Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Television Actors

৫ হিরো: বড় পর্দায় ‘নায়ক’ হতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু ছোট পর্দায় তাঁরা সকলেই বঙ্গজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ

নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতি দিন বহু ছেলেমেয়ে শহরে আসেন। তাঁদের কেউ কেউ হারিয়ে যান। বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ না হলেও বিকল্প পথে পরিশ্রম করে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের জায়গা করেছেন কারা?

Five Bengali serial heroes who tried their luck on the big screen initially but failed

নায়ক হওয়ার ইঁদুরদৌড়ে শামিল না হয়ে বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন টলিপাড়ার পাঁচ প্রথম সারির সিরিয়াল অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ০৮:০০
Share: Save:

স্টুডিয়োপাড়ায় তাঁদের যাত্রা শুরু হয়েছিল বড় পর্দা দিয়েই। সেলুলয়েডে ‘নায়ক’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই টালিগঞ্জে পা রেখেছিলেন। কিন্তু বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ হয়নি। ফলে সেই দৌড়ে পিছিয়েই পড়েছিলেন তাঁরা। তবে ব্যর্থতা এলেও হাল ছাড়েননি। ‘বিকল্প’ হিসাবে বেছে নিয়েছেন সিরিয়াল বা ওয়েব সিরিজ়। নায়ক হওয়ার ইঁদুরদৌড়ে শামিল না হয়ে বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন টলিপাড়ার পাঁচ প্রথম সারির সিরিয়াল অভিনেতা। তবে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও সেলুলয়েডে অভিনয়ের চেষ্টা করছেন। বড় পর্দায় মনের মতো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এলে বাকিরাও সম্ভবত ছাড়বেন না। কিন্তু আপাতত তাঁরা বাঙালির বসার ঘর থেকে হেঁশেল পর্যন্ত অবাধে বিচরণ করছেন।

Gourab Chatterjee

কেরিয়ারের শুরুতেই ধাক্কা খাওয়ার পর বড় পর্দায় কাজের ঝুঁকি নেননি। ছোট পর্দার রাজত্বে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন গৌরব। ছবি: সংগৃহীত।

গৌরব চট্টোপাধ্যায়

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের যোগ অনেক বছরের। গৌরবের দাদুর নাম উত্তমকুমার। দাদুর পথেই হেঁটেছেন নাতি। ২০০৬ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘ভালবাসার অনেক নাম’ ছবিতে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল তাঁর। প্রথম ছবি মুক্তির আগে তাঁকে নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছিল, তা পরে অনেকটাই থিতিয়ে যায়। যদিও তার পরেও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন গৌরব। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘রংমিলান্তি’, ‘ইতি’— তালিকায় রয়েছে এমন অনেক ছবির নাম। কিন্তু দর্শকমনে প্রভাব ফেলেনি তাঁর অভিনীত কোনও চরিত্র। তাই গৌরবকে একপ্রকার ভুলতে বসেছিলেন দর্শক। সে সময় তাঁর চেহারা নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল। দু’বছর পর ‘দুর্গা’ সিরিয়ালে ‘প্রত্যাবর্তন’ হয় গৌরবের। সন্দীপ্তা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। ২০০৬ থেকে ২০২৩— গত ১৭ বছরে নিজেকে নতুন ভাবে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় টানতে পারেনি তাঁর অভিনীত চরিত্র। কিন্তু ছোট পর্দায় সিরিয়ালের টিআরপি প্রতিযোগিতায় গৌরব পিছনে ফেলেছেন অনেককে। এই মুহূর্তে মধ্যবিত্ত বাঙালির বৈঠকখানায় তাঁর পরিচয় ‘ঋদ্ধিমান সিংহরায়’ নামে। ‘গাঁটছড়া’ সিরিয়ালের নায়ক তিনি। কেরিয়ারের শুরুতেই ধাক্কা খাওয়ার পর বড় পর্দায় কাজের ঝুঁকি নেননি। ছোট পর্দার রাজত্বে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন গৌরব।

Pratik Sen

এখন ছোট পর্দার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়কদের অন্যতম প্রতীক। ছবি: সংগৃহীত।

প্রতীক সেন

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের নায়ক হিসেবে টালিগঞ্জে আগমন হয়েছিল প্রতীকের। ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি। ‘চল কুন্তল’, ‘আমার বডিগার্ড’, ‘পাসপোর্ট’— পর পর এমন বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। প্রতীকের দাবি, এই সব ছবি তখন ‘ব্লকবাস্টার’ হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল বটে। কিন্তু তাঁকে বলা হত ‘ফ্লপ’ হিরো। বড় পর্দায় ‘হিরো’ হিসাবে যখন তাঁর টিকে থাকার পরিশ্রম চলছে, তখনই সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ আসে। কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা নিয়ে প্রথম দিকে দ্বন্দ্ব থাকলেও পরে ছোট পর্দায় অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান। তবে সেই সুযোগ আসতেও সময় লেগেছিল প্রায় আট বছর। ২০১৬ সালে ‘খোকাবাবু’ সিরিয়ালে দর্শক পান ছোট পর্দার নতুন হিরো প্রতীককে। প্রথম সিরিয়ালে তৃণা সাহার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। ‘খোকাবাবু’ সিরিয়ালে নায়কের ‘লুক’ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে ‘মোহর’ সিরিয়ালে ‘শঙ্খদীপ রায়চৌধুরি’ চরিত্রটি প্রতীকের কেরিয়ারের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। এখন ছোট পর্দার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত নায়কদের অন্যতম প্রতীক।

Adrit Roy

রাজ প্রযোজিত এবং অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নুরজাহান’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল আদৃতের। ছবি: সংগৃহীত।

আদৃত রায়

আদৃতের যাত্রার সঙ্গে খানিকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলিউড অভিনেতা নীল নীতিন মুকেশের। তাঁর বাবা নীতিন মুকেশ ছিলেন ‘প্লেব্যাক সিঙ্গার’। বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি। বাবার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির যোগ থাকলেও নীল নীতিন তেমন ভাবে সাফল্যের মুখ দেখেননি। আদৃতের ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিল পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে নিয়ে। যাঁর সঙ্গে আদৃতের দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। টালিগঞ্জে তাঁকে প্রথম সুযোগ দেন রাজই। রাজ প্রযোজিত এবং অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নুরজাহান’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল আদৃতের। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়ন কোনও ভাবেই বক্স অফিসকে প্রভাবিত করতে পারে না। তার পরেও ‘প্রেম আমার ২’, ‘পাসওয়ার্ড’-সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন আদৃত। ‘নায়ক’ হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে আগমন হলেও মূলত পার্শ্বচরিত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। তার মধ্যেই বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছেন আদৃত। তাঁর বড় পর্দার ছবি বক্স অফিসে আশানুরূপ ফল না-পেলেও টিআরপি যুদ্ধে আদৃত ছাপিয়ে গিয়েছেন অনেককে। ‘মিঠাই’ সিরিয়ালে ‘সিদ্ধার্থ মোদক’ চরিত্রে অভিনয় করে বড় পর্দার চেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে আদৃতের ঝুলিতে। অভিনয়ের সঙ্গে এখন সঙ্গীতচর্চায়ও মন দিয়েছেন। নিজের একটি ‘ব্যান্ড’ শুরু করেছেন। নিয়মিত অনুষ্ঠানও করেন।

Joy Mukherjee

প্রথম ছবি ‘টার্গেট’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও তার পরে অনেক ছবিতে নায়ক হিসাবে জয়কে দেখেছিলেন দর্শক। ছবি: সংগৃহীত।

জয় মুখোপাধ্যায়

২০০৮ সাল। সদ্য মুক্তি পেয়েছে দেবের ‘প্রেমের কাহিনি’। সেই ছবির পরেই ইন্ডাস্ট্রিতে আগমন জয় মুখোপাধ্যায়ের। তাঁকে দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, দেবের পর জয়কে ‘হিরো’ হিসাবে নেওয়া যাবে। তাঁর প্রথম ছবি ‘টার্গেট’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও তার পরে অনেক ছবিতে নায়ক হিসাবে জয়কে দেখেছিলেন দর্শক। বড় পর্দায় সাফল্য না এলেও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়ের জুটি পেয়েছিল দর্শকের ভালবাসা। প্রথম নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। বিচ্ছেদের সময় বিতর্কও হয়েছিল প্রচুর। তাঁর ব্যবহার নিয়ে একাধিক অভিযোগও উঠেছিল। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোনও কাজ করেননি জয়। পাঁচ বছর পর ‘চোখের তারা তুই’ সিরিয়াল দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন তিনি। বড় পর্দা ছেড়ে ছোট পর্দাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নেন। যদিও সিরিয়ালেও জয়কে তার পর বেশি দিন দেখেননি দর্শক। ‘চোখের তারা তুই’-এর পর ‘জিয়নকাঠি’ সিরিয়ালে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন নায়ক। সেই সিরিয়ালের সেটে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন জয়। নায়িকার অভিযোগের কারণে সিরিয়াল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আর ছোট পর্দাতেও দেখা যায়নি তাঁকে।

Somraj Maity

সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন সোমরাজ। ‘এই ছেলেটা ভেলভেলেটা’ তাঁর প্রথম সিরিয়াল। ছবি: সংগৃহীত।

সোমরাজ মাইতি

মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্ম সোমরাজের। মা-বাবার কথা মেনে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। যেমন করেছিলেন বলিপাড়ার কৃতী শ্যানন। যদিও কৃতী একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন। সোমরাজের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বড় পর্দায় নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশের ভাল অঙ্কের মাইনের চাকরি ছেড়েছিলেন। কলকাতায় এসে পসার জমানোর চেষ্টা করেছিলেন। শিকে ছেঁড়েনি। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলেন। একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু দর্শকদের মনে সে ভাবে কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। বরং সিরিয়ালের অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন সোমরাজ। ‘এই ছেলেটা ভেলভেলেটা’ তাঁর প্রথম সিরিয়াল। সেই সিরিয়ালে অভিনয়ের পরেই তাঁর নাম মানুষ চিনতে শুরু করেন। এর পরে একাধিক সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। তবে এখন আবার ছবিতে অভিনয়ের একটা চেষ্টা চালাচ্ছেন সোমরাজ। হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। তাঁর বান্ধবী আয়ুশী তালুকদারও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরির চেষ্টায় রয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy