Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Gazi Abdun Noor

নিষেধ ভেঙে অনেকেই ইদ উদযাপনে ব্যস্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে ঢাকায়

এ বছরের ইদে ঢাকার বাড়িতে আমি একা। আমার জন্মভিটে যশোরে রয়েছেন মা। উদযাপন থেকে নিজেকে দূরে রাখার ওটাও মস্ত কারণ।

গাজী আব্দুন নূর

গাজী আব্দুন নূর

গাজী আব্দুন নূর
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ১৭:০৬
Share: Save:

এ কেমন ইদ! দেশ জুড়ে মৃত্যুমিছিল। হাহাকার, যন্ত্রণার কাতরানি। বাড়িতে বাড়িতে কান্নাকাটি। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও একই অবস্থা। আমার কত কাছের, আপনার জনকে হারিয়েছি মারণ সংক্রমণে। এর পরেও ইদ উদযাপন সম্ভব? তাই আমার বাড়িতে এই প্রথম ইদ উদ্‌যাপনহীন। কোনও রান্না হয়নি। তবে ফোনে, মেসেজে, হোয়াটসঅ্যাপে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সবাইকে। সবাই শুভকামনা বিনিময় করছেন একই ভাবে।

সাময়িক সব ভুলে উৎসবে মাততে মন যে একেবারে চায়নি, তা নয়। পরমুহূর্তে মনে হয়েছে, আমার বাড়িতে উৎসবের হইচই। রান্নাঘরে বিরিয়ানি-হালিম-সিমুইয়ের সুগন্ধ। উল্টো দিকের বাড়িতে তখনই হয়ত স্বজন হারানোর হাহাকার। সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে গিয়েছি। নিজেকে শাসন করেছি, এ বার ইদ না হয় বাড়িতে একাই কাটালাম। যে দিন পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে, সেদিন না হয় সবাই একসঙ্গে আবার আগের মতো করে ইদ উদযাপন করব।

এ বছরের ইদে ঢাকার বাড়িতে আমি একা। আমার জন্মভিটে যশোরে রয়েছেন মা। উদ্‌যাপন থেকে নিজেকে দূরে রাখার ওটাও মস্ত কারণ। অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও খুব ভাল নয়। মায়েরও বয়স হয়েছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে এমন দিনেও আমি মায়ের থেকে দূরে। মা, বাড়ির বাকিরা অন্তত সুস্থ থাকুন। ছেলে নেই বলে মা-ও ভালমন্দ কিচ্ছু রাঁধেননি। বদলে ফোনে, ভয়েস কলে মা-ছেলের দারুণ আড্ডা জমেছে। ঢাকার বাকি আত্মীয়, বন্ধুদের অনেকেই যদিও নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি কোথাও যাইনি। যাবও না।

তা বলে ভাববেন না, বাংলাদেশে ইদ পালিত হচ্ছে না। এরই মধ্যে যিনি যে ভাবে পারছেন, মেতে উঠছেন আনন্দে। বাংলাদেশ সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ অমান্য করে প্রায় সকলেই বাড়িতে গিয়েছেন ইদ উদযাপনের জন্য। সে ক্ষেত্রে নতুন ভাবে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়বে। আমি তাই ভীষণ ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। বেশ বুঝতে পারছি, বর্তমানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির যে অবস্থা, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সেটা আরও খারাপের দিকেই যাবে।

এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস নেটমাধ্যম ছিল! তাই কারোর মুখ দেখতে না পেলেও সান্নিধ্য তো পাচ্ছি। কোলাকুলি অসম্ভব এই পরিস্থিতিতে। তবু তো শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে। আমরা সবাই সবার খোঁজ রাখার চেষ্টা করে চলেছি। এটাই আপাতত করোনার ইতিবাচক দিক। বেশ ভাল লাগছে দেখে। ‘আমি’ থেকে আবার যেন ‘আমরা’য় ফিরছি একটু একটু করে। বর্তমান পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এখন আর একক ভাবে চিন্তা করার সময় নেই।

আরও একটা জিনিস দেখে সত্যিই গর্ব হচ্ছে। কলকাতা এবং বাংলাদেশে আমার বেশ কিছু বন্ধু আর্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কখনও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে, কখনও অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করে। আমি ওঁদের বন্ধু। এটা ভেবেই দারুণ তৃপ্তি। ভীষণ শান্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh dhaka Gazi Abdun Noor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE