সুশান্ত ও তাঁর মা।
কখনও তিনি আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল, কখনও বিষাদে ম্লান। এমনই বৈপরীত্যে প্রায়ই দেখা মিলত সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জীবনে। যা নিয়ে তাঁর অপমৃত্যুর চার দিন পরেও আলোচনার অন্ত নেই।
তবে একটা জায়গায় কোনও দিন তিনি নিজেকে বদলাতে পারেননি। সেটি, তাঁর মায়ের প্রতি ভালবাসা।
নিজেকে শেষ করে দেওয়ার আগে, মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার আগে সে কথা চিঠিতে জানিয়ে গেছেন অভিনেতা অকপটে, “আমরা দু’জনেই কথা দিয়েছিলাম, ভাল থাকব। আমরা কেউই সে কথা রাখতে পারিনি। তুমিও না, আমিও না। তাই আজ তোমার ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবি ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার দু’চোখ।’’
কিশোর বয়সে মাকে হারিয়ে কাঁদতে পারেননি তিনি। সেই কান্না আজীবন বুকে বয়ে চির ছুটি নেওয়ার আগে চিঠির প্রতি অক্ষরে ঝরলেন অঝোরে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের কিনারায় ব্যাকফ্লিপ! দেখলে বুক কেঁপে যেতে পারে
মায়ের সঙ্গে সুশান্তের বোঝাপড়া জানতে গেলে ফিরতে হবে সুশান্তের কিশোর বেলায়। ওই বয়সে তাঁকে পড়াশোনার জন্য পটনা থেকে দূরে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। মা আর ছেলের তখন থেকেই মনখারাপ শুরু। ২০১৬-র এক সাক্ষাৎকারে সদ্য প্রয়াত অভিনেতা জানিয়েছিলেন, “তুমি দূরে থাক কিন্তু আমার মনের কাছাকাছি থেকো” এই শর্তে তাঁকে বোর্ডিংয়ে ছেড়েছিলেন মা।
আরও পড়ুন: ছিনতাই করতে এসে ডেলিভারি বয়ের কান্না দেখে হৃদয় গলে গেল দুই ‘দুষ্কৃতী’র!
সেই শর্ত মেনে রোজ রাত সাতটা-সাড়ে সাতটার সময় ফোন করতেন ছেলেকে। কথার ভাঁজে সারাক্ষণ একটাই কথা বোঝাতে চাইতেন কিশোর সুশান্তকে। সুশান্তও মেনে নিতেন, মায়ের এই অভিনয়। আর অন্তর থেকে উপলব্ধি করতেন, তাঁকে ছেড়ে মা একটুও ভাল নেই।
এ ভাবেই চলতে চলতে ১১ ডিসেম্বরের রাত সাড়ে এগারোটায় আচমকা ফোন মায়ের, “তুই একবার আসতে পারবি বাবা? কিছুক্ষণের জন্য!” অঝোরে কাঁদছিলেন তখন সুশান্তের মা। ঘটনার ধাক্কায় সুশান্ত আচমকাই যেন পরিণতমনস্ক, “এখন কী করে যাব? স্কুল চলছে। পড়ে যাব।“
মাকে স্বান্তনা দিয়ে আরও বলেন, ‘‘এত কাঁদছ কেন? আমি ভাল আছি।’’
দীর্ঘশ্বাস চেপে মায়ের প্রত্যুত্তর, “সাবধানে, ভাল ভাবে থেকো”। মায়ের কথায় সেদিন যেন বিদায়ের সুর শুনেছিলেন কিশোর সুশান্ত।
পরের দিন সকালে খবর আসে, মা আর নেই! বাথরুমে পড়ে গিয়ে সেরিব্রাল। মাত্র ৪০-এই থেমে যান তিনি। মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও এক ফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারেননি।
মনজুড়ে শুধুই তখন হাহাকার, তোলপাড়, আর অদ্ভুত পরিবর্তন। সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, “তখন থেকেই একটু একটু করে বদলাতে থাকে আগের আমি। কোনও অ্যাচিভমেন্টই আর ছুঁয়ে যেত না আমায় সে ভাবে। বদলে কুরে কুরে খেত একরাশ অপরাধবোধ। আমি মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও কাঁদতে পারিনি!’
পরপারে গিয়ে মাকে ফিরে পেয়ে এত দিনের সেই শোক কি অবশেষে হালকা হল তাঁর?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy