কঙ্গনা রানাউত
দেশ-কাল-পাত্র নির্বিশেষে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সঙ্গে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসাজশ বারবার শিরোনাম হয়েছে। রাজীব গাঁধীর বন্ধু হিসেবে কংগ্রেস রাজনীতিতে যোগ দেন অমিতাভ বচ্চন। ইলাহাবাদ থেকে এমপি-ও হয়েছিলেন। জয়া বচ্চন, জয়াপ্রদার মতো অভিনেত্রীরা কেরিয়ারের নতুন ইনিংসে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। এক সময়ে বলিউডের একটা বড় অংশের সমর্থন কংগ্রেসের দিকে ছিল। ইন্দিরা গাঁধীর সময় থেকে বলিউডে এই ‘রিচ আউট’ করা হত। তবে এখনকার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেরিয়ার বাঁচিয়ে রেখে, মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির তাবড় নামজাদাদের চক্ষুশূল হয়েও, বিজেপির ধ্বজাধারী হয়ে ওঠার মতো দৃষ্টান্ত বোধহয় একমাত্র কঙ্গনা রানাউত। নিন্দুকেরা বলে, গত কয়েক বছরে কঙ্গনার ক্রমবর্ধমান প্রতাপের পিছনে বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদত। এই দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার জন্যই কি নানা ঝড়ঝাপটা সামলেও কঙ্গনা হারিয়ে যাননি মুম্বইয়ের অতল সাগরে? আসলে সত্যিটা কী? কঙ্গনার বিজেপিকে সমর্থন এবং কখনও সেই দলের হয়ে, কখনও নিজস্ব কারণে তাঁর নানা রকম বক্তব্য পেশ— কাকতালীয় নয়। এর একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। কঙ্গনার ‘কর্মকাণ্ড’ বুঝতে গেলে সে দিকেও তাই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মোদী সরকারের শাসনকালের গোড়ার দিকে শাহরুখ খান, আমির খানের মতো তারকারা ভয়ের পরিবেশ, অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। পরে যদিও এঁরা চুপচাপ হয়ে যান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিজেপির দিক থেকেও একটা ‘রিচ আউট’ শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, ‘উরি...’-র মতো দেশাত্মবোধক সিনেমার ঢেউ আসতে শুরু করে। সে সময়ে কঙ্গনা রানাউত, বিবেক ওবেরয়, অনুপম খেরের মতো তারকারা সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন করা শুরু করেন। উল্টোদিকে কংগ্রেসে যোগ দেন ঊর্মিলা মাতণ্ডকর। মোদী সরকারের বিরোধিতার পাল্টা ঢেউ আসতে শুরু করে নাসিরুদ্দিন শাহ, অনুরাগ কাশ্যপের মতো সেলেবদের কাছ থেকে। ‘রিচ আউট’ প্ল্যানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দেখা করেন রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্ট, কর্ণ জোহর-সহ বলিউডের তাবড় তারকাদের সঙ্গে। ২০১৮ থেকে বিজেপি-র সঙ্গে এই সেলেব যোগাযোগ ক্রমশ পূর্ণ অবয়ব পেতে থাকে। নিতিন গডকড়ী এ ব্যাপারে তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। অক্ষয়কুমার, সলমন খান, সেলিম খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখাও করেছিলেন। অফিশিয়ালি সে সময়ে তাঁরা একটা ক্যাম্পেন করতেন ‘সম্পর্ক সে সমর্থন’ নামে। এর ফলে দেখা যায়, আমির-শাহরুখের মতো যাঁরা ভয়ের আবহ, অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন, তাঁরা পুরোপুরি চুপ করে যান। হয়তো তার পিছনেও কোনও কারণ ছিল। তা প্রকাশ্যে না এলেও পরে বিজেপি খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলিউডে ‘রিচ আউট’ ক্যাম্পেন করে, যার ফলে কঙ্গনা, বিবেক, অনুপমের মতো তারকার সমর্থন পায়।
কঙ্গনা ও বিজেপির এই মিথোজীবিতাকে রাজনৈতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ইকো-সিস্টেম’। এখানেই প্রশ্ন ওঠে যে, কঙ্গনার সঙ্গে কি তা হলে বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে? তা হয়তো নয়, তার দরকারও পড়ে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy