Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
bengali movies

প্রসেনজিৎ-জয়া দু’জনেই বলে চেষ্টা করছি, বলে না সব করে ফেলব: অতনু ঘোষ

শীতভাবের কলকাতার বিকেল। তিনি হাজরা রোড পেরিয়ে এ রাস্তা ও রাস্তা। রাস্তায় লেগে থাকা মানুষ, ওই যে টাইপ করত বসে রোজ। বা চেনা চায়ের দোকানের মানুষ পেয়ে গল্প জুড়ে দেন। এই গল্প হয়তো বা সিনেমার শরীর তৈরি করে। সিনেমা তাঁর শরীরেও। ক্রাউড ডাবিং-এও তিনি, পরিচালক অতনু ঘোষ হাজির। অন্য দিকে, শটে নায়ক-নায়িকা যে গাড়ি চড়ে সেটাও তিনি চালান! তবুও বলেন, ‘‘একদিন সিনেমা ছেড়ে দেব।’’ কেন? বিস্ফোরক অতনু ঘোষ।

 মিউজিক একটা বড় জায়গা নিয়ে আছে এই ছবিতে: অতনু ঘোষ

মিউজিক একটা বড় জায়গা নিয়ে আছে এই ছবিতে: অতনু ঘোষ

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১৬
Share: Save:

আপনার মতো নামী পরিচালক বলছেন সিনেমা ছেড়ে দেব?

প্রথম কথা, আমি নামী নই। আমার এক বন্ধু বিদেশ থেকে এসে বলেছিল, তুই এ রকম রাস্তায় ঘুরে বেড়াস! তোকে কেউ চিনতে পারে না? আমি বলেছিলাম, ‘না’। সত্যিই আমায় কেউ চেনে না! ভাগ্যিস! একটা কথা বলা হয় আমার সম্পর্কে, আমি ‘আন্ডাররেটেড’। আমি সেটাই থাকতে চাই। আমার রেটিং হয়ে গেলে আমি ভাবতে শুরু করব, আমি তো দারুণ! যা করব তাই দুর্ধর্ষ হবে। কাজের তাগিদ কমে যাবে। সিনেমা আর হবে না তখন! এটাই আমার স্থির বিশ্বাস। বরং প্রতিটি ছবি তৈরির ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, হবে তো? করতে পারব তো? এটাই যেন থাকে। আর সারা জীবন আমি সিনেমা করব না। আমি হয়তো লেখায় মন দেব। আমি সাংবাদিকতা পড়াই, সেটা নিয়েও থাকতে পারি। অভিনয় নিয়ে কিছু করব। গ্রাফিক্সে আমার প্রবল আগ্রহ, সে বিষয়েও কাজ করতে পারি। অনেক কিছু করার আছে আমার।

আপনি তো দারুণ কাজ করেছেন! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-জয়া আহসান আপনার ‘রবিবার’ ছবির নতুন জুটি নিয়ে উন্মুখ বাংলা ছবির দর্শক!

এই প্রথম ওরা একসঙ্গে। জুটিটার মধ্যে একটা ম্যাজিক আছে। আসলে প্রসেনজিৎ-জয়া দু’জনেই নিজেদের পালটে ফেলার একটা মস্ত বড় ক্ষমতা রাখে! আগে যা করিনি এ বার সেটা করব— এই মনটা খুব শক্তিশালী ওদের। দু’জনেই ‘রবিবার’-এর ওই দুটো চরিত্রে নিজেদের পুরে ফেলেছেন। এখন সিনেমার অভিনয়ে অভিনেতার অভিজ্ঞতার চেয়ে মনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে। এটা কিন্তু খেয়াল করতে হবে। সারা বিশ্বেই তাই। আমি কত দিন ধরে অভিনয় করছি সেই অভিজ্ঞতার চেয়ে আমি ওই চরিত্রে নিজেকে কতটা বসাচ্ছি সেটাই আসল। সেখান থেকে বেরিয়ে চরিত্র হয়ে ওঠার যে কঠিন কাজ সেটা প্রসেনজিৎ-জয়া ‘রবিবার’-এ করে দেখিয়েছে। কাজ করতে করতে অভিনেতাদের হাসি, মজার দৃশ্য, সব এক রকম হয়ে যায়। এই গতানুগতিক অভিনয়ে নিঃসন্দেহে পারফেকশন আছে! কিন্তু সেটা একরকম! এটা তাঁদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। তাঁরা অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী! ভাবছেন, আমি এটা দারুণ পারি। কিন্তু প্রসেনজিৎ-জয়া তা ভাবেন না। ওঁরা ভাবেন আমরা তো পারি না!

এটা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও ভাবেন?

একদম। এটা ওর মস্ত বড় গুণ! ও জানে একটা চরিত্র করার জন্য বড়সড় প্রস্তুতি নিতে হবে। ভাল পরিশ্রম করতে হবে। এক দিন দেখি সেটেই টেনশনে বাইরে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আমার সহকারী বলছে, উনি বলছেন, আসছেন, আসছেন! প্রত্যেকটা শটের পর আমার মুখের দিকে তাকায়! ক্যামেরায় দেখে হয়তো বলল, ‘চল এটা আর এক বার করি। চেষ্টা করি...’’, কোনও দিন বলে না, আমি করে ফেলব! সব সময় বলবে, চেষ্টা করি! জয়াও তাই। ওই চেষ্টা করি... এই জন্যই মনে হয় এত স্পার্ক দিতে পারবে এই দুই চরিত্র!

আরও পড়ুন: ‘মানবিকতার খাতিরে রাজনীতিতে এসেছি

আছে মাঝবয়সীর প্রেম! যা বাংলা ছবিতে দেখান হয় না: অতনু ঘোষ। (ছবি: সংগৃহীত)

আর কী আছে ‘রবিবার’-এ?

একটা দিনের গল্প। দুই মানুষের পনেরো বছর পরে দেখা। পনেরো বছর আগে তাদের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই পরিণত দুই মানুষের যখন এক দিনের জন্য দেখা হয় তখন স্বভাবতই ওইটুকু সময় তাদের প্রেম তৈরি হয়ে যাবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। তা হলে কী হতে পারে? সেটাই বলবে ‘রবিবার’। মিউজিক একটা বড় জায়গা নিয়ে আছে এই ছবিতে। সেতারও আছে, আবার জ্যাজ। আমার তো মনে হয় দেবজ্যোতি মিশ্র-র ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ওর জীবনের অন্যতম সেরা কাজ! আর আছে মাঝবয়সীর প্রেম! যা বাংলা ছবিতে দেখান হয় না।

আরও পড়ুন: পরিণতি পায়নি শেষ জীবনের সম্পর্ক, আজীবন অবিবাহিতই থেকে গিয়েছিলেন তারকা নন্দা

এই যে মাঝবয়স, পরিণত মুখের কথা বলছেন। বাংলা ছবিতে কি পরিণত বয়সের আধিক্য?

হ্যাঁ। কারণ সব থেকে পরিণত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখন মাঝবয়সী। যত ক্ষণ না কোনও পরিচালকের তাগিদ আসবে অল্পবয়সী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করার তত ক্ষণ এই ধারা ফিরবে ইন্ডাস্ট্রিতে।

পরিচালক অতনু ঘোষ। (ছবি: সংগৃহীত)

ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জায়গায় আজকের অতনু ঘোষ স্বচ্ছন্দ?

না, কোনও স্বাচ্ছন্দ্য নেই। আমি বস্তাপচা বাজারি গল্প নিয়ে কাজ করি না। আর আমাদের তো বদ্ধমূল ধারণা এখনও থেকে গিয়েছে। বক্স অফিস হিট মানে ভাল ছবি। যে ছবি মানুষ দেখল না সেটা বাজে। এই অপরিণত ধ্যানধারণা! আমি কিন্তু মূল ধারার ছবিই করি। আমি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট কিছু নিয়ে তো কাজ করছি না। এমন বিষয় বাছছি যা চিরাচরিত হয়েও প্রচলিত নয়। এই নিয়ে চেষ্টা করেছি। সিনেমার ফর্ম নিয়ে তো বিরাট কিছু করিনি। তাই বিকল্প ধারার পরিচালক নই আমি।

আপনি এমন পরিচালক যিনি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে খুব যুক্ত নন...

নাহ্ নই। পার্টিতে যাই না তো আমি। তবে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি কেউ ছবি করলে, ভাল লাগলে লিখি সেটা নিয়ে। কেউ ভাবে হয়তো আমি দল পাকাচ্ছি। সেটা নয়। এই বোধ থেকেই তো এগারো বছরে আটটা ছবি হয়েছে। যথেষ্ট মনে হয় আমার। বললাম যে, চিরকাল সিনেমা করব না। আর আমি সেলিব্রিটিও নই। এখন যাঁদের মানুষ চেনেন, মানে মুখ চেনেন তাঁরাই সেলিব্রিটি! তাঁর কাজ ততটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়!

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali movies Atanu Ghosh Jaya Ahsan Prosenjit Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy