ধোনির বেশে সুশান্ত সিংহ রাজপুত। খড়্গপুর স্টেশনে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
এ যেন ফিরে দেখা ফ্রেম!
সকাল তখন ১০টা। খড়্গপুর স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছে দূরপাল্লার ট্রেন। ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সেই সময় জিরিয়ে নিচ্ছিলেন টিকিট পরীক্ষক সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তড়িঘড়ি যাত্রীদের বেরিয়ে যেতে দেখে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটে গেলেন সুশান্ত। লক্ষ্য অবশ্যই টিকিটবিহীন যাত্রী। শ্যুটিং দেখতে আসা জনতার কাউকে কাউকে তখন বলতে শোনা গেল, বছর ১২-১৩ আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (মাহি)কেও একই ভূমিকায় দেখত খড়্গপুর স্টেশন। কেউ কেউ আবার শুধুমাত্র সুশান্তকে দেখার জন্যই ভিড় জমালেন স্টেশনে। এ ভাবেই ধোনির জীবনী নিয়ে ‘এম এস ধোনি- দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমার শ্যুটিং ঘিরে এ ভাবেই নস্ট্যালজিয়ায় ভাসল রেলশহর। পরিচালক ‘আ ওয়েডনেসডে’, ‘স্পেশ্যাল ২৬’ খ্যাত নীরজ পাণ্ডে। সিনেমায় ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করছেন সুশান্ত।
গত অক্টোবরে খড়্গপুরের সেরসা স্টেডিয়াম, বাংলো সাইড, ধোবিঘাটে ফ্রেমবন্দি হয় ছবির নানা সিকোয়েন্সের শ্যুটিং। ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতেও হয় শ্যুটিং। বৃহস্পতিবার থেকে খড়্গপুর স্টেশনে ফের শুরু হল শ্যুটিং পর্ব। চলবে আগামী চার দিন। ২০০১ সালে ‘স্পোর্টস কোটায়’ রেলে টিকিট পরীক্ষকের চাকরি নিয়ে খড়্গপুরে আসেন ধোনি। সেই সময় গোলখুলির রেল কোয়ার্টারে এক বছর ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়ে মাহি খড়্গপুর ছাড়েন। শ্যুটিংয়েও তাই ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে খড়্গপুরে ধোনির জীবনের নানা মুহূর্ত।
বৃহস্পতিবার সুশান্তর সহকর্মী হিসেবে অভিনয় করেন গোলবাজারের ফল ব্যবসায়ী বিনোদ শঙ্কর। রেলযাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন শহরের একটি কারখানার কর্মী দীনেশ শঙ্কর। বিনোদ, দীনেশদের কথায়, “রেলকর্মীদের কয়েকজন আমাদের পরিচিত। ওঁরাই আমাদের ডেকেছিল। তার পরে পরিচালকের থেকে সব বুঝেছি।’’ তাঁরা বলেন, ‘‘ধোনির জীবনী নিয়ে সিনেমায় অভিনয় করতে পেরে ভাল লাগছে।”
এ দিন সকাল থেকেই শ্যুটিং দেখতে ভিড় উপচে পড়ে বোগদা সংলগ্ন স্টেশন চত্ত্বরে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়ি। শ্যুটিং ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে না দেওয়ায় সাইডিং রেললাইনে দাঁড়িয়েই শ্যুটিং দেখছিলেন শহরের রাজা ভিয়াস, সিরিল লুইস, মোহন সিংহ, রীনা তিওয়ারিরা। তাঁদের কথায়, “সুশান্ত সিংহকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। তাই লাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েছি। তারপরেও আরপিএফ তাড়িয়ে দিচ্ছে।” শুধু চোখে দেখা নয়, শ্যুটিংয়ের নানা মুহূর্ত লেন্সবন্দিও করে রাথেন অনেক উৎসুক দর্শক। মোবাইলে লুকিয়ে সুশান্তের ছবি তুলতে গিয়ে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর হাতে ধরা পড়ে যান বেলদার অনূপ হালদার। তিনি বলছিলেন, “বাড়ি ফিরছিলাম। শ্যুটিং দেখে দাঁড়িয়ে পড়ি। এত কাছ থেকে নায়ককে দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি।”
ট্রেন ধরার ফাঁকে সুযোগ পেয়ে অনেকে দেখে নিয়েছেন শ্যুটিং। বাঁকুড়ার ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন কলেজ ছাত্রী দীপশিখা ডালমিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন পেতে এখনও এক ঘণ্টার অপেক্ষা। প্রিয় নায়ককে সামনে থেকে দেখতে পেয়ে ভাল লাগছে।” তবে শ্যুটিংয়ের জেরে ভোগান্তিতেও পড়েন অনেক যাত্রী। এ দিন কটকের ট্রেন ধরতে স্টেশনে এসেছিলেন চিরঞ্জিত দত্ত। তাঁর কথায়, “ট্রেন আসবে শুনে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে গিয়েও বাধা পেলাম। তারপরে চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ঘুরেও যেতে পারলাম না। স্টেশনে শ্যুটিং চলতেই পারে। কিন্তু এ ভাবে যাত্রীদের হয়রানি ঠিক নয়।”
যদিও বিষয়টি নিয়ে রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার মুরলিধর সাহু বলেন, “যাত্রীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমরা প্রযোজনা সংস্থাকে প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা থাকলে শ্যুটিং করার কথা বলেছি। ট্রেনের সূচিতেও কোনও রদবদল করা হয়নি।” স্টেশন মাস্টার এন কে মণ্ডল জানান, আজ, শুক্রবার থেকে স্টেশনের সাত ও আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম শ্যুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy