উৎসবের রঙে রঙিন টলি তারকারা।
পাড়ায় পাড়ায় চেনা গান, ‘রং বরষে ভিগে চুনরওয়ালি’। তারকারা আজকের দিনে একান্ত অবসরে। কেউ প্রাণ ভরে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছেন সারা দিন। কেউ ইতিমধ্যেই রঙিন। আবার কেউ কেউ এখনও ভেবে উঠতে পারেননি, খেলব হোলি রং দেব না... এটা বাস্তবে সত্যিই হয় কিনা! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী-রাজ চক্রবর্তী হয়ে দেবশ্রী রায়। প্রত্যেকে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ভাদ করে নিলেন তাঁর দোলের দিন।
বুম্বাদা আজ বাড়িতে। ছুটির দিনে ঠিক যে ভাবে নিজের বাড়িতে সময় কাটান, আজকের দিনেও তাই-ই। উৎসবের দিন হলেও স্পেশাল কোনও পদ নেই দুপুরের খাওয়ায়। তবে এ বছর কলকাতায় একমাত্র ছেলে তৃষাণজিৎ আছে। একই ছবি সাংসদ-তারকা মিমি চক্রবর্তীরও। '২১-এর নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে দোলের আগের দিন, ২৭ মার্চ থেকে। প্রতি দিন তাই তাঁর প্রচারের দিন। প্রচার করতে বেরিয়েই দিন ২ আগে পায়ে বড়সড় চোট পেয়েছেন শাসকদলের সাংসদ। যদিও তাঁর প্রচার থামেনি। উৎসব উপলক্ষে এই একটি দিন ছুটি পেয়েছেন। বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে সেই ছুটি উপভোগে ব্যস্ত মিমি! একই সঙ্গে বিশ্রামও হয়ে যাচ্ছে। তার পর? সময় কাটানোর জন্য চিকুর সঙ্গে খেলাধুলো তো আছেই। এই দলেই রয়েছেন ঈশা সাহাও। ‘‘ছুটি পেয়েছি। তাই সারাটা দিন আয়েশ করে ঘুমব। বাড়িতে পুজো হচ্ছে। তার মানেই সিন্নি হবে। আর মায়ের হাতের স্পেশাল মেনু তো আছেই। এর পরে আর বাইরে যেতে হয় নাকি!’’ যুক্তি ঈশার। পাশাপাশি এও জানালেন, কোনও দিন রঙের মাতামাতিতে নেই তিনি। বরং দেখতে বেশি ভালবাসেন। কলেজ বেলায় বেরতেন। একটু আধটু রং খেলেননি, তেমনটাও নয়। কিন্তু হুল্লোড়ে মাতেননি। এ বছরেও অতিমারি রয়েছে। ফলে, নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে তিনি বন্ধু, আড্ডা, রং থেকে শত হাত দূরে। ‘‘কাজের জন্য বেরতে বাধ্য। অকারণে বেরিয়ে কেউ বিপদ ডেকে আনে?’’ প্রশ্ন তাঁর।
দোল খেলবেন না দেবশ্রী রায়ও। অথচ ছোটবেলায় দিদি, জামাইবাবু, দাদা, পরে বোনঝি রানি মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কত রংই না খেলেছেন! রং খেলার কথা উঠতেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন অভিনেত্রী, প্রাক্তন বিধায়ক। এও জানালেন, ‘‘অভিনেত্রী হওয়ার পর থেকে আর দোল খেলি না। এক বার রং খেলে কী কাণ্ড! লুকিয়ে এমন রং আমার চুলে মাখানো হয়েছিল যে, তুলতে গিয়ে প্রাণ বেরনোর দশা। পার্লারে গিয়ে আরেক কীর্তি। অ্যামোনিয়া দিয়ে সেখানে রং তোলা হয়েছিল। চুলের দফারফা। তার পর থেকে আর ভয়ে দোল খেলি না।’’ এ বছর বাড়িতে একদম নিজের মতো করে দিন কাটাচ্ছেন। আর অনুরোধ জানিয়েছেন, নিছক মজা করে রাস্তার অবোলা জীবদের গায়ে যেন কেউ রং না দেন। ওদের স্নান করানো যায় না। রঙে খুব কষ্ট পায় কুকুর, বেড়াল, পাখিরা। নীরবে সহ্য করে যায় বলে কেউ টের পায় না।
টলিউডের কিছু তারকা যদি আপন মনে ঘরের কোণে দিন কাটান, তবে আরেক প্রথম সারির নায়িকা-রাজনীতিবিদ কিন্তু উল্টোটাই করছেন। তিনি শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, বরাবরই তিনি হুল্লোড়ে মাততে ভালবাসেন। একটা সময় দিদি, জামাইবাবু, বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে দোলও খেলতেন। এ বছর? একটি নিউজ চ্যানেলের আমন্ত্রণে শ্রাবন্তী আজ সারাদিন গঙ্গাবক্ষে ভাসমান! আহিরিটোলা ঘাট থেকে সাজানো লঞ্চে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাবেন দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ। জলের বুকেই ফাগ, আবিরে রঙিন হবেন। আর? শ্রাবন্তীর মায়ের বাড়িতে গোপাল আছেন। আজ তাঁর দিন। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও পুজো হবে সেখানে। সন্ধেয় কি সেখানেই থাকবেন তিনি সপরিবারে? খাওয়াদাওয়াও সেখানেই? শ্রাবন্তীর কথায়, ‘‘সকালের পর্ব না মিটলে কিচ্ছু বলতে পারছি না। দেখা যাক কী হয়।’’
দোল উদযাপন করবেন শুভশ্রী-রাজ চক্রবর্তীও। তবে সন্ধেয়। শুভশ্রীর দিদি দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, টানা প্রচারের ফাঁকে এই একটি দিন ছুটি পেয়েছেন ব্যারাকপুরের প্রার্থী। তাই সকালটা তিনি শুধুই পরিবারের সঙ্গে। শুভশ্রী আর একমাত্র ছেলে ইউভানকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। বিকেলে নিমন্ত্রণ আছে বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে দোলের ‘পাওরি’ হবে। হয়তো অল্প রং খেলাও হবে। ইউভান? রাজের ‘সিম্বা’ থাকবে না? দেবশ্রীর দাবি, ইউভান হইচই করতে ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু আজ পার্টিতে ওর প্রবেশ নিষেধ! যদিও দিন কয়েক আগেই মায়ের সঙ্গে জমিয়ে প্রথম পার্টি সেরে নিয়েছে 'রাজ'পুত্র।
সবাই কোনও না কোনও ভাবে উপভোগ করছেন উৎসব। তার মধ্যেই বেসুরো বেজেছেন ২ তারকা। এঁরা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এঁরা কেউই বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে নেই। কোথায় রয়েছেন শাশ্বত-ঋতুপর্ণা? অভিনেতার স্ত্রী মহুয়া জানিয়েছেন, শাশ্বত পুণেতে। ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং উপলক্ষে। দোলে সারাদিন সেখানেই হোটেলবন্দি। মিস করছেন নিশ্চয়ই পরিবারকে, দোলকে? মহুয়ার দাবি, যত না দোলকে তার থেকেও পরিবারকে মিস করছেন শাশ্বত। দোলের দিন আগে জ্যাঠতুতো দাদা, ভাই, বোনদের নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে আবির খেলা হত। বিকেলে বাড়িতে বৈঠকি আড্ডা, ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়া। দিনটা কেটে যেত বেশ। এ বছর সবার থেকে, সব কিছু্র থেকে দূরে অভিনেতা। মন তো খারাপ হবেই! বাড়ির জন্য মনেকেমন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তেরও। সদ্য করোনায় ভুগে উঠলেন। আগের থেকে যদিও অনেকটাই সুস্থ। কিন্তু এখনও নিজের বাড়ি ফিরতে পারেননি। এ বছরের দোলে তাই পুরনো স্মৃতিই সম্বল, ‘‘মায়ের কাছে থাকলে পুজোর উপোস করতাম। সত্যনারায়ণের সিন্নি খাওয়ার লোভে। বাবা যতদিন ছিলেন, খুব রং খেলতাম। ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়ে রং খেলা শুরু হত।’’ অভিনয়ে আসার পর থেকে দোলের দিন কিছু না কিছু প্রোমোশন থাকেই। পরিবারের সঙ্গে থাকলে ছোটরা আবির দেয় অভিনেত্রীকে। ওরা আবিরে রঙিন করে তাঁকে। বলতে বলতেই হঠাৎ গলায় উচ্ছ্বাস, ‘‘এ বছর চ্যানেলের নাচের রিয়্যালিটি শো-এ অতিথি বিচারক হয়ে এসেছিলাম। মিঠুন চক্রবর্তী, দেব, মনামী ঘোষ ছিলেন। খুব মজা করেছি। রং খেলেছি। নেচেছি। প্রতিযোগীদের নাচ দেখেছি। এটাই আমার এ বছরের দোলের স্মৃতি।’’
অপরাজিতা আঢ্য, তিনি কোভিডজয়ী। উৎসবের দিনে আবারও তাই স্বমহিমায় অপরাজিতা আঢ্য। আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন, ''আমার নাচের স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গেই সকাল থেকে ছোট্ট করে রং খেলায় মেতেছিলাম। নাচ-গানও হয়েছে। পুরোটাই আমার ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে।'' ফুলের গয়নায় অপরাজিতা যেন ফুলকুমারী। বাড়িতে কী হচ্ছে অভিনেত্রীর? অকপট স্বীকারোক্তি, ''যেহেতু কোভিড, মৃত্যুর কারণে বাড়িতে কোনও পুজোই হয়নি তাই সত্যনারায়ণ পুজো হবে আজ।'' জমিয়ে রান্নারও তাই উপায় নেই। তবু পেটপুজো না করলে হয়! অভিনেত্রীর কথায় পোলাও, চিলি পনীর, আলুর দমের গন্ধে নাকি বাড়ি ম-ম করছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy