সবে মার্চের শুরু। এর মধ্যেই সকাল থেকে সূর্য যেন মধ্যগগনে। গনগনে তাপ ছড়াচ্ছে। সেই তাপ অগ্রাহ্য করে বারুইপুরের বিনোদিনী স্টুডিয়োয় ব্যস্ততা তুঙ্গে। এক দিকে সেটের কাজ চলছে। অন্য দিকে, তাঁর আসার উদ্গ্রীব অপেক্ষা। খবর ছিল, তিনি ১২টা নাগাদ স্টুডিয়োয় ঢুকবেন। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ১১টার ঘরে পৌঁছতেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিলাসবহুল গাড়ি স্টুডিয়ো চত্বরে। একটু দূরে তাঁর জন্য রাখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেকআপ ভ্যান। মুখে মৃদু হাসি। বাংলার ‘মহারাজ’ ধীর পায়ে ভ্যানের অন্দরে।
আগাম খবর থাকায় আনন্দবাজার অনলাইন নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগে শুটিংস্থলে উপস্থিত। শোনা গিয়েছিল, ‘দাদা’ নাকি আবারও বিজ্ঞাপনী ছবিতে অভিনয় করছেন। কিন্তু মেকআপ ভ্যান থেকে যিনি নামলেন তাঁকে দেখে বিমূঢ় সকলে। নির্মেদ শরীরে খাকি উর্দি। চোখ ঢাকা অ্যাভিয়েটর রোদচশমায়। হালকা টিন্ট গ্লাস তাতে। সযত্নে ছাঁটা দাঁড়ি-গোঁফ যেন আরও ব্যক্তিত্ব বাড়িয়েছে। পুলিশি টুপি মাথায় চাপাতেই নিখুঁত পুলিশ অফিসার! কে ইনি?
এ ভাবেই চমকের পর চমক নীরজ পাণ্ডের ওয়েব সিরিজ় ‘খাকী ২’ জুড়ে। মুক্তির আগে শোরগোল ফেলে দিয়েছে সিরিজ়টি। প্রথম পর্বে নীরজ বিহারের অপরাধ জগতের সঙ্গে সেখানকার প্রশাসনিক দিক দেখিয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্ব জুড়ে বাংলা। সেখানকার অন্ধকার দিক, অপরাধ জগৎ এবং পুলিশি ব্যবস্থার গল্প। ২০ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুক্তি পেয়েছে ট্রেলার। এই সিরিজ়ের প্রচার ছবিতে সৌরভ ‘পুলিশ অফিসার’! সকাল থেকে তারই শুটিংয়ে ব্যস্ত তিনি। হাওড়ার ছেলে নীরজ বাংলার গল্প বলতে গিয়ে তাঁর নতুন কাজে জুড়ে নিয়েছেন বাংলার ‘মহারাজ’কেও। ১৫ মার্চ দেখোনো হবে এই বিজ্ঞাপনী ছবিটি।
জানা গিয়েছে, বিজ্ঞাপনী ছবির গল্প অনেকটা এই রকম— ‘খাকী ২’-এ এক পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয়ে ইচ্ছুক ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। তিনি তাই অভিনয়ের পরীক্ষা দিতে পুলিশি পোশাকে সটান পরিচালকের সামনে উপস্থিত। পরিচালক কি তাঁকে মনোনীত করবেন?

নীরজ পাণ্ডের সিরিজ় ‘খাকী ২’-তে ‘পুলিশ অফিসার’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, পরিচালকের ভূমিকায় অয়ন সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
সেটের ভিতরে নকল থানা। সেখানে ছবির মধ্যে ছবির এই বিশেষ দৃশ্যের শুটিং হবে। এই বিজ্ঞাপনী ছবির প্রযোজনায় শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। সেটে ‘দাদা’ আসতেই তটস্থ বাকিরা। শট দেওয়ার আগের মুহূর্তে দ্বিতীয় চমক। টেলিপাড়ার জনপ্রিয় পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত শুটিংয়ে উপস্থিত। পরিচালকেরা সাধারণত যে পোশাক পরে ক্যামেরায় চোখ রাখেন তেমনই সাজ তাঁর গায়ে! মুখোমুখি হতেই হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে হাওয়া! জানা গেল, এই চমকের সৌজন্যে অভিনেতা নির্বাচক অনিমেষ বাপুলি। টলিপাড়া তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়েছে। অয়ন তাই সংসার চালাতে ফুটপাথে খাবার বিক্রি করেন। সে খবর প্রথম জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। অনিমেষ তাঁকে পরিচালকের কুর্সি ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। কিন্তু পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ করে দিতে পারেন। এ ভাবেই বিনোদন দুনিয়ায় আবারও অয়নকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন তিনি।
একা অয়ন নন, সৌরভের সঙ্গে ফ্রেম ভাগ করছেন দেবাশিস রায়ও। দেবাশিস সিরিজ়ে এক সমাজবিরোধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বিজ্ঞাপনী ছবিতে তিনি প্রোডাকশন বয়। ছবির ভিতর ছবিতে সৌরভকে তিনি স্পটবয় হিসেবে চা-খাবার সরবরাহ করবেন। শুটিং অ়ঞ্চল জুড়ে আসল আর নকল পুলিশে ছয়লাপ। একই ভাবে কড়া প্রহরা সেট জুড়ে। এ ভাবেই বেলা আড়াইটে পর্যন্ত বলিউডের এক পরিচালকের তত্ত্বাবধানে শুটিং করেন সৌরভ। তবে তাঁর শুটিং বা জীবনীচিত্র নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
আরও পড়ুন:
দুপুরের খাওয়াদাওয়ার ডাক পড়তেই শুটিংয়ে সাময়িক বিরতি। মঙ্গলবার নিরামিষ খান ‘দাদা’। তাই এ দিন তাঁর জন্য বরাদ্দ পোস্তর বড়া, ব্রক্কোলি-সহ সব্জি সেদ্ধ, কর্ন স্যুপ। রোদের তাপ এড়াতে তিনি দ্রুত পায়ে আবারও মেকআপ ভ্যানে। এ দিন অনেক রাত পর্যন্ত শুটিং তাঁর। একটু বিশ্রাম না নিলে শরীর থাকবে?