Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ঘরের মানুষের ভালবাসা পাওয়াও জরুরি’

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রিমা দাসের সঙ্গে আলাপচারিতায়।অসমে মহিলা ছবি পরিচালক নেই বললেই চলে। আমারও ছবি করার প্রথাগত শিক্ষা নেই। নিছক শখ করে ডিএসএলআর কিনে এলোমেলো ছবি তুলতাম।

রিমা

রিমা

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

প্র: এত তাড়াহুড়ো করে বিনা প্রচারে ছবি রিলিজ় করলেন কেন?

উ: অস্কার মনোনয়নের জন্য ছবি পাঠাতে হলে ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে রিলিজ় করাতে হয়। তাই তাড়াহুড়ো করে হল জোগাড় করে রিলিজ় করতে হল ‘বুলবুল ক্যান সিং’। তবে মুখ্যমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রিমিয়ারে এলেন, এটাই বড় পাওনা। বিগ বাজেট ছবির মতো প্রচার চালানোর সামর্থ্য কোথায়? বিদেশে প্রশংসা পেলেও ঘরের মানুষের ভালবাসা পেল কি না, সেটাই চিন্তার।

প্র: শাহরুখ খানের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তটা কেমন ছিল?

উ: ওই অনুভূতি বোঝাতে গেলে কয়েক বছর আগে ফিরতে হবে। কামরূপের ছয়গাঁওয়ের গ্রামের মেয়ে অভিনয় করার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই গেল। শাহরুখ খান তখন অন্য গ্রহের প্রাণী। সেই মেয়েটাই কয়েক বছর পরে শাহরুখের সঙ্গে এক মঞ্চে। তার ছবি দিয়ে মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেছেন শাহরুখ। সেলফি তুলেছেন আর সবচেয়ে বড় কথা, জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার খবরটাও দিয়েছেন নিজের মুখে। উফ, ভাবা যায় না! এত বড় মাপের তারকা হয়েও শাহরুখ কত ভদ্র, বিনয়ী।

প্র: জহ্নু বড়ুয়ার পরে রিমার হাতে স্বর্ণকমল উঠতে তিরিশ বছর পার। ছবি বানাতে এলেন কী ভেবে?

উ: অসমে মহিলা ছবি পরিচালক নেই বললেই চলে। আমারও ছবি করার প্রথাগত শিক্ষা নেই। নিছক শখ করে ডিএসএলআর কিনে এলোমেলো ছবি তুলতাম। আশপাশের বাচ্চাগুলো মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল ভিডিয়ো তোলার জন্য। একদিন চোখে পড়ল, কয়েকটা বাচ্চা নকল গিটার বানিয়ে গাইছিল। মাথার মধ্যে ‘ভিলেজ রকস্টারস’-এর গল্প বোনা শুরু তখনই।

প্র: সেই ছবিতেই চারটে জাতীয় সম্মান-সহ মোট ২৯টা পুরস্কার। তাই পরের ছবিও একই গ্রামে।

উ: শৈশবের সারল্যের কাহিনির ‘বুলবুল ক্যান সিং’-এ কৈশোরের জটিলতায় উত্তরণ ঘটেছে। বড়দের সঙ্গে ছোটদের মানসিকতার ফারাক, বয়ঃসন্ধির সমস্যা, মেয়েলি স্বভাবের কিশোরের মনোকষ্ট... ধরা হয়েছে ছবিতে। ছোটদের নিয়ে ছবি করা খুব ঝকমারি। ‘বুলবুল...’-এর শুটিংয়ের সময়ে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েগুলোর মুড সুইং সামলে কাজ করতে হত।

প্র: আপনার সব ছবিই কিন্তু গ্রামকেন্দ্রিক...

উ: আসলে আমি তো পেশাদার ছবি-করিয়ে নই। আমার গ্রামের বাচ্চাগুলোর প্রতি এখন একটা দায়িত্ব চলে এসেছে। ওরাও আমার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। হয়তো আমিও। কয়েক বছর ধরে আমি মুম্বইনিবাসী। ওখানকার শহর জীবনকেও কাছ থেকে দেখছি। খোলা মনে কাজ করতে এসেছি। তাই কাজের সময়ে আমি ছন্দ আর ভাবনাকে গুরুত্ব দিই। সংলাপ নয়, ব্যাকরণও নয়। আমার মূল মন্ত্র, লাইফ ইজ় বিউটিফুল। ‘ভিলেজ রকস্টারস’-এর সিকুয়েল বানাব ভাবছি। এই ছবিতেও আগের মতোই ভনিতা দাস থাকবে।

প্র: কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা, ক্যামেরা, শিল্প নির্দেশনা, কস্টিউম- সব কিছু একা হাতে সামলান, সমস্যা হয় না?

উ: পুরো একা নই। প্রথম থেকে মল্লিকা আমার ছায়াসঙ্গী। আর একা কাজ করলে অনেক স্বাধীন ভাবে কাজ করা যায়। বিশেষ করে যখন হাতে টাকা কম। প্রথম ছবি তিন বছর ধরে আমার সুবিধেমতো শুট করেছি। একটা সূর্যাস্ত, এক পশলা বৃষ্টি বা ছবির শেষ দৃশ্যে রামধনুর জন্য অপেক্ষা করে থেকেছি। ক্রু নিয়ে কাজ করলে সেই স্বাধীনতা সম্ভব নয়। ছবির মধ্যে নিজের শৈশব, কৈশোর, চিন্তাভাবনাকেও মিলিয়ে দিই। কারও কাছে জবাবদিহির দায় নেই। আর আমার বাচ্চাগুলোরও পুরস্কারের চাপ নেই। অবশ্য দলের সঙ্গেও হয়তো শিগগির কাজে নামব।

প্র: পছন্দের পরিচালক কারা?

উ: আমার ছবিতে প্রকৃতিই প্রধান ভূমিকায় থাকে। তাই সত্যজিৎ রায় আমার খুব পছন্দের। হয়তো আমার কাজেও অনেকে ওঁর প্রভাব খুঁজে পান। আর আছেন ঋত্বিক ঘটক, বার্গম্যান, মাজিদি। অপর্ণা সেনও পছন্দের। কঙ্কণা আমার বন্ধু। ওর প্রথম ছবির কাজ কী অসাধারণ!

প্র: পদবির জন্যে অনেকে তো আপনাকে বাঙালি ভাবেন।

উ: হা হা, জানি সেটা। তা নিয়ে ঝামেলাও হয়েছে। আমার কিন্তু কলকাতায় কিছু বন্ধু হয়েছে। শহরটা দেখার ইচ্ছে আছে। তবে নামের জন্য হলেও কলকাতার মানুষ যদি আমাদের ছবি দেখতে আসেন, খুব খুশি হব।

অন্য বিষয়গুলি:

Rima Das Interview Filmmaker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE