Iconic Bollywood Villain Prem Chopra Remained Popular with Audience and Critics dgtl
bollywood
মাতৃহীন বোনকে বড় করেন নিজের প্রথম সন্তান ভেবে, পরে বাবার উইলেই বঞ্চিত হন অভিনেতা প্রেম চোপড়া
দু’চোখে স্বপ্ন হিন্দি সিনেমার নায়ক হওয়ার। সম্বল বলতে স্কুল কলেজে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। প্রথম প্রথম তিনি থাকতেন কোলাবায় একটি গেস্ট হাউসে। পোর্টফোলিয়ো নিয়ে ঘুরতনে স্টুডিয়ো থেকে অন্য স্টুডিয়োর দরজায়। কিন্তু তাঁকে ফিরতে হত নিরাশ হয়ে, খালি হাতে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ১০:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
খলনায়ক হলেও মৃদু বা মোলায়েম সুরে সংলাপ। এটাই ছিল তাঁর অভিনয়ের বৈশিষ্ট্য। নামে প্রেম, দেখতেও সুদর্শন। তবু তিনি হয়ে থাকলেন বলিউডের আইকনিক খলনায়ক হয়েই।
০২১৮
অবিভক্ত ভারতের লাহৌরে প্রেম চোপড়ার জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। তিনি ছিলেন রণবীর চোপড়া এবং রূপরানি চোপড়ার ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়।
০৩১৮
দেশভাগের পরে চোপড়া পরিবার চলে আসে সিমলায়। প্রেম চোপড়ার বাবা রণবীর ছিলেন সরকারি কর্মী। সিমলার স্কুলে পড়াশোনা পরে প্রেম চোপড়া স্নাতক হন পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
০৪১৮
রণবীরের ইচ্ছে ছিল, প্রেম ভবিষ্যতে চিকিৎসক বা আইএএস অফিসার হোক। কিন্তু প্রথম থেকেই প্রেমের ঝোঁক ছিল অভিনয়ে। বাবা-মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই তিনি অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
০৫১৮
নিমরাজি হয়ে তাঁর বাবা শেষ অবধি বলেন, স্নাতক তাঁকে হতেই হবে। তারপর তিনি পছন্দসই পেশায় যেতে পারেন। ছয়ের দশকের গোড়ায় স্নাতক হয়ে প্রেম চোপড়া পৌঁছন বম্বে, আজকের মুম্বই।
০৬১৮
দু’চোখে স্বপ্ন হিন্দি সিনেমার নায়ক হওয়ার। সম্বল বলতে স্কুল কলেজে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। প্রথম প্রথম তিনি থাকতেন কোলাবায় একটি গেস্ট হাউসে। পোর্টফোলিয়ো নিয়ে ঘুরতনে স্টুডিয়ো থেকে অন্য স্টুডিয়োর দরজায়। কিন্তু তাঁকে ফিরতে হত নিরাশ হয়ে, খালি হাতে।
০৭১৮
সে সময় নামী এক সংবাদপত্রের সার্কুলেশন বিভাগে চাকরি নিয়েছিলেন প্রেম চোপড়া। বাংলা, বিহার, ওড়িশায় তাঁকে সেই সংবাদপত্রের সার্কুলেশন দেখভাল করতে হত।
০৮১৮
তার জন্য মাসে অন্তত কুড়িদিন তাঁকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত। সেই সময় লোকাল ট্রেনে যাওয়ার সময় এক অপরিচিতর কাছ থেকে হঠাৎই অভিনয়ের সুযোগ আসে। তাঁর সঙ্গে স্টুডিয়োয় যান প্রেম চোপড়া। পঞ্জাবি প্রযোজক জগজিৎ শেট্টি তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দেন ‘চোধুরী কার্নাইল সিংহ’ ছবিতে।
০৯১৮
দেশভাগের পটভূমিতে সেই ছবির বিষয় ছিল হিন্দু মুসলিম প্রেম। তিন বছর লেগেছিল ছবির কাজ শেষ হতে। মুক্তির পরে সে ছবি বক্স অফিসে চূড়ান্ত সফল হয়। নায়কের ভূমিকায় প্রেম চোপড়ার অভিনয় প্রশংসিত হয়। তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন আড়াই হাজার টাকা।
১০১৮
এরপর তাঁর কাছে অভিনয়ের সুযোগ আসতে থাকে। কিন্তু তখনও প্রেম চোপড়া চাকরি ছাড়েননি। অফিসের পাশাপাশি অভিনয় করতেন সিনেমায়। এ সময়েই পরপর সফল হয় তাঁর ‘শহিদ’, ‘ওহ কৌন থি’, ‘তিসরি মঞ্জিল’, ‘নিশান’, ‘উপকার’-এর মতো ছবি। এরপর ১৯৬৭ সালে প্রেম চোপড়া চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়কেই নিজের পেশা করেন।
১১১৮
প্রথম দিকে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করলেও পরে তিনি নিজেকে আবদ্ধ করেন খলনায়কের ভূমিকাতেই। রাজেশ খন্নার সঙ্গে তাঁর নায়ক-খলনায়ক জুটি ছিল জনপ্রিয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৯১ সাল অবধি দু’জনে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন মোট ১৯ টি ছবিতে। তারমধ্যে ১৫ টি-ই সুপারহিট।
১২১৮
বেশিরভাগ ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা হতেন বিন্দু। নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি সাবপ্লট হিসেবে প্রেম চোপড়া-বিন্দু জুটিও দর্শকদের মন জয় করে নিত। অনেক ছবিতে তিনি স্ক্রিন শেয়ার করেছেন প্রাণ, অজিত, রঞ্জিত, প্রেমনাথ, জীবন, অমরীশ পুরী, আমজাদ খানের মতো অভিনেতার সঙ্গে। তাদের দাপটেও হারিয়ে যায়নি প্রেম চোপড়ার অভিনয়।
১৩১৮
১৯৯৫ সালের পর থেকে ছবিতে কাজ করা কমিয়ে দেন প্রেম চোপড়া। সে সময় কেরিয়ারের শুরুর দিকের মতো পজিটিভ রোলে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর শেষ ছবি ‘রঙ্গিলা রাজা’ মুক্তি পেয়েছে ২০১৯ সালে।
১৪১৮
পাঁচ দশকের বেশি দীর্ঘ কেরিয়ারে অসংখ্য আইকনিক চরিত্র উপহার দিয়েছেন প্রেম চোপড়া। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘দো রাস্তে’, ‘ডোলি’, ‘কটি পতঙ্গ’, ‘হালচাল’, ‘ড্রিমগার্ল’, ‘দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার’, ‘দোস্তানা’, ‘দেশপ্রেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘ঝিল কে উস পার’, ‘ববি’, ‘দো আনজানে’, ‘পুকার’, ‘মজবুর’, ‘খিলাড়ি’, ‘প্রেম যোগ’, ‘লাডলা’, ‘আও প্যায়ার করেঁ’।
১৫১৮
তবে তাঁর এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি মা রূপরানি। ছেলের প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তখন তাঁর ছোট মেয়ে অঞ্জুর বয়স মাত্র ন’বছর। বাবা এবং চার দাদার কাছেই বড় হন অঞ্জু। তাঁকেই নিজের প্রথম সন্তান বলে মনে করেন প্রেম চোপড়া।
১৬১৮
১৯৬৯ সালে প্রেম চোপড়া বিয়ে করেন উমাকে। উমা ছিলেন রাজ কপূরের স্ত্রী কৃষ্ণা কপূরের ছোট বোন। প্রেম-উমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে রাকিতার স্বামী রাহুল নন্দা ছবির পাবলিসিটি ডিজাইনার। মেজো মেয়ে পুনীতা শিশুদের একটি স্কুল পরিচালনা করেন। গায়ক তথা টেলিভিশন অভিনেতা বিকাশ ভল্লা তাঁর স্বামী। ছোট মেয়ে প্রেরণা বিয়ে করেছেন অভিনেতা শরমন যোশিকে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় রাকিতার লেখা প্রেম চোপড়ার জীবনী, ‘প্রেম নাম হ্যায় মেরা, প্রেম চোপড়া’।
১৭১৮
আশির দশকের শেষ দিকে বাবা ও ভাইদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন প্রেম চোপড়া। দিল্লিতে তিনি একটি বাংলো কিনেছিলেন। সেখানে থাকতেন বাবা ও এক ভাইয়ের সঙ্গে। বাংলোর মালিকানা ছিল তাঁর বাবার নামে। দিল্লিতে ভাইকে চাকরি পেতে তিনি-ই সাহায্য করেন বলে দাবি প্রেমের।
১৮১৮
কিন্তু প্রেম চোপড়ার অভিযোগ, মৃত্যুর আগে তাঁর বাবাকে দিয়ে জোর করে উইল লেখানো হয়, সেখানে তিনি ওই বাংলোর মালিকানা থেকে প্রেমকে বঞ্চিত করেন বলে দাবি অভিনেতার। এমনকি, মুম্বইয়ে তাঁর দু’টি বাড়িও তাঁকে না জানিয়ে ভাইয়েরা বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। পরিজনদের কাছে এই ব্যবহার পেয়ে মর্মাহত হন প্রবীণ অভিনেতা। (ছবি: আর্কাইভ ও সোশ্যাল মিডিয়া)