ফেডারেশনের আইন ছবি পরিচালনা করতে দিচ্ছে না তাঁকে, এই অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বাধীন পরিচালক বিদুলা ভট্টাচাৰ্য। দায়ের করেছিলেন মামলা। বুধবার আনন্দবাজার ডট কম প্রথম জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সেই মামলা আদালতে উঠবে। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মাননীয় বিচারপতি ফেডারেশন এবং সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের উদ্দেশে নির্দেশ দিয়েছেন,পরিচালককে যেন কোনও ভাবে তাঁর কাজে বাধা দেওয়া না হয়। পরের শুনানি আগামী ৩ এপ্রিল। আনন্দবাজার ডট কম বিদুলার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু ইতিবাচক। এটাই স্বস্তি দিচ্ছে।"
পরিচালক গিল্ড সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে গত বছর একাধিক অভিযোগ জানিয়েছিল। তার মধ্যে দু'টি অভিযোগ গুরুতর। এক, ফেডারেশনের নিয়মের কারণে কোনও পরিচালক বাংলায় শান্তিতে কাজ করতে পারছেন না। দুই, স্বরূপ পরিচালক, প্রযোজকদের ৬০ শতাংশকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। এর পরেই পরিচালকদের বড় অংশ তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করেন। তারও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। এই দিকেও আজ আলো ফেলেন বিচারপতি। সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কেন পরিচালকদের আনা অভিযোগ রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখেনি? আইনজীবীর কাছে যদিও এর সদুত্তর ছিল না। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এর আগে কোনও পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আগামী শুনানির দিন তিনি এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ দিন আদালত স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও সরব হয়। তবে ফেডারেশন সভাপতি এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগের চেষ্টা করলে বরাবরের মতো এ দিনও তিনি নীরব।
পরিচালক বিদুলার প্রথম বড় ছবি 'প্রেম আমার ২'। প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী। ছোট পর্দায় ছবি পরিচালনা দিয়ে তাঁর হাতেখড়ি। ঠিক কী হয়েছিল পরিচালকের সঙ্গে? প্রশ্ন রাখতেই ক্ষোভ উগরে দেন বিদুলা। বলেন, "ফেডারেশনের আইনের দাপটে আমাদের নাভিশ্বাস দশা। বিশেষ করে আমার মতো ছোট, স্বাধীন পরিচালকদের। আমরা অনেক কষ্ট করে প্রযোজক জোগাড় করি। আর সংগঠনের নিয়মের ধাক্কায় তাঁরা চলে যান।" বিদুলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বাধ্য হয়ে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর প্রশ্ন, "আমরা পরিচালকেরা স্বাধীন ভাবে কাজ করব, সেটাই দস্তুর। সারা দেশ সেই নিয়মেই চল। ব্যতিক্রম বাংলা।" তাঁর মত, দেশের যে মূল সংগঠন, সেই জাতীয় ফেডারেশনের কথাও বাংলার ফেডারেশন শোনে না! নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন বানায়, আবার ভাঙে। এই অনিয়ম আর কত দিন চলবে? প্রশ্ন বিদুলার।
আরও পড়ুন:
তিনি একুশে আইনের কিছু নমুনাও দিয়েছেন। ফেডারেশনের বেছে দেওয়া কর্মীকে নিয়ে কাজ করতে হয় পরিচালকদের। স্বাধীন ভাবে টেকনিশিয়ান বাছা যায় না। আউটডোর শুটিংয়ের সময় ফেডারেশন অতিরিক্ত কর্মী জোর করে গছিয়ে দেয়। এতে প্রযোজকের ব্যয় বাড়ে। 'গুপি শুটিং' শব্দবন্ধ নিয়েও আপত্তি তাঁর। পরিচালকের দাবি, কেউ কোনও গোপন কাজ করেন না। ফেডারেশনের অযথা নাক গলানোয় বিরক্ত হয়ে নিজেদের মতো করে কাজ করার চেষ্টা করা হয়। চাইলেও পরিচালক টেকনিশিয়ানের ব্যয় কমিয়ে ভাল ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন না। ফেডারেশন এ বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আফসোসও করেছেন বিদুলা। জানিয়েছেন, ফেডারেশনের জন্যই কেউ বাংলায় কাজ করতে চাইছেন না। লগ্নি হচ্ছে না। ছবির সংখ্যা কমছে। তাঁর শঙ্কা, "২০২৫-এর শেষে দেখা যাবে, গত বছরের থেকেও এ বছর হয়তো ছবির সংখ্যা আরও কমবে।" এই জায়গা থেকেই বিদুলার বক্তব্য, "পরিচালক গিল্ড ভাগাভাগি হয়েছে। সদস্য কার্ড এবং শংসাপত্র না পাওয়ার ফলে সমান্তরাল ভাবে এক ঝাঁক পরিচালক, টেকনিশিয়ান উঠে আসছেন। এঁরা গিল্ড, ফেডারেশন-- কোনওটারই আওতাভুক্ত নন। এঁরা কিন্তু আগামীতে স্বাধীন ভাবেই কাজ করবেন।"
বছরের শুরুতে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজিয়া বেঁধেছিল ফেডারেশনের। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের কাজ। প্রসঙ্গ তুলতেই কথা কেড়ে বিদুলা বলেছেন, "তা হলেই ভাবুন, জাতীয় পরিচালকও ফেডারেশনের হাত থেকে রেহাই পান না! প্রকাশ্যে প্রত্যেককে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। বিদুলা ভট্টাচাৰ্য সেই পথে হাঁটবে না। তাই আদালতে গিয়েছি। আশা, শেষ পর্যন্ত আমিই জিতব।"