এর উত্তরে কবি বলেন, বাস্তবের প্রয়োজন আছে। মাটি ছাড়া জোছনা পড়বে না। গাছ, বাড়ি-ঘরেরও দরকার আছে। তবে আমার মনে হয় জোছনা ছাড়া প্রেম হয় না, যদিও এটা নতুন কিছু নয়। নবীন থেকে প্রবীণ সমস্ত লেখকদেরই নিজের জোছনা আছে। জোছনা অনেকটা নিঃশব্দ কোরাসের মতো। এর কোনও ধ্বনি বা প্রতিধ্বনি হয় না। আবার শুধু একজন নারীকে দেখেও প্রেমের কবিতা হয় না। অল্পবয়সের যে প্যাশন সেটা পরিণত বয়সে রক্তিম মরীচিকাতে পরিণত হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি পাবলো নেরুদা ও উইলিয়াম ব্লেক-এর কবিতারও উল্লেখ করেন। এর পাশাপাশি গীতবিতান, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্যদের অবদানের কথাও বলেন। ওঁর মতে সবার থেকে কুড়িয়ে নিতে হয়। যে কুড়োতে জানে না সে লিখতেও পারে না।
এরই মধ্যে মেয়েদের যন্ত্রণা ও অন্যান্য আরও নানা বিষয়ে কথোপকথন চলতে চলতে তাঁর কবিতাতে ইরোটিক বা যৌনতা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন কবি। এই কবিতাগুচ্ছে যেমন এগুলি এসেছে আবার জোছনাও রয়েছে। তাঁর মতে ইরোটিকের মধ্যে একটা সৌন্দর্য আছে। ‘আমি গ্রিক দর্শন ও স্থাপত্যের খুব ভক্ত। আবার আমাদের বাংলা কবিতার সে জয়দেব হোক বা বিদ্যাপতি হোক তাতে যা আছে তার তো পাঁচ শতাংশও আমরা দিতে পারব না।’ তবে এখনকার সময় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ‘এখন কবিতার একটা লাইন লিখতে গেলে পাঁচবার ভাবতে হয় যে যদি কেউ এই লাইনটি ফেসবুকে তুলে দেয় তা হলে কী গালাগালিটাই না খাব। এখন তুলে দেওয়ার সময়। একটা পঞ্চাশ লাইনের কবিতার আটমাত্রার একটা লাইন হয়তো কেউ তুলে দিল– তারপর সে কী গালমন্দই না করে লোকে।’ তিনি বলেন জীবনানন্দ থেকে শুরু করে শক্তিদার কবিতা ও অন্যান্য আরও তরুণদের কবিতার হাত ধরে ভালবাসা যে এক অন্যমাত্রা পেয়েছে তা বাড়তে দেওয়া উচিত।
এই অনুষ্ঠানে বেশ কিছু বিশিষ্ট লেখক যেমন চিন্ময় গুহ, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় চক্রবর্তী ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের এবং শ্রোতাদের বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দেন সুবোধ সরকার কবিতা পাঠের ফাঁকে ফাঁকে।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব-পশ্চিমের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি দেখানো হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ডিজিটাল মিডিয়াপার্টনার ছিল anandabazar.com।
তন্ময় চক্রবর্তী-কবি, গল্পকার, অনুবাদক,কলামনিস্ট
বৃষ্টিভেজা আশ্চর্য সন্ধ্যায়, প্রেমের আঁচে, ভালোবাসার আগুনে, জ্যোৎস্নার আদর মাখানো কবিতা পাঠ করলেন কবি সুবোধ সরকার।
শেষ মুহূর্তে তাতে মিশে গেল আফগানিস্তানের জ্বলন্ত সমস্যা। মেয়েদের যন্ত্রণার কথা। উঠে এল কিছু প্রতিবাদের ভাষা... কবি শব্দ দিয়ে ভালবাসলেন।
অনিন্দিতা চ্যাটার্জি-এগজিকিউটিভ ট্রাস্টি, প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন
বাংলা সাহিত্যজগতের এক স্বনামধন্য মানুষ সুবোধ সরকার। আমাদের অক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ১১ সেপ্টেম্বর ওর বিভিন্ন নতুন আর পুরনো কবিতা সংকলন সম্পর্কে জানলাম ও আনন্দিত হলাম। আমাদের এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমরা ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন আগামী দিনে এই রকম বাংলা সাহিত্যের ওপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy