Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘গেরুয়া’ তৈরি হয়েছে মাত্র আধঘণ্টায়

বললেন প্রীতম। ‘দিলওয়ালে’র গানের সাফল্যের পর তাঁকে পাওয়া মুশকিল। তবু ফোনে ধরলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়দিন বা রাত আলাদা করে জীবনে নেই। আছে শুধু ঘুমের সময়, সকাল ৭টা থেকে ১১টা। সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের বাদবাকি সময় কাজ আর খাওয়া। বলছিলেন, ‘‘খেতে খেতে মোটা হয়ে যাচ্ছি।’’ সাক্ষাৎকার, আড্ডা বা গান তৈরি—এ সবের জন্য মাঝরাতই তাঁর পছন্দ। রাত বারোটায় ডিনার সারতে সারতেই শুরু হল কথা।

গেরুয়া: শাহরুখ-কাজল

গেরুয়া: শাহরুখ-কাজল

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

দিন বা রাত আলাদা করে জীবনে নেই। আছে শুধু ঘুমের সময়, সকাল ৭টা থেকে ১১টা। সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের বাদবাকি সময় কাজ আর খাওয়া। বলছিলেন, ‘‘খেতে খেতে মোটা হয়ে যাচ্ছি।’’ সাক্ষাৎকার, আড্ডা বা গান তৈরি—এ সবের জন্য মাঝরাতই তাঁর পছন্দ। রাত বারোটায় ডিনার সারতে সারতেই শুরু হল কথা।

আপনার বাড়িতে নাকি অহোরাত্রি বরুণ ধবন আর শাহরুখ খান নিয়ে লড়াই চলছে?

আর বলবেন না! আমার বৌ শাহরুখের অন্ধ ভক্ত আর আট বছরের ছেলে বরুণ ধবন ছাড়া কাউকে চেনেই না। ‘দিলওয়ালে’র কাজে হাত দেওয়ার আগে কার লিপে আমি বেস্ট গানটা দেব সে নিয়ে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

কিন্তু জিত হল সেই শাহরুখের ‘গেরুয়া’র। ১.৬ মিলিয়ান লাইক শুধু নয়, এখন তো ‘গেরুয়া’ দেখার ১০টা কারণ বলে আলাদা স্টোরিও হচ্ছে।

অথচ জানেন গানের অন্তরাটা জাস্ট ৪৫সেকেন্ডে লেখা! উফফ্ সে এক সময় গিয়েছে!


‘দিলওয়ালে’র বিখ্যাত গান ‘জনম জনম’। প্রীতমের সুরে

মানে কী হয়েছিল?

শাহরুখ রাতের ফ্লাইটে মুম্বই থেকে বুলগারিয়া যাবে। ‘মন্নত’ থেকে বেরিয়ে ও আমার স্টুডিয়ো আন্ধেরিতে আসছে। গানটা নেবে, তার পর ফ্লাই করবে। আমি বসে একটা সুর ভাঁজছি আর অমিতাভ (ভট্টাচার্য) ফস করে লিখে ফেলল, ‘‘রাজে কি দিল সি নিকলি হ্যায় দুয়া/রং দে মুঝে গেরুয়া’’ আমি বললাম এই রে! ‘গেরুয়া’ কেন রে? ওটা তো বাংলা শব্দ। (আমি তখনও জানি না ওটা সংস্কৃত শব্দ। হিন্দিটা আজও নড়বড়ে আমার। শব্দটা হিন্দিতে ব্যবহার হয় জানতাম না) ও বলল, ‘‘দ্যাখ না, এতেই হবে।’ অমিতাভের কিন্তু অসম্ভব আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি অমিতাভের সঙ্গে ঝগড়াও করি। আবার জানি যে ও দারুণ কিছু লিরিক তৈরি করবে। হল কি! শাহরুখ তখন আমার স্টুডিয়ো-র দরজায়। অন্তরা তখনও হয়নি! কী যে টেনশন! ৪৫ সেকেন্ডে অন্তরা তৈরি হল। শাহরুখ এসে গান শুনে বলল, ‘‘আধঘণ্টায় যে-গান এত ভাল তৈরি হয় সেটাই বেস্ট’’। আমরা অন্য ভার্সানও আগে তৈরি করেছিলাম। ও তো শুনলই না। উল্টে বুলগারিয়া গিয়ে শ্যুট ক্যানসেল করে ‘গেরুয়া’র জন্য আইসল্যান্ডে শ্যুট হল। পরিচালক রোহিত শেট্টিও বলেছিল ‘‘দারুণ গান।’’ কত গান আছে যেগুলো এক মাস ধরে তৈরি হয়েছে, চলেনি। অথচ এই গানটা ভাবুন!

আপনার হঠাৎ তৈরি হওয়া গানের সুপারহিট হওয়ার প্রবণতা আছে না?

আমার বিয়ের রিসেপশনের দিন শাহিদ (কপূর) হঠাৎ বলল, ‘‘আমাকে আজই গান দাও। শ্যুট করতে পারছি না। খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’ রাত আড়াইটেয় ফিরে ভোর চারটের মধ্যে ‘নাগাড়া বাজা’ তৈরি হল। ইমতিয়াজকে কত বার বলেছিলাম ওই গানটা নেবেন না। ওই গান খুব বাজে। হিট হওয়ার পর যখনই গানটা বাজত ইমতিয়াজ বলতেন, ‘‘স্যর আপনার ফ্লপ গান বাজছে দেখুন।’’

‘তমাশা’র গান শুনেছেন? ‘রকস্টার’ আর ‘জব উই মেট’য়ের ‘প্রীতম-ইমতিয়াজ’ জুটিটা এ বার ভেঙে গেল যে!

রহমান সাব দারুণ কাজ করেছেন। আমি শুনেছি গানগুলো।

আপনি ‘গেরুয়া’ গানটা ফাইনাল কবে দেখলেন?

শাহরুখই আমায় দেখিয়েছিল। বাপ রে! গান শুনব কি? আমি ততক্ষণে আইসল্যান্ড দেখে পাগল! শাহরুখ আমায় গল্প করেছে ও একেবারে প্রকৃতি-প্রেমিক নয়। দারুণ শহর ভালবাসে। ও ট্রাভেল করলে ম্যানহাটান যাবে, দুবাই যাবে। কিন্তু আইসল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ও প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছে। দেখবেন, বাঙালিরা বলে মৃত্যুর আগে এক বার অমুক জায়গায় ঘুরে আসবই। আমি এখন বলি মৃত্যুর আগে আমাকে আইসল্যান্ড যেতেই হবে।

শুনেছি শাহরুখ-কাজলের এই রোম্যান্টিক সং রেকর্ডের জন্য আপনি নাকি অলকা যাজ্ঞিক আর উদিত নারায়ণকে দিয়ে গাওয়াবেন ভেবেছিলেন?

আমাকে সবাই বলেছিল শাহরুখ–কাজলের লিপে অলকা যাজ্ঞিক-উদিত নারায়ণ বা সোনু নিগমকেই গাওয়ানো উচিত। ভাবলাম, শাহরুখ- কাজলের কেমিস্ট্রির মধ্যেই তো নাইনটিজের এফেক্টটা আছে। গানের ক্ষেত্রে আজকের রোম্যান্টিসিজম ধরতে অরিজিৎ-অন্তরাকে দিয়ে গাওয়ালাম।

এখন তো অরিজিৎ ছাড়া আপনি আর কারওকেই ভাবতে পারেন না! প্রীতম না থাকলে কি অরিজিৎ সিংহের এত নাম হত?

এই ইন্ডাস্ট্রিতে ফ্রেশ ভয়েসের খুব দরকার। অরিজিৎকে এখনও ইন্ডাস্ট্রি জাস্ট পাঁচ পারসেন্ট ব্যবহার করেছে। এখনও অনেক পথ বাকি।

শ্রেয়া ঘোষালেরও কিন্তু এক বছর যাবৎ কোনও অ্যালবাম নেই...

না, না, আমার মনে হয়, শ্রেয়া আর সুনিধি (চহ্বাণ) এখন টপে আছে। শ্রেয়া হয়তো ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই অ্যালবাম করেনি। তবে এখানে একটা কথা বলি, ভারতে রিয়েলিটি শো নতুন প্রজন্মের প্রতিভাকে তুলে ধরছে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এটা বিরাট ব্যাপার কিন্তু।

আপনি নিজে তো রিয়েলিটি শোয়ে জাজ হতে চান না শুনেছি।

আমার সময় হয় না। শুনুন আমার মিউজিক ডিরেক্টর হওয়ার কোনও প্ল্যান ছিল না। হঠাৎই এফটিআইআই-তে চান্স পাই। সাউন্ড নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে গিটার বাজাতাম। রাজু হিরানি একদিন বললেন, ‘‘অ্যাড ফিল্ম-য়ে মিউজিক করে দে।’’ এ ভাবেই শুরু। মুম্বইয়ে এলাম। পকেটের টাকা বুঝে আমার মতোই তখন মুম্বইয়ের অনেক মিউজিশিয়ন দুপুর বা রাতের মেনু ঠিক করত। এখন রিয়েলিটি শোয়ের খাতিরে অল্পবয়সি গায়ক-গায়িকারা মুম্বই আসছে অলরেডি পাবলিক শোয়ে টাকা রোজগার করতে করতে। বিজনেস ক্লাসে ট্রাভেল করে তারা মুম্বইয়ে স্ট্রাগল করতে আসছে। ভাবুন না, রিয়েলিটি শোয়ের এক্সপোজার না পেয়ে কখনও মছলন্দপুর থেকে অন্তরা বা জিয়াগঞ্জ থেকে অরিজিৎ মুম্বইয়ে আসতে পারত?

এত কিছুর পরেও কিন্তু মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি কোথাও থেমে যাচ্ছে। সিডি-র জমানা শেষ। ভাল মেলোডি বা লিরিক্সেরও দরকার নেই!

এটা একটা ফেজ। ইউটিউব চ্যানেল বা আইটিউনসে গানকে আসতে হবে। নয়তো কিছুই হবে না। নতুন প্রজন্ম যা চাইবে আমাদের মানতে হবে। তারা নাচের গান চাইলে তাই দেব। কিন্তু ভাল মিউজিশিয়ান ঠিক ওই বিটের মধ্যে থেকেই দারুণ কিছু একটা কম্পোজ করবেন। তবে একটা কথা ঠিক। মেলোডি আর লিরিক্সের জায়গাটা আমাদের দেশে এখন বড় করে দেখা হয় না।

মানে?

আগেকার দিনে রেডিয়োতে চিত্রহারের মতো অনুষ্ঠান হলে, গান হয়ে যাওয়ার পর ঘোষণা হত, গান লিখেছেন আনন্দ বক্সী। সুর লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল। এখন আর্টিস্টের নাম ধরে গানের পরিচিতি। অমুকের গান কে লিখেছে, কে সুর দিয়েছে — কেউ জানে না। কিন্তু এ বার বদলাতে হবে, নইলে নতুন প্রজন্ম এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসবে না। ইন্ডাস্ট্রি থেমে যাবে। কেউ মিউজিক ডিরেক্টর হতে চাইবে না, সবাই গায়ক হতে চাইবে। পয়সা কামাবে।

মুম্বইতে একটা ছবিতে পাঁচজন মিউজিক ডিরেক্টর কাজ করছেন...

এটা মারাত্মক। আমি ‘জগগা জাসুস’ করি বা ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ করি সবাই জানে সেগুলো প্রীতমের কাজ। ওদিকে ‘রয়’ ছবিতে পাঁচ জন মিউজিক ডিরেক্টর। লোকে কোন গান কার কী ভাবেই বা মনে রাখবে?

এই কারণেই কি মুম্বইতে জুটির কাজ বন্ধ?

না, এখনও আছে। সাজিদ-ওয়াজিদ। এমনকী ট্রায়োও আছে শঙ্কর-এহসন-লয়।

কিন্তু প্রীতম-জিৎ আর পাওয়া গেল না…

আরে কী মুশকিল। সেই এক প্রশ্ন। জিতের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলা নেই। অকারণ মিডিয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এটাকে দেখে আসছে। ওর গান ভাল হলে ও ফোন করে। আমিও করি। আর শুনুন আমরা দু’জনে একসঙ্গে কাজ করলে অন্য কেউ আর চান্স পেত না।

সে না হয় বুঝলাম। আচ্ছা আপনি কাজলকে দেখে নাকি ‘ফ্রিজ’ হয়ে যান?

শাহরুখ একদম লাভার বয়। হায়দরাবাদে ‘দিলওয়ালে’র সেটে গল্প করেছি ওর সঙ্গে। কিন্তু কাজল শট দিতে এলেই আর আমার পা চলে না।

দীপিকা-প্রিয়ঙ্কার ‘বাজিরাও মস্তানি’তে কাজ করলেন না...

সঞ্জয় লীলা বনশালি কোনও একটা ফেজে ভেবেছিলেন আমায় দিয়ে ‘বাজিরাও মাস্তানি’র মিউজিক করাবেন। কিন্তু আমি ওঁকে বলেছিলাম মরাঠি মিউজিকের লোক আমি নই। বাংলা ফোক, ভাটিয়ালি, সুফিতে আমি কমফরটেবল, তাই ওই কাজ পারব না।

তা হলে ‘বাজিরাও মস্তানি’ আর ‘দিলওয়ালে’র লড়াই জমবে বলছেন?

দেখুন ‘দিলওয়ালে’ রিলিজ ডেটে যদি ৪০ কোটি কামাবে ভেবেছিল, সেটা এখন আর সম্ভব হবে না। কারণ ‘বাজিরাও মস্তানি’র সঙ্গে আয়টা শেয়ার করতে হবে। কিন্তু আমার ইনার ফিলিং বলছে দুটো সিনেমাই চলবে। ‘সাঁওরিয়া’ আর ‘ওম শান্তি ওম’ একই দিনে রিলিজ করেছিল। ‘সাঁওয়ারিয়া’ চলেনি। কী করা যাবে? ফাইনালি যা ভাল লাগবে লোকে সেটাই দেখবে। তবে আজ অবধি রোহিত শেট্টির ছবি ফ্লপ করেনি।

এ বছর তিন খানের ছবিতেই আপনার মিউজিক। আর সেই তিন খানই এখন বিতর্কের মুখে। আমির-শাহরুখের অসহিষ্ণুতা আর সলমনের বেকসুর খালাস...এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

দেখুন, আমির ও শাহরুখের বক্তব্যকে কনটেক্সটের বাইরে এনে জোর করে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। আর সলমনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যা রায় দিয়েছে সেটাই ঠিক। আমরা সকলেই হাইকোর্টের রায়কে মেনে চলি। ওর মতো ব্রডমাইন্ডেড লোক হয় না। জানেন তো এই মনটাই যত গোলমেলে।

মানে?

সেনসেটিভ মন নিয়ে জন্মেছি। সেই জন্যই হয়তো মিউজিকটা করতে পারি। একশোটা ছবি, সাড়ে চারশো গানের সুর করা হয়ে গেল। তবু লোকের ব্যবহারে একটুতেই খুব মনে লেগে যায়।

কী করেন তখন?

গান কমপোজ করি।

প্রীতমের সঙ্গে নানা বিতর্ক জড়িয়ে আছে কিন্তু। শোনা যায় ‘বদতমিজ দিল’...

জানি জানি। আমি নাকি ‘বদতমিজ দিল’ বাংলা গান থেকে কপি করেছি এটাই বলবেন তো? শুনুন অঞ্জন দত্তের ছেলে নীল নিজেই বলেছে ওর গানের সঙ্গে ‘বদতমিজ দিল’য়ের কোনও মিল নেই।

কলকাতায় কার কাজ ভাল লেগেছে

ইন্দ্রদীপ (দাশগুপ্ত) খুব ভাল কাজ করছে। আর শান্তনু (মৈত্র), খুব শিগগির ওর সঙ্গে দেখা করতে হবে। ও দারুণ মানুষ। তবে শান্তনু শুধু তো আর কলকাতার নয়। মুম্বইয়েরও।

কলকাতা আপনাকে পাচ্ছে না কেন? আপনি কি অনেক টাকা চান?

না, আমি যখন ফাঁকা থাকি কলকাতার কেউ কাজের কথা বলে না। আর যখন মুম্বইতে প্রচুর কাজ থাকে তখন কলকাতার কাজের সুযোগ আসে। তবে কলকাতায় যাই কিন্তু আমি। এই তো শীত পড়ছে। নলেন গুড়ের মিষ্টি, ফুলকপির শিঙ্গাড়া খেতেও যাব। আর ঝালমুড়ি। ওই রকম ঝালমুড়ি আর কোথাও পাওয়া যায় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Pritam gerua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE