গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল
সম্প্রতি ওয়েবে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো ঘিরে যে হাইপ তৈরি হয়েছে, তার ছিটেফোঁটা উত্তেজনাও নেই ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল’ নিয়ে। স্টার কিডদের ছবি বয়কট করার যে রব উঠেছে, এ তারই ফলশ্রুতি। তার উপর ছবির প্রযোজক কর্ণ জোহর, যাঁকে নেপোটিজ়মের ধ্বজাধারী বলা হচ্ছে। অতএব ‘গুঞ্জন...’-কে নিয়ে গুঞ্জন বড়ই কম। হুজুগে মাততে গিয়ে আমরা কোনও ভাল ছবি মিস করে যাচ্ছি না তো? নির্মাতারাও হাইপ তুলতে সাহস পাচ্ছেন না, পরিস্থিতি এতটাই ভালনারেবল। তবে প্রযোজক হিসেবে কর্ণের নাম বাদ দেওয়ার যে খবর ভাসছিল, তা ভুল। ছবির ক্রেডিট লাইনে ধর্মা প্রোডাকশন এবং কর্ণ জোহর, দুটো নামই জ্বলজ্বল করছে।
গুঞ্জন সাক্সেনা মহিলা এয়ারফোর্স পাইলট, যিনি কার্গিল যুদ্ধের সফল যোদ্ধা। নব্বইয়ে দশকের যে সময়ে গুঞ্জন এয়ারফোর্সে যোগ দেন, তখনও সমাজের চোখে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে অনেক বিভেদ। কিন্তু রূপকথার জন্ম কবেই বা মসৃণ পটভূমিতে হয়েছে! সিনেম্যাটিক দিক থেকে গুঞ্জন সাক্সেনার জীবন ছবির জন্য আদর্শ। পরিচালক শরণ শর্মা এখানে গুঞ্জনের স্বপ্ন দেখা, তা পূরণ করা, তাঁর লড়াইয়ের পথে আসা নুড়ি-পাথরগুলোর উপরে ফোকাস করেছেন। তাই কার্গিল যুদ্ধের সেনানীকে নিয়ে ছবি হলেও যুদ্ধ এখানে মূল বিষয়বস্তু নয়, শেষের কুড়ি মিনিট ছাড়া।
গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল
পরিচালনা: শরণ শর্মা
অভিনয়: জাহ্নবী, পঙ্কজ, বিনীত, অঙ্গদ
৬/১০
লখনউ শহরে বড় হওয়া গুঞ্জনের ছোট থেকে ওড়ার স্বপ্ন। বাড়িতে মা আর দাদা তাতে আমল না দিলেও, গুঞ্জনের বাবা সেই স্বপ্নকে ডালপালা মেলার পূর্ণ সুযোগ দেন। এয়ারফোর্সে ঢোকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় গুঞ্জনকে। কিন্তু আসল লড়াই তার পরে। যেখানে পদে পদে তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হতে থাকে, সে মেয়ে। লড়াইয়ের ময়দান তাঁর জন্য নয়। আর্মিতে যোগ দেওয়া দাদা পর্যন্ত বোনকে ‘গণ্ডি’ বুঝিয়ে দিতে থাকেন। এয়ারফোর্সের বেসে একদল ছেলের মাঝে একা গুঞ্জন যেন ভিনগ্রহের বাসিন্দা। যুদ্ধভূমিতে সহযোদ্ধাদের উদ্ধারের জন্য যখন তিনি যাচ্ছেন, তখনও তাঁকে বলা হচ্ছে, ‘ফিরে এসো, তোমার দ্বারা হবে না।’ কিন্তু যে একবার উড়তে শুরু করেছে, তাকে ফেরানো সহজ নয়। তিনি খাঁচা ভাঙবেন, তাঁর ইউনিফর্মে শৌর্য চক্র শোভা পাবে। বায়োপিক হিসেবে ছবিটিকে নিখুঁত বলা যাবে না। যাতে চড়া দাগের না হয়ে যায়, সে খেয়াল রাখতেই হয়তো পরিচালক আবেগের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু মাঝেমাঝে আবেগ নরম দৃশ্যগুলোকে আরও মসৃণ করে। কম ছিল ‘জোশ’-এর পরিমাণও। তবে দু’ঘণ্টার মধ্যে ছবিকে বেঁধে রাখার ফলে খামতিগুলো ততটা প্রকট হয়নি।
যাঁকে নিয়ে এত সমালোচনা, সেই জাহ্নবী কপূরের কাঁধে গুরুদায়িত্ব ছিল। কারও বায়োপিকে সেই মানুষটা হয়ে ওঠা সহজ নয়। প্রথম ছবি ‘ধড়ক’-এর চেয়ে জাহ্নবী অনেক পরিণত। কিন্তু একার কাঁধে বায়োপিক টানতে হলে যে ক্যারিশমার প্রয়োজন, তা আয়ত্ত করতে শ্রীদেবী-কন্যার আরও সময় লাগবে। গুঞ্জনের ওড়ার ডানা যদি তাঁর বাবা অনুপ সাক্সেনা হন, তা হলে এই ছবির মসৃণ উড়ানের পিছনে গুঞ্জনের বাবার চরিত্রের অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠি রয়েছেন। ভাল লাগে বিনীত কুমার সিংহকে। তাঁর সঙ্গে টক্করের দৃশ্যগুলোয় জাহ্নবীর খামতি নজরে পড়ে। দু’চারটে ‘ক্লিশে’ সংলাপ বলা ছাড়া গুঞ্জনের দাদার চরিত্রে অঙ্গদ বেদীর কিছু করার ছিল না।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ ছবি মুক্তি পেলে হয়তো এর ভবিষ্যৎ অন্য রকম হত। বিশেষত বলিউড এখন যে ভাবে ‘দেশপ্রেম’কে আঁকড়ে ধরেছে। নির্মাতারা কোনও রকম দেশজ আবেগের সুড়সুড়ি দেননি ছবিতে। একটা জায়গায় গুঞ্জন তাঁর বাবাকে বলেন, ‘‘আমি প্লেন চালাতে ভালবাসি বলে এয়ারফোর্সে গিয়েছি। আমার মধ্যে কোনও দেশপ্রেমের ব্যাপার নেই। তাতে দেশের সঙ্গে গদ্দারি করা হচ্ছে না তো?’’ গুঞ্জনের বাবা যিনি নিজেও আর্মি অফিসার, তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভালবেসে নিজের সেরাটা দিয়ে কোনও কাজ করাটাই আসল। মুখে দেশপ্রেমের বুলি আওড়ানো মানেই দেশকে ভালবাসা নয়।’’ হয়তো কাল্পনিক সংলাপ কিন্তু আশপাশের ঘটনাপ্রবাহ, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের ঘটা দেখে কথাটা ভারী খাঁটি মনে হয়।
জাহ্নবী কপূর স্টার কিড, কেরিয়ারের শুরুতেই বায়োপিক পেয়ে যান, অভিনয়ে এখনও দড় নন। কর্ণ জোহর হয়তো স্বজনপোষণ করে থাকেন। কিন্তু এই ছবিতে তাঁরা নিমিত্ত মাত্র। জাহ্নবী-কর্ণের জন্য কার্গিল গার্ল গুঞ্জন সাক্সেনা কেন উপেক্ষিত হবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy