কোয়েল-পরমব্রত। ছবি: স্বপ্নিল সরকার
ঘড়ির কাঁটা মেনে ডাক্তার হাজির। এ দিকে দেখা নেই বিমলের! এক ঘণ্টা পার করে তিনি এলেন। শুরু হল আড্ডা...
প্র: মিতিন মাসির পর ফের অ্যাডভেঞ্চারে কোয়েল...
কোয়েল: হ্যাঁ...‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’এ আমার চরিত্রটা ডা. রুবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিমল (পরমব্রত) আর কুমারের (গৌরব চক্রবর্তী) অ্যাডভেঞ্চারে শামিল হয় সে-ও। ধাঁধা সমাধান করতে করতে পাড়ি দেয় সাগরদ্বীপে।
প্র: বাস্তবে অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন?
কোয়েল: অ্যাডভেঞ্চার যে দিকে, আমি তার ঠিক উল্টো দিকে। কিন্তু ছবির স্বার্থে সেটাও করতে হয়েছে। নেমে যখন পড়েছি, তখন তো করতেই হবে! সেই সময়টায় ভগবানের সঙ্গে আমার অনেক কথোপকথন হয়েছিল।
পরমব্রত: আমার এমনিতে জলে ভয় নেই, কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস আমার কাছেও সুখে থাকতে ভূতে কিলোনোর মতো! একদিন বলা হল, স্কুবা ডাইভিং করতে হবে। ট্রেনার বললেন, সাঁতার না জানলেও চলবে। পিঠে যে সিলিন্ডারটা বাঁধা হল, তার প্রচণ্ড ভার। জলে নামার পর একটা ‘কররর...’ করে আওয়াজ হল আর আমি তলিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে টেনে তোলা হয়েছিল আমায়। শটটা অবশ্য উতরে গিয়েছিল।
প্র: সি-সিকনেস হয়নি?
পরমব্রত: গৌরবের হয়েছিল। ভারত মহাসাগরের বুকে যে এ রকম ঢেউ হতে পারে, ধারণা ছিল না। ঢেউ আমাদের জাহাজকে শূন্যে তুলে আবার আছড়ে ফেলছিল।
কোয়েল: এর জন্য অনেক রকম ওষুধ খেতে বলা হয়েছিল আমাদের। কিন্তু তার আগেই পেট গুড়গুড়, বমি-বমি ভাব...সব শুরু হয়ে গিয়েছিল!
প্র: আপনাদের দু’জনের প্রথম ছবি তো ‘হেমলক সোসাইটি’...
পরমব্রত: ‘শুভদৃষ্টি’ তারও আগে।
কোয়েল: (বাধা দিয়ে) ওটার কথা না বললেই নয়? সেখানে পরম আমার দেওর ছিল। প্রচুর পড়াশোনা করা একটি ছেলে, যেন মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছে, আর আমি তখন ‘পাগলে কি না বলে’র সঙ্গে পা মেলাচ্ছি!
প্র:সেখান থেকে কোয়েল মল্লিকের পরিবর্তনটা কী ভাবে দেখেন?
পরমব্রত: ব্যক্তিগত ভাবে আমি এমন শিল্পীদের পছন্দ করি, যাঁরা চুপচাপ নিজেদের কাজ করে যান। তাঁদের মূল্যায়ন অনেক সময় দেরিতে হয়। কারণ তাঁরা নিজেদের কাজ নিয়ে বাগাড়ম্বর করেন না। কোয়েল সেই রকম এফর্টলেস, আড়ম্বরহীন একজন অভিনেত্রী। সেটে আসে, কাজ করে, চলে যায়।
প্র: পরমব্রতকে পরিচালক হিসেবে কেমন লেগেছে আপনার?
কোয়েল: পরমের প্রচুর বিষয় নিয়ে এত জ্ঞান আছে যে, ওর মতো ইন্টেলিজেন্ট পরিচালক এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ‘বনি’ গল্পটা এত সহজ ভাবে বলেছে...আর ও নিজে অভিনেতা বলে পরিচালক হিসেবে চাহিদাগুলো সহজেই বোঝাতে পারত আমাদের।
প্র: ওয়েব প্ল্যাটফর্মে মিতিন মাসি করার প্ল্যান রয়েছে পরমব্রতের। তার আগেই দর্শক বড় পর্দায় মিতিন মাসিকে দেখে ফেললেন...
পরমব্রত: আমার তো আড়ালে ওকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে (হাসি)! দেখুন, আমার চোখে কোয়েলের মিতিন মাসি কিংবা কোয়েলের চোখে আমার করা ব্যোমকেশ আলাদা হতেই পারে। কিন্তু পর্দার মিতিন মাসির সঙ্গে আমার ওয়েব কনটেন্টের কনফ্লিক্ট নেই সেই অর্থে। আমার মিতিন মাসির গল্পের স্বত্ব নেওয়া ছিল ওর ছবিটা ভাবারও আগে।
প্র: গত পুজোতেই তো আপনার ব্যোমকেশ এবং কোয়েলের মিতিন বক্স অফিসে পরস্পরকে টক্কর দিয়েছে...
পরমব্রত: আমরা কিন্তু একে অন্যের ছবিটা দেখিওনি! সামনের বছরেও হতে চলেছে এটা। আর সত্যি বলতে, কম্পিটিশনের ভাবনা আমাদের মাথাতেও আসে না।
কোয়েল: যে যার কাজটা মন দিয়ে করলেই যথেষ্ট নয় কি? এত প্ল্যাটফর্ম। আমরা কি সকলে মিলে একসঙ্গে গ্রো করতে পারি না?
পরমব্রত: এইটুকু তো ইন্ডাস্ট্রি! আট-ন’জন লোকের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আমরা এখানে চরম শত্রুর সঙ্গেও জুটি বেঁধে ফেলি। সেখানে কোয়েল আর আমি তো বন্ধু।
প্র: কোয়েলের কোন স্বভাবটা আপনার অপছন্দ? একই প্রশ্ন থাকবে কোয়েলের কাছেও।
পরমব্রত: ছোট ছোট জিনিস নিয়ে কোয়েল মাঝে মাঝেই অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারও খিদে পেয়েছে, কারও কিছু দরকার, তখন ও বাড়ির কাকিমার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে!
কোয়েল: মোটেও না! পরম সিরিয়াস মুখ করে অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা করে।
পরমব্রত: হ্যাঁ, আমার দুর্নাম রয়েছে এ ব্যাপারে।
কোয়েল: মাঝে মাঝে ওর কথায় ব্যঙ্গ আর শ্লেষের খোঁচা মারাত্মক ধারালো হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন রেগে যায়। কঠিন কঠিন সাধুভাষা স্রোতের মতো বলতে থাকে।
পরমব্রত: আর কোয়েল যখন রেগে যায়, তখনও ভদ্রতাটা ছাড়ে না! রাগে হয়তো চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তখনও ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা! তবে ওর পরিমিতিবোধকে আমি সম্মান করি। (কোয়েলের দিকে ফিরে) এই যে আমি ভাল ভাল শব্দ ব্যবহার করলাম, এর মানে কিন্তু আমি রেগে নেই! ধীরে ধীরে শশী তারুর হয়ে উঠছি আর কী... (হাসি)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy