মিঠু চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৮৬ সালে অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে বিয়ের পর অভিনয় যাত্রার শুরু মিঠু চক্রবর্তীর। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেছেন। আপাতত ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ সিরিয়ালে অভিনয় করছেন। এই মুহূর্তে নিজের শর্ত ছাড়া কাজ করতে মোটেই রাজি নন তিনি। শুটিংয়ের গন্তব্য বাড়ির কাছে হতে হবে, ঘুরতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ছুটি চাই। এখন আবার তাঁর সংসারেও আসছে নতুন অতিথি। দুই ছেলে-বৌমা, নাতনিকে নিয়ে ভরা সংসার। তাঁর বড় বৌমা ঋদ্ধিমা ঘোষ সন্তানসম্ভবা। অভিনেত্রী মিঠুর অন্দরের ঝলক পাওয়া গেল আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে। ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ সিরিয়ালের সেটেই জমল আড্ডা।
প্রশ্ন: সিনে খুব কান্নাকাটি করতে হচ্ছে। ক্যামেরার সামনে এমন আবেগপ্রবণ দৃশ্যে অভিনয় করতে কি গ্লিসারিন লাগে?
মিঠু: এখনও পর্যন্ত গ্লিসারিন প্রয়োজন হয়নি। আমি এমনিই কেঁদে ফেলি। গ্লিসারিনে চোখ লাল হয়ে খুব কষ্ট হয়। আর নিজে থেকে কাঁদলে তা পর্দায় দেখতে ভাল লাগে।
প্রশ্ন: কান্নাকাটি করা কি কঠিন?
মিঠু: কান্নাকাটি করা খুব কঠিন নয় কিন্তু। আসলে আমি এমনিই খুব ইমোশনাল। তাই এই অভিনয়টা সহজাত ভাবেই এসে যায়। আমার তো মনে হয় কমেডি দৃশ্যে অভিনয় করা অনেক বেশি শক্ত। আমি তো এমনই কেঁদে ফেলি।
প্রশ্ন: আপনি কি বাস্তবেও এমনই মা? একটু অভিমানী, একটু ইমোশনাল?
মিঠু: অভিমান না হলেও বাস্তবে আমি সত্যিই সহজে কেঁদে ফেলি। তাই হয়তো সিরিয়ালে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না।
প্রশ্ন: দুই ছেলে গৌরব এবং অর্জুন তখন কী ভাবে সামলান আপনাকে?
মিঠু: না না। ওদের সামলাতে হয় না। নিজেই নিজেকে সামলে নিই। ওরা এখন বড় হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে যখন আসে, তখন হইহই করি। বাড়িতে কোনও কান্নাকাটির সিন নেই।
প্রশ্ন: এখন তো আপনি ঠাকুমাও হয়ে গিয়েছেন।
মিঠু: ও বাবা! অর্জুনের (ছোট ছেলে) মেয়ে যখন আসে বাড়িময় হইহই করে। খেলা করে। ওর দাদাই মানে সব্যসাচীর (চক্রবর্তী) সঙ্গেই বেশি বন্ধুত্ব। ভিডিয়ো কল করলেও দাদুকে খোঁজে। নতুন জন আসছে এখন আবার। সেই প্রস্তুতি চলছে। ঠাকুরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি, সবাই যেন ভাল থাকে। একটা সুস্থ, স্বাভাবিক শিশু পৃথিবীতে আসুক। ব্যস, এটুকুই চাই।
প্রশ্ন: ঋদ্ধিমা ওঁর মাকে খুব মিস্ করেন...।
মিঠু: হ্যাঁ, স্বাভাবিক ভাবেই ওর খুব মনে পড়ে। আমি ওঁর জায়গা নিতে পারব না। তবে আমি আমার মতো করে চেষ্টা করি। আমার দুই বৌমার সঙ্গেই আমার বেশ সুস্থ সম্পর্ক।
প্রশ্ন: বৌমাদের সঙ্গে সঠিক সম্পর্ক বজায় রাখতে, ভাল শাশুড়ি হওয়ার জন্য কোন কোন গুণ থাকা প্রয়োজন?
মিঠু: এটার কোনও লিখিত নিয়ম নেই। শাশুড়ি হলে এটা করবেন, এটা করবেন না। জীবনে যেমন পরিস্থিতি আসবে তেমন ভাবে মানিয়ে নেবেন। আমি ভাল শাশুড়ি হওয়ার জন্য কিন্তু কখনও কিছু করি না। আমি যেমন তেমনই। সেই ভাবেই দুই বৌমার সঙ্গে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: গৌরব-অর্জুনের বিয়ের আগে থেকেই এই বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন?
মিঠু: ওরা নিজের নিজের ফ্ল্যাটে থাকে। ১০ দিনে এক বার করে আসার চেষ্টা করে। আমরাও যাই। দেখা হলে মজা করে সময় কাটাই। নিজের মতো করে থাকার এটাই ভাল দিক। আর এখন সবার ছোট ছোট ফ্ল্যাট। পাশের ঘরে ছেলে বৌমার ঝগড়া হচ্ছে। শ্বশুর-শাশুড়ি তাই জন্য টেনশন করছে। তার থেকে বাবা নিজের নিজের আলাদা সংসার ভাল। আর ওদেরও তো ইচ্ছে হতে পারে নিজস্ব সংসারের। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখার স্বপ্ন তো ওদেরও থাকতে পারে। ওই জায়গাটা দেওয়া দরকার। ছেলেরা যখন অনেক ছোট, তখনই বলেছিলাম, যদি দেখো আলাদা থাকার ক্ষমতা আছে, তবেই বিয়ে করবে। দু’জনেই কথা রেখেছে। এটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল। ওরা খুশি আমার সিদ্ধান্তে।
প্রশ্ন: ইদানীং তো অনেকেই সিরিয়ালে অভিনয় করতে চান না একঘেয়েমির জন্য। এত বছর কাজ করার পর আপনি কী মনে করেন?
মিঠু: হ্যাঁ, ঠিক। এঘেয়েমি আসে। তবে এটা কিন্তু এখন আর শিল্প নয়। এটা একটা ব্যবসাও। প্রচুর মানুষ যুক্ত। এই মাধ্যমের জন্য কত মানুষের সংসার চলছে। সেটাই সিরিয়ালের ইতিবাচক দিক।
প্রশ্ন: কিছু দিন আপনার স্বামী সব্যসাচী চক্রবর্তীর অভিনয় জগৎ থেকে অবসর নেওয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে?
মিঠু: আসলে কী হয়, এক রকম কথা হল। তার পর সেই কথা থেকেই গল্পের গরু গাছে উঠে যায়। তবে পুরোটা যে ভুল, তা নয়। ও বলেছে, এখন কাজ কমিয়ে দেবে। প্রায় রিট্যায়ারমেন্টের সময়। এটা তো সত্যি যে, অনেক অল্প বয়স থেকে কাজ করছে ও।
প্রশ্ন: আপনিও কি অবসর নিতে চান?
মিঠু: আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে একটা-দুটো কাজ করা উচিত। একটা সিরিয়ালের পর বেশ কিছু দিন বিরতি নিলাম। এর পর তো আমি বিরতি নেবই। কারণ বিশাল কাজ। সেপ্টেম্বরে ঋদ্ধিমার ডেলিভারির সময়। তখন ব্যস্ত। সেলাই করতে ভালবাসি। ওর জন্য সেলাই করব। আর এখন তো সিরিয়ালে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেকগুলো শর্তে কাজ করি। কাছে স্টুডিয়ো হতে হবে। ঘুরতে যেতে পারব। চরিত্রটা যথাযথ হবে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি রানির সঙ্গে ‘মিসেস চ্যাটার্জি...’-তে কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
মিঠু: ছোট একটি চরিত্র ছিল ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে। খারাপ শাশুড়ির চরিত্রে। আমার বৌমারা তা দেখে বলেছে, বাস্তবে এমন হলে ওরা সত্যিই সমস্যায় পড়ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy