নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছেন ঋত্বিক।
বাংলা সাহিত্যে শ্রীকান্ত ক্লাসিক চরিত্র এবং চলচ্চিত্রে অনেকেই এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কেমন লাগল চরিত্রটা করে?
সত্যিই, শ্রীকান্ত একটা সাঙ্ঘাতিক আইকনিক চরিত্র এবং বাঙালি মাত্রই শ্রীকান্তকে চেনে। আর সাহিত্য ছাড়াও সিনেমাতে শ্রীকান্ত এত ভাবে এসেছে, এটা ঠিক। যদিও উত্তমকুমারের ছবিটা আমার দেখা ছিল না, পরে দেখেছি। কিন্তু সাহিত্যটাই বেশি স্পষ্ট করে মনে আছে। প্রিয় লেখাগুলোর মধ্যে পড়ে, অন্তত ‘শ্রীকান্ত’র প্রথম খণ্ডটা। কিন্তু যখন ছবিটা করতে যাই তখন... যেহেতু স্ক্রিপ্টে প্রদীপ্তর (ভট্টাচার্য) নিজস্বতা আছে এবং আমাদের ছবিতেও দেখা যাচ্ছে যে স্ক্রিপ্টটা প্রথম পর্ব অবলম্বনে, ফলে সাহিত্যের যে শ্রীকান্তকে চিনি তার যে চরিত্র আর এই ছবির যে চরিত্র তার কিছু কিছু পরিবর্তনও আছে। ফলে দিনের শেষে গিয়ে শ্রীকান্ত হলেও সম্পূর্ণ নতুন ভাবে করা একটা শ্রীকান্ত। অনেকে শ্রীকান্তকে নিয়ে ফিল্ম করেছেন ঠিকই। কিন্তু সেটা তো... শরৎচন্দ্রর অনেক লেখাই অনেক বার হয়েছে।
শ্রীকান্ত ধরাবাঁধা জীবনের বাইরে একটা চরিত্র। প্রায় ভবঘুরে।
মজাটা হচ্ছে, প্রচলিত জীবনের বাইরে থাকা চরিত্র সিনেমাতে অনেক হয়। বলতে চাইছি যে এ রকম চরিত্র হামেশাই করি যেগুলো কোথাও না কোথাও গিয়ে রোজের দেখা চরিত্রগুলো নয়। শ্রীকান্তর একটা নোঙরহীন ভেসে বেড়ানো জীবন আছে, দীর্ঘ জীবন, দীর্ঘ জার্নি আছে।
এ রকম চরিত্র হামেশাই করে থাকলে শ্রীকান্ত কতটা আলাদা?
শ্রীকান্ত শ্রীকান্তর কারণেই আলাদা। স্পেশাল চরিত্র ছবিতে করি, আমি বলতে চাইছি সেটা রোজের চরিত্র নয়। যেমন আমার করা ‘শব্দ’-র চরিত্র রোজের লোক নয়। একটা খুব সেক্সুয়ালি পারভার্টেড স্টকারের চরিত্র করেছি (‘ভীতু’)। তো সে-ও রোজের চরিত্র নয়। শ্রীকান্ত যেমন তার নিজের মতো করে আলাদা, সব চরিত্রই তার নিজের মতো করে আলাদা হয়। পরিচালকের নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশন আছে শ্রীকান্ত চরিত্রে। তার ফলে আমার মনে হয় যে চরিত্রটাকে এক ভাবে দেখতেও পাই, চরিত্রটা আলাদাও হয়ে ওঠে।
‘শব্দ’, ‘নির্বাক’, ‘আসা যাওয়ার মাঝে’, ‘ভায়োলিন প্লেয়ার’, ‘ভিঞ্চিদা’, ‘মাছের ঝোল’, ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’। একটার পর একটা অসাধারণ সব চরিত্র।
এই ব্যাপারে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়। সত্যিই একটা সময়ের পর থেকে আমার কাছে নানা রকমের চরিত্র আসতে থেকেছে। এটা কী বলব... সৌভাগ্যের লক্ষ্মণ বলব, কারণ অনেক ভাল অভিনেতা আমাদের দেখা আছে যারা টাইপ কাস্ট হয়ে যান। ভারতীয় ছবিতে অনেক অভিনেতাই টাইপ কাস্ট হয়ে গেছেন। আমি সেই সুবিধেটা (সলজ্জ হাসি) পেয়েছি, নানা রকমের চরিত্র পেয়েছি। নানা চরিত্র করার জন্যই তো অভিনয় করতে আসা। ফলে এটা একটা দারুণ ব্যাপার বলব। খানিকটা সচেতনও হয়তো থেকেছি যে আলাদা আলাদা চরিত্র করব।
দীর্ঘ দিন অভিনয় করলে যেটা হয় অভিনেতার একটা স্টাইল, ম্যানারিজম তৈরি হয়ে যায়। নতুন নতুন চরিত্রে নতুন ভাবে নিজেকে উজাড় করা কতটা সম্ভব?
হুঁ, এটা সত্যি। অভিনেতার চরিত্রে কখনও না কখনও সেই অভিনেতাকেও দেখা যায়, অভিনেতা মানুষটাকে দেখা যায়। সেটা লুকিয়ে রাখাটা সব অভিনেতারই চ্যালেঞ্জ। তেমনই আবার কিছু অভিনেতার নিজস্ব কিছু ধরনও হয়ে ওঠে। মানুষের সেটাও ভাল লাগে। সেটার মোহে পড়ে যায় অনেক অভিনেতা। সেটার স্ট্রং মোহ আছেও। আমি চেষ্টা করি সেটা থেকে বেরতে। আমি জানি যে এটা একটা লাইফ লং প্রসেস। এটা সারা ক্ষণ ট্রাই করে যেতে হয়।
শুভশ্রী, ঋত্বিক ও রাজ
আরও পড়ুন: রানুকে নিয়ে এ বার বায়োপিক, নামভূমিকায় সুদীপ্তা?
আরও পড়ুন: তৃণমূলে কঠোর, বিরোধীতে নরম কেন? প্রশাসনিক সভায় পুলিশকে কড়া ধমক মুখ্যমন্ত্রীর
নিজের কাছেই নিজের চ্যালেঞ্জ?
হ্যাঁ, তাইতো বলছি। এটা লাইফ লং চ্যালেঞ্জ। এক জন অভিনেতার অভিনয়ের ভেতর নিজে বেরিয়ে না আসার চ্যালেঞ্জ সারা ক্ষণই থাকে। আলাদা হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। এটা একটা কঠিন কাজ। এটা চালিয়ে যেতে হয়। বিষয়টা তো এ রকম নয় যে বছরে একটা করে ছবি করলেই পুরোটা ফুলফিল হয়ে যায়... নিজের খিদে থেকে শুরু করে, অর্থনৈতিক ব্যাপারটাও। আমি শুধু নই, আমার আগেও বহু মানুষ... আমার পরেও অনেকে করবেন। যারাই এ রকম ছোট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে তাদের অনেক কাজ করতে হয়। তাদের চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি, আরও অনেক বেশি।
‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’-তে জ্যোতিকা জ্যোতির সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
খুবই ভাল লাগল। রাজলক্ষ্ণী চরিত্রে জ্যোতিকা খুবই অ্যাপ্ট কাস্টিং। সেটার কারণটা লোকে ছবি দেখলে বুঝতে পারবে। আমি আর এখনই ভাঙছি না। ও খুব পরিশ্রম করেছে এই চরিত্রটার জন্য। রাজলক্ষ্ণী পরে পিয়ারিবাই হয়ে যায়। সেই যে বিষয়টা... অনেক প্র্যাকটিস করেছে, গান বা নানা ধরনের নাচের মুদ্রা... এক জন অভিনেতা যখন এতটা প্র্যাকটিস করে, নানারকম হোমওয়ার্ক করে সেটে আসে তার একটা ইমপ্যাক্ট থাকে। সেটা কো-অ্যাক্টর হিসেবে সব সময়ই ভাল লাগার একটা বিষয়।
‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’ ছবির একটি মুহূর্ত।
অপরাজিতার সঙ্গে পর্দা ভাগের সময় ব্যক্তিগত সম্পর্ক মাঝখানে দাঁড়ায়?
না, এটা হয় না। এই বয়সে এসে আর এই ছেলেমানুষির কোনও মানে হয় না। (হাসি) আমার মনে হয় শুধু আমি না, কারওরই হয় না। যদি দু’জনে মিলে অভিনয় করি তা হলে সম্পর্কটা মাথায় আসার কথা নয়। যদি আসে তা হলে আমরা অভিনয় করছি না।
শুভশ্রী কেমন পারফর্মার?
শুভশ্রীর সম্পর্কে আমার আইডিয়া একেবারেই ক্লিয়ার ছিল না। কারণ ও যে ধরনের ছবি করেছে... যে কারণে ও শুভশ্রী... আসলে সেই ধরনের ছবিতে হিরোইনদের বিশেষ কিছু করার থাকে না, যেটাকে পারফরম্যান্স বলে, যেটা দেখে একটা মানুষকে বোঝা যায় যে সে তার অভিনয়ে কী করে বা না করে। অনেস্টলি বলতে গেলে আমি হয়তো খানিকটা জাজমেন্টাল ছিলামও। সন্দেহ ছিল যে ও কতটা পারফরম্যান্স দিতে পারবে। ‘পরিণীতা’ বেসিক্যালি ওর চরিত্র মেহুলকে নির্ভর করেই এগয়। ফলে দারুণ পারফরম্যান্সের প্রয়োজন ছিল এবং খুবই কঠিন একটা চরিত্র। একটা বড় ট্রান্সফর্মেশনও আছে। ইলেভেন/টুয়েলভের একটা মেয়ে থেকে তার চাকরি, কলেজ... ফিজিক্যাল, মেন্টাল... সাঙ্ঘাতিক ট্রান্সফর্মেশন। এমন তো নয় যে গল্পের ধারাবাহিকতা মেনে শুটিং হচ্ছে। শুটিং হচ্ছে... আগের সিনটা ছোটবেলার, পরের সিনটা বড়বেলার। ও অনেক দক্ষতায় পুরোটা করেছে। ‘নান্দীকার’-এর সোহিনী সেনগুপ্তর কাছে ওয়ার্কশপ করেছে এবং ও এতটাই ইনভলভড ছিল যে গোটা স্ক্রিপ্টটাই মুখস্ত। মানে শুধু নিজেরটা নয়, অন্যের সংলাপও। আমার মনে হয়, যে পারফরম্যান্স দিয়েছে ও... খুবই ভাল। ফার্স্ট ডে সেটের আগে একদমই পরিচয় ছিল না আমাদের। গল্পে খুব প্যাশনেট একটা প্রেমের সম্পর্ক দু’জনের। দুটো চরিত্রের মধ্যে যে কেমিস্ট্রি সেটা খুব চমৎকার ভাবে হয়ে যায়, মানে কোনও রিহার্সাল, কোনও পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই। এটা হয়ে যেতে পারে যদি অভিনেতা নিজের মতো করে চরিত্রর দিক থেকে রেডি হয়ে আসে। আর তার পরে পরিচালকের, মানে রাজের একটা ভূমিকা অবশ্যই ছিল। সবটা মিলিয়ে আমার মনে হয় খুবই ভাল এক্সপিরিয়েন্স।
রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে দ্বিতীয় কাজ। পরিচালক হিসেবে রাজ?
যখন আমি ওর সঙ্গে ছবি করেছিলাম ‘লে ছক্কা’, তখন রাজ পরিণত ডিরেক্টর। তখনই ওর ঝুলিতে একাধিক সুপারহিট। এমনকি প্রথম ছবি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ যখন ও করেছে তখনই ও খুব পরিণত ডিরেক্টর। কারণ তার আগে ও কতগুলো খুবই ভাল ভাল কাজ টেলিভিশনে করেছে, টেলিফিল্ম। তীব্র প্যাশনেট, ভীষণ সিরিয়াস। সারা ক্ষণ সিনেমার মধ্যে ডুবে থাকা একটা মানুষ। মানুষ তো খানিকটা চেঞ্জ হয় বটেই। এতটা সময় গেছে, অভিজ্ঞতা এক ধরনের ফিনিশড একটা বিষয় আনে বলে আমার মনে হয়। সেটা সবার ক্ষেত্রেই হয়। খুব রেগে যেত, আগে যখন শুটিং করেছি। ওই প্যাশন থেকেই হত, ছোটখাট ভুলচুক দেখলেই রেগে যেত। এই ছবিটা করতে গিয়ে দেখলাম একেবারেই রাগল না। আমাদের যে খুব কথা হয় তা নয়। কিন্তু খুব ভাল সম্পর্ক। ওর আগামী ছবিতেও শুভশ্রী ও আমি কাজ করব একসঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy